মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া ( কুমিল্লা ) প্রতিনিধি
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় শীতে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা বেড়েছে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়ে বেড়েছে রোগীর চাপ। এ অসুস্থতায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। তবে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বয়স্ক রোগীও রয়েছে।
এ দিকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে রোটা ভাইরাসের টিকার প্রয়োগ না থাকায় প্রতিবছরই এই মৌসুমে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর ফলে আক্রান্ত রোগীদের ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশি এবং পেটব্যথাজনিত অসুস্থতা দেখা দেয়। যার কারণে এ সময়টায় এই ভাইরাসে পাঁচ বছরের কম বয়েসী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় এবং এ সময়টাতে ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
তবে শীতের এ সময়টাতে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, খাওয়ার আগে সাবান পানি দিয়ে ভালোমতো হাত ধোয়া, খোলামেলা ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসালয় ঘুরে দেখা যায়, শীতজনিত রোটা ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন চিকিৎসালয় ও সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকরা কোনো কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্ত বিভাগে বিশ মাস বয়েসী শিশু সাফওয়ান রোটাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পাতলাপায়খানা, বমি ও জ্বর নিয়ে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। শিশু সাফওয়ানের বাবা ওবায়দুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তাহিন পাতলাপায়খানা করছিল। ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাওয়াচ্ছিলাম। তবে হঠাৎ করেই তার গায়ে তীব্র জ্বর আসে। ঘন ঘন বমিও শুরু করে তাহিন। তাই তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তঃবিভাগে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৪ মাস বয়েসী শিশু জোবায়েদ হোসেন। গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতায় ভুগছে জোবায়েদ। মুখে ঔষধ খাইয়েও তেমন কোনো আরোগ্য না পাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশু জোবায়েদের মা শারমিন আক্তার বলেন, ঘন ঘন বমি ও পাতলাপায়খানা করার কারণে আমার ছেলের শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। তাই তাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা ২ বছর বয়েসী সিনতিয়ার মা মুন্নি আক্তার বলেন, গতকাল রাত থেকে পাতলাপায়খানা করছে সিনতিয়া। সকাল থেকে সে ঘন ঘন বমি শুরু করে। গায়ে তার জ্বরও আছে, তাই তাকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, প্রতিবছরই শীতকালে রোটাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমবেশি দেখা দেয়। এ বছরও রোটা ভাইরাসের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। আমরা আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। অধিকাংশ রোগীই কম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন ও এ রোগের অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ আছে। রোগীদের স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।