1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
কুমিল্লায় অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে সাহেব বাড়ি - Dainik Cumilla
শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক নির্বাচনের জন্যই ১৭ বছর লড়াই করেছেন তারেক রহমান: ব্যারিস্টার মামুন নাঙ্গলকোটের মাহিনী বাজার ও কুকুরীখিল গ্রামে অস্ত্রের মহড়া, ৬ বাড়ি, গাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর চৌদ্দগ্রামে দুর্ঘটনাজনিত অসুস্থ কর্মীর খোঁজখবর নেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ অপপ্রচার রুখতে মুরাদনগর এনপিপির প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতায় দক্ষতা বাড়াতে কুবি সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ বুড়িচংয়ে খাল দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান শুরু: জনগণের সহযোগিতা চাইলেন ইউএনও দেবীদ্বারে দুই ‘জুলাই যোদ্ধা’কে অটোরিকশা উপহার ব্রাহ্মণপাড়ায় ড্রেজিং করে জলাধার ভরাট, অর্ধলাখ টাকা জরিমানা বুড়িচংয়ে ফুটবল খেলা শেষে ফেরার পথে ট্রাক খাদে এক স্কুলছাত্র নিহত,১০ ছাত্র আহত কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় নিখোঁজের দুইদিন পর প্রবাস ফেরত যুবকের মরদেহ উদ্ধার

কুমিল্লায় অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে সাহেব বাড়ি

  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৪৭ বার পঠিত

মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত মোগল আদলে তৈরি প্রাচীন স্থাপত্য সাহেব বাড়ির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অযত্নে-অবহেলায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে বাড়িটি। নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস ধরে রাখতে বাড়িটির সংরক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড হতে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে মাধবপুর গ্রামে এটি অবস্থিত। প্রাচীন এই বাড়িটির নাম সাহেব বাড়ি নামেই পরিচিত। ১৯২৫ খ্রিস্টব্দে সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই ভাই মো. আলতাফুর রহমান মিয়া (রঙ্গু মিয়া) ও মো. হাবিবুর রহমান মিয়া (ছন্দু মিয়া ) বিভিন্ন নান্দনিক নকশাখচিত দৃষ্টিনন্দন ওই বাড়িটি নির্মাণ করেন। মো. হাবিবুর রহমান (ছন্দু মিয়া) ছিলেন তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার। তাদের বাবার নাম ছিল মো. জারু মিয়া। ওই বাড়িটিতে বর্তমানে কেউ বসবাস করেন না। বাড়িটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বাড়িটির পূর্বপাশে দুটো শানবাঁধানো ঘাটসহ একটি বড় পুকুর আছে। এর মধ্যে একটি ঘাট সংরক্ষিত ছিল নারীদের জন্য।

জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষ হুক্কা লাল বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ থেকে ত্রিপুরা বর্তমান কুমিল্লায় এসে বসতি স্থাপন করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যেসব দেশপ্রেমিক বীর সেনানীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দান করে গেছেন তাদেরই একজন ছিলেন হুক্কা লালের পিতা মোহন লাল। পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর ছেলে মিরনের অত্যাচার থেকে বাঁচার লক্ষ্যে রাতের আঁধারে নৌকাযোগে দীর্ঘপথ পারি দিয়ে পূর্ববঙ্গের ত্রিপুরা বর্তমানে কুমিল্লা জেলার কালিদাহ সায়য়ের পূর্বপাড়ে সপরিবারে চলে আসেন হুক্কা লাল। এই স্থানে আগে কোনো জনবসতি ছিল না, তাই হুক্কা লাল তার বাবা মাধব লালের নাম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ করেন মাধবপুর। তারপর থেকে পরিবারসহ তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। পরে ইয়েমেন থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শেখ মহিউদ্দিন মৌলভী পার্শ্ববর্তী মিরপুর গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। পরে মহিউদ্দিন মৌলভীর সঙ্গে হুক্কা লাল আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করে সনাতন ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং নিজের নাম বদলে রাখেন শেখ লাল। তারপর থেকে একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম হিসেবে সপরিবারে তিনি এখানেই বসবাস করে গেছেন। এই সাহেব বাড়ি তারই বংশধরের নির্মিত তৎকালীন আলিশান প্রাসাদ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মোগল স্থাপত্যের আদলে তৈরি ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা ওই পরিত্যক্ত সাহেব বাড়িজুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। বাড়িটির দেয়ালের পলেস্তারা ধসে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ইট। দেয়ালে ও মেঝেতে পড়েছে শ্যাওলার আস্তরণ। অযত্নে ছাদ থেকে খসে পড়ছে আস্তরণ। দেয়ালে ও ছাদের উপরিভাগে জন্মেছে পরজীবী বৃক্ষ। মরিচা ধরেছে পারিবারিক ব্যবহৃত লোহার জিনিসপত্রে। বিভিন্ন কক্ষে অগোছালো পড়ে আছে তৎসময়ের ব্যবহারিক নিদর্শন। পরিচর্যার অভাবে শেওলা ও আগাছা গজিয়ে বাড়িটির পাশের পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহাম্মদ বলেন, সাহেব বাড়িটি দেখতে মাঝে মাঝে লোকজন আসেন। বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষিত নেই বলে অবহেলায় অযত্নে বিলীন হতে চলেছে সাহেব বাড়ির ঐতিহ্য। বাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুলতানি আমলের পলাশীর যুদ্ধের ইতিহাস।

মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন বলেন, মূলত ১৯ শতকে নবজাগরণের সময় বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ লাভ করে। সেই সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে এ দেশে তৈরি নানান স্থাপত্যকর্মে, যা ইতিহাস হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে দেশের সোনালি অতীত তুলে ধরছে। শুধু আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছেই নয়, প্রতি বছর বাইরের দেশ থেকে আসা হাজারো পর্যটকের কাছেও দেশটি সুনাম কুড়াচ্ছে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা কিছু স্থাপত্য এবং সেগুলোর অসাধারণ নির্মাণশৈলীর জন্য। কালের সাক্ষী হয়ে থাকা এসব নিদর্শন বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পরিচিতি ও সুনাম অর্জনে অনেকটাই ভূমিকা রাখছে। কিন্তু তার বিপরীতে সঠিক তদারকি আর তত্ত্বাবধানের অভাবে এসব ঐতিহাসিক স্থাপত্য হারাতে বসেছে তার পুরোনো জৌলুশ। মাধবপুর এলাকার প্রাচীন স্থাপত্য ওই সাহেব বাড়িটি অসংরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এ ধরনের স্থাপত্যের দেখভাল করা বাঙালি হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD