কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ‘জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার প্রথম প্রতিরোধ ু ১১ জুলাই’ শীর্ষক একটি কর্মসূচিতে আসছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তবে এমন কর্মসূচি সম্পর্কে জানে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণও জানানো হয়নি তাঁকে। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের পেছনে ‘মামলা বাণিজ্যকারী’ হিসেবে পরিচিত এক ছাত্র নেতার সম্পৃক্ততা থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার প্রথম প্রতিরোধ ু ১১ জুলাই’ শীর্ষক একটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন উপদেষ্টা আসিফ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের একটি পত্রে এমনটি উল্লেখ করা হলেও কুবি প্রশাসন জানায়, অনুষ্ঠান বিষয়ে তাদের পূর্ব কোনো ধারণা ছিল না এবং তাদের পক্ষ থেকে এমন কর্মসূচি পালনের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে এমন কর্মসূচি আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রয়েছেন বলেও উল্লেখ্য করা হয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের আমন্ত্রণ ছাড়া এমন ইস্যুকৃত চিঠি নিয়ে বিব্রত প্রকাশ করেছেন খোঁদ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কেউ কেউ। তারা বলছেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জুলাই নিয়ে কর্মসূচির চিঠি ইস্যু করেছে মন্ত্রণালয়, যেখানে ব্যবস্থাপনায় দেখানো হয়েছে উপাচার্যকে। অথচ ভিসি আছেন ছুটিতে এবং এমন আয়োজন নিয়ে আমরা কেউই জানি না। ফলে ইস্যুকৃত চিঠির বিপরীতে বাধ্য হয়েই প্রশাসন এমন আয়োজন করেছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাই ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি’ উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ১১ জুলাই উদয়াপন নিয়ে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে সাকিব ও তার অনুসারীদের দিয়েই এই এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যদিও প্রশাসন বলছে, সাব কমিটি এটা বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছে। এ প্রোগ্রামের বাজেট এখনো পেশ করা হয়নি এবং প্রোগ্রামের কোনো আলোচ্যসূচিও প্রকাশ পায়নি।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল জানান, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে ইনভাইট করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। উপদেষ্টা নিজ থেকে আজ চিঠি পাঠিয়েছে। আমি সকাল ১১টায় জেনেছি উপদেষ্টা আসবেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা আমাকে প্রস্তাব দেয়, তাঁকে নিয়ে আসবে। এখনো এই কর্মসূচির কোনো বাজেট পেশ হয়নি, সাব-কমিটি কাজ করছে। প্রায় ২ লক্ষ টাকা এতে ব্যয় হতে পারে।
মামলাবাজ হিসেবে অভিযুক্ত সাকিবের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তিনি জানান, যদি লিখিত অভিযোগ আসে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপদেষ্টাদের মধ্যেও তো বিতর্কিত লোকজন আছে।
এদিকে এই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন খাতের অর্থ ব্যয় করা হবে এমন প্রশ্নে তারা কিছুই জানে না বলে জানায় অর্থ দপ্তর।
এদিকে সমন্বয়ক ও প্রশাসনের একাংশের দাবি, এই আয়োজনের পেছনে নতুন করে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার এবং মামলার ভয় দেখিয়ে নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে উপদেষ্টা আসিফের প্রভাব কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পাসে নতুন সিন্ডিকেট তৈরি করার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র একজন সমন্বয়ক পাবেল রানা বলেন, ‘সাকিব হোসাইন এর মামলা বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। প্রমাণ আছে বলেই আমরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের ক্যাম্পাসে মুহূর্তে ঘোষণা করেছিলাম। এ অবাঞ্ছিত মামলাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে পারছি না। ব্যস্ততা থাকায় আমি ১১ তারিখের অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কোন মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমি আগেও বলে আসছি, এখনো বলছি, মামলা বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত কারোর অনুষ্ঠানে আসা উপদেষ্টার উচিত হবে না। আমি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করলে এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতাম। এখন জুলাইয়ে কুবির অবদানকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে এ বিষয়ে আর কিছু বলবো না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লার জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম ভুঁইয়া বলেন, ১১ জুলাইয়ে আনসার ক্যাম্পের সামনে (বর্তমান ছাত্র আন্দোলন চত্বর) পুলিশের গুলির সামনে যখন শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিলো তখন ‘আমি কিংবা সাকিব ভাই দুজনের কেউই সেদিন পুলিশের গুলির সামনে আন্দোলনে ছিলাম না।’
এছাড়া সাকিবের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে এবং তার অনুসারীদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অর্থ লেনদেনেরও করার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর জেলার আহ্বায়ক সাকিবের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক নেতা এমরান হোসেনের দায়ের করা মামলায় ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। যাদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মৃত। এছাড়া আরও ১৫০ু২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা ওই মামলায়। ওই মামলা দিয়েই এ বাণিজ্য করার অভিযোগ তুলেন সমস্বয়ক এমরান ও অন্যান্যরা। গত ১৭ মে তারা এ অভিযোগ করেন।
ওই সময় সমন্বয়ক এমরান বলেন, কেউ যদি তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল বা টাকার বিনিময়ে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়ে থাকে, আমি তা তীব্রভাবে ঘৃণা করি। আমাকে দিয়ে যে মামলাটি করানো হয়েছে, সেটি করেছেন কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক সাকিব হোসেন ভাই। মামলা করা হয়েছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায়। এ মামলা নিয়ে কেউ যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, তার দায়ভার আমি নেব না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, যারা মামলার বাদি তারাই বাণিজ্য করতে পারবে। অন্য কেউ তো এর সাথে জড়িত হওয়ার সুযোগ নাই।
এদিকে মামলা বাণিজ্যকারী সমন্বয়ক সাকিবকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে সমন্বয়ক এমরানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ফোন কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও তাকে পায়নি৷
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, আগামীকালের প্রোগ্রামের ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো লিখিত পাইনি।