বরুড়া প্রতিনিধি:
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার অধিকাংশ সরকারি ওয়েবসাইট গুলাতে নেই কোন হালনাগাদ তথ্য। ফলে অনলাইনে জরুরি তথ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সচেতন নাগরিকরা।
ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল নিয়ে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের প্রচারণার কমতি ছিলো না কখনই।কিন্তু সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণে সরকারি এসব ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় তথ্যের ২০ শতাংশও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উপজেলার সকল ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি দফতরের ওয়েবসাইটের অধিকাংশ লিংকেই কোনো তথ্য নেই। দীর্ঘদিন ধরে আপডেট করা হয়নি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না ওয়েবসাইটের কোন কিছু।
বরুড়া এলজিইডি ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়,
বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেনের নাম নেই কর্মকর্তা বা প্রধান কর্মকর্তার নামের তালিকায়। উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে এখনো বহাল আছে প্রায় ২ বছর আগে বদলী হওয়া মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর নাম। জাহাঙ্গীর আলমের পরও আরো দুইজন প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করলেও নাম নেই তাদের।
এই ছাড়াও উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ২ জন দায়িত্ব পালন করলেও ওয়েবসাইটে আব্দুর মান্নান ব্যাতিত নেই আর কোন উপসহকারী প্রকৌশলীর নাম।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কর্মচারীদের তালিকায় অধিকাংশই বহাল নেই এই উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরে। কেউ অফিস পরিবর্তন করেছে,কেউ বা অবসর নিয়েছে বহুদিন আগে।এই ওয়েসাইটে গণমাধ্যম কর্মী ও সর্বসাধারণের জানার কোনো তথ্য আপাতত নেই বললেই চলে।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার ওয়েবসাইটে একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারীর তথ্য ব্যতীত নেই কোন কর্মচারীর নাম ও ফোন নাম্বার। একই অবস্থা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের। যেখানে গত এক বছর ধরে একবারো হালনাগাদ করা হয়নি তাদের ওয়েবসাইট। নোটিশ বোর্ডে সর্বশেষ তথ্য গত ৪ বছর আগের।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটে ডুকে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার,সহকারী শিক্ষা অফিসারে নামের ঘরে এখনো আছে বদলী হওয়া কর্মকর্তাদের নাম।এই ওয়েবসাইটের সর্বশেষ হালনাগাদ ২ বছর আগের।
উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। এবং নোটিশ বোর্ডে সর্বশেষ তথ্য আপলোড করেছে ৪ বছর আগে। বেহাল অবস্থায় উপজেলা পল্লি উন্নয়ন অফিস। যেখানে গত দুই বছর নতুন কোন তথ্য যুক্ত করতে পারেনি তাদের ওয়েবসাইটে।
এই ছাড়াও বরুড়া থানা, উপজেলা বন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস, উপজেলা পোস্ট অফিস সহ প্রায় ৮০% সরকারি ওয়েবসাইটে নেই নতুন হালনাগাদ তথ্য। এইসব দফতরের বর্তমানে কোথায়, কী উন্নয়ন করা হচ্ছে তার কোনো তথ্য না থাকায় তথ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সচেতন মানুষ।
পাবেল মজুমদার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, দেশ এখন ডিজিটাল, ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তিতে নির্ভরশীল। এই যুগে এসেও এখনো পিছিয়ে আমাদের এই উপজেলা। সরকারি ওয়েবসাইট গুলাতে আপডেট কোন তথ্য থাকেনা। বিশেষ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের ওয়েবসাইটে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের কোনো তথ্য নেই। শুধু মাত্র দুর্যোগ হলে কি করতে হবে এমন সব তথ্যই দিয়ে রেখেছে তারা।জরুরি প্রয়োজনে থানা ও হাসপাতালে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওয়েব সাইটে কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর নেই।
স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, সংবাদ তৈরির কাজে প্রায় সময় বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওয়েবসাইটে তথ্য থাকে না বলে তথ্য সংগ্রহ করতে কষ্ট হয়।এসব ওয়েব সাইটের অধিকাংশ তথ্যই পুরোনো। নতুন কোনো তথ্য নেই। এতে সাধারণ মানুষ ও আমরা যারা সংবাদকর্মী আছি সবাই তথ্য প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারি সেবার বিভিন্ন তথ্য সাধারণ মানুষ অবাধে না জানার ফলে মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতিও বাড়ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার জান্নাতুল নাঈম বলেন,আমি এই বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে এখানে পার্মানেন্ট ভাবে জয়েন করেছি। ওয়েবসাইট হালনাগাদ বা যেকোনো সমস্যা নিয়ে কেউ আমার কাছে আসলেই আমি সমাধান করে দিবো। এখন কেউ যদি না আসে তাহলে কি করা বলেন।
এই বিষয়ে বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং বলেন, এই বিষয়টা নিয়ে সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।ইতিমধ্যে থানা এবং এলজিইডির সাথে কথা হয়েছে।তারা দ্রুত সময়ে হালনাগাদ করে ফেলবে। দীর্ঘদিন আমাদের উপজেলার তথ্য ও প্রযুক্তির প্রোগ্রামার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলো।তাই চেষ্টা করলেও অনেক ওয়েবসাইট আপডেট করা সম্ভব হয়নি।এখন পার্মানেন্ট ভাবে উপজেলা প্রোগ্রামার আছে।এখন যত দ্রুত সম্ভব হালনাগাদ করার চেষ্টা করা হবে।