মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
বিকেল হলেই কয়েক হাজার ভাত শালিক, গো শালিক ও বুলবুলি আসতে শুরু করে কিচিরমিচির শব্দ করে। এসব পাখিগুলো বাসা বেঁধেছে হাসপাতালের গাছগুলোতে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিদের ওড়াউড়ি ও কলকাকলীতে মেতে ওঠে পুরো এলাকা। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কিছুদিন ধরে কয়েক হাজার ভাত শালিক, গো শালিক ও বুলবুলি এসে আশ্রয় নিয়েছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছগুলোতে। প্রতিদিন ভোরবেলা পাখিগুলো খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। বিকেল হলেই আবার ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলো হাসপাতালের গাছগুলোতে ফিরতে শুরু করে। এতে হাসপাতাল এলাকা পাখিদের ওড়াউড়ি ও কিচিরমিচির শব্দে মেতে ওঠে। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে পাখিদের বাড়ি। একসাথে এতো পাখির উপস্থিতির কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছগুলোকে পাখি-বাড়ি নাম দিয়েছেন স্থানীয়রা। পাখিদের এমন ওড়াউড়ির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সের মানুষ। পাখিগুলোকে খাবারও দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাখিগুলোকে কেউ যেন বিরক্ত না করে সে দিকেও কড়া নজরদারি রাখছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের অভিমত আগন্তুক এই পাখিদের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে দিন দিন। সারাদিন খাদ্যের সন্ধান করে বিকেল হলে এসব পাখিরা কমপ্লেক্সের গাছ-পালায় এসে আশ্রয় নেয়। এ সময় পাখিগুলো এ গাছ থেকে ওগাছে উড়ে যায়। দলবেঁধে ওড়াউড়ি করে ও কিচিরমিচির শব্দ করে। আর পাখিদের এই মনোহর দৃশ্য দেখার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভিড় করছেন আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের লোকজন ও দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, গত কিছুদিন ধরে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক প্রজাতির শালিক ও বুলবুলি পাখি। পাখিগুলো ভোরে বের হয়ে যায় আর বিকেল বেলায় ঝাঁকবেধে উড়ে আসে। এ সময় পাখিগুলোর দলবেঁধে ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। প্রকৃতির সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ দূর থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাসিন্দা অলিউল্লাহ বলেন, বিকেল হলেই পাখিগুলোর কলকাকলির শব্দ শুনে ও দলবদ্ধ ওড়াউড়ির দৃশ্য দেখে মন ভরে যায়। প্রতিদিন বিকেলে পাখিগুলো যখন ফিরে আসে তখন হাসপাতালের ভবনগুলোর ছাদে হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাখিগুলোর জন্য খাবার দেওয়া হয়। পাখিগুলো খাবার খায় আর হাসপাতাল এলাকায় কিচিরমিচির শব্দে ডাকাডাকি ও ওড়াউড়ি করে। এ দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সের দর্শনার্থী।
আরেক বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাখিগুলোর কলকাকলি ও দলবদ্ধভাবে ওড়াউড়ির কারণে হাসপাতালের প্রতিটি বিকেল ও সন্ধ্যা সুন্দর হয়ে উঠছে। এতো পাখি এর আগে কখনও আসেনি এখানে। অনেকেই আসছেন পাখিগুলোকে দেখতে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে পাখিগুলোকে খাবার দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগে থেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছ-গাছালিতে কিছু বুলবুলি ছিল। বিকেলে এদের কিচিরমিচির শব্দ শোনা যেতো। তবে গত কিছুদিন আগে নানা প্রজাতির কয়েক হাজার শালিক পাখি এসে আশ্রয় নিয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাছগুলোতে। এতে করে হাসপাতাল এলাকায় প্রতিদিন বিকেল হলেই পাখিগুলোর উপস্থিতিতে অনেক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পাখিগুলোকে যেন কেউ বিরক্ত না করে সে বিষয়ে আমরা সোচ্চার আছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বিকেলে পাখিগুলোকে খাবারদাবার দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, দিন দিন গাছ কেটে পাখিদের আবাসস্থল হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। যে কারণে অনেক জাতের পাখি বিলুপ্তির দিকে চলে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে আমাদের উচিৎ পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।