বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কুবি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইরফান উল্লাহ। টিউশন করে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন। এই টিউশনই তার জীবনে কাল হলো। ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর টিউশনে যাওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় গুরতর আহত হন ইরফান। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মৃতের মতো পড়ে আছে ইরফান। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার পূর্ব গাটিয়া ডেঙ্গা তার বাড়ি।
ঘটনার দিন সকাল ৯টায় অন্যদিনের মতো কোটবাড়ি মেস থেকে সাইকেল নিয়ে টিউশন করতে বের হয় ইরফান। পথে জাগুরঝুলি বিশ্বরোডে ঢাকাগামী বাস পেছনের দিক থেকে ধাক্কা দেয় তাকে। এতে ইরফানের মাথাসহ বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম হয়। পরে কুমিল্লা মেডিকেলে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকাতে পাঠান।
তাকে ঢাকা মাতুয়াইল এসএমসি হসপিটালে নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে কল্যাণপুরের ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ওখানে তার মস্তিষ্কের সার্জারি করা হয়। সার্জারির ১৮ দিন পর জ্ঞান ফিরলেও ৩ মাস ইরফানকে আইসিইউতে রাখতে হয়। এর মধ্যে আরও কয়েকবার সার্জারি করা হয়। প্রায় সাড়ে ছয় মাস হসপিটালে রাখার পর তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়।
বর্তমানে ইরফান চোখ ছাড়া শরীরের আর কোনো অঙ্গ নাড়াতে পারেন না। মুখে নেই কোনো আওয়াজ। খাবার চলছে নলের মাধ্যমে। জীবিত থেকে এক প্রকার মৃতের মতো পড়ে আছে ইরফান।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ইরফান উল্লাহ। একটি মুদি দোকান তার পরিবারের আয়ের উৎস। দোকান করে তার বড় দুই ভাই মিলে পরিবার চালাই। বয়সের ভারে তার তার বাবা কিছু করতে পারেন না। ইরফান টিউশন করে লেখাপড়ার খরচ চালাত।
তার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। পরিবারের পক্ষে একা এতো টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। ইরফানের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, সহপাঠী ও সিনিয়র-জুনিয়ররা আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সাহায্য করেছেন।
পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-সজন থেকে ধার দেনা করা হয় চিকিৎসা করতে গিয়ে। বর্তমানে ইরফানের পরিবার প্রায় নিঃস্ব প্রায়।
করুণভাবে এসব তথ্য জানান ইরফানের বড় ভাই মো. আমান উল্লাহ। হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি ৫০ হাজার টাকা সহযোগিতার করার আশ্বাস দিলেও পরে কোনো সাহায্য করেননি।
গত সপ্তাহে ইরফানের মাথায় একটি কৃত্রিম খুলি লাগানো হয়। এতে চিকিৎসা বিল আসে ২ লাখ টাকা। এই মুহূর্তে তার পরিবারের হাজার টাকাও ব্যয় করারও সামর্থ্য নেই। সামনে তার অবস্থার উন্নতির জন্য আরও চিকিৎসার প্রয়োজন। ইরফানের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য দেশবাসীর কাছে সাহায্য চেয়েছেন তার পরিবার।