মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়ার শিল্পীপাখি বাবুই কুমিল্লায় এখন বিলুপ্তির পথে। এখন আর যত্রতত্র দেখা মেলে না তাদের। উঁচু গাছ বা তাল গাছের স্বল্পতা ও প্রকৃতিক বিপর্যয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। এতে পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, গ্রীষ্মকাল বাবুই পাখিদের প্রজনন ঋতু। এই সময় এরা বাসা বাঁধে। সাধারণত মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। স্ত্রী পাখির প্রেরণায় পুরুষ বাবুই পাখি মনের আনন্দে বিরামহীনভাবে বাসা তৈরির কাজ শেষ করে। একটি পুরুষ বাবুই পাখি একটি মৌসুমে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। তবে প্রেমিক বাবুই পাখি যতই ভাব-ভালোবাসা প্রকাশ করুক না কেন প্রেমিকা বাবুই পাখি ডিম দেয়ার সাথে সাথে প্রেমিক বাবুই আবার সঙ্গী খোঁজার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই চলে বাবুইদের জীবনের গল্প।
সরেজমিনে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে তাল পাতায় গড়া নিপুণ কারুকার্যে খচিত বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখির প্রধান আবাসস্থল বাংলার ঐতিহ্য তালগাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না, তাই তেমন একটা চোখে পড়ে না শিল্পীপাখি বাবুইরও। অথচ আজ থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ওই গ্রামগুলোর বাড়ির পাশের, মাঠ-ঘাটের তাল গাছে দেখা যেত এদের বাসা। দেখা যেত এদের শিল্পকর্মের নিপুণ দৃশ্য। বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দও এখন বিস্মৃত স্মৃতির মতো।
কথা হয় বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শংকুচাইল গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী ( ৭১) সাথে, তিনি বলেন, তাল গাছে বাসা গড়ার ছোট পাখি বাবুই এই অঞ্চলের প্রায় প্রতি বাড়ির পাশের তাল গাছে, পুকুর পাড়ের তাল গাছে দেখা যেত। তাদের গড়া বাসা দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি অনেক মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙে পড়ে না। এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির বাবুই পাখি এই অঞ্চলে দেখা যেত। এরমধ্যে অনেক বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। টিকে আছে কিছু দেশি বাবুই। এদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ উঁচু জাতীয় গাছ, তালগাছ কমে যাওয়া।
পাখিপ্রেমী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মোঃ মহিউদ্দিন মুবিন বলেন, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখিদের আবাসস্থল নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। সে জন্য প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ গাছ লাগানো। বাবই পাখিরা উঁচু গাছে বাসা বাঁধে, তাই তালগাছ, নারকেল গাছ ও খেজুরগাছ লাগানো প্রয়োজন। এতে বিলুপ্তির পথে হাঁটা শিল্পীপাখি বাবুই আবারও আগের মতোই চোখে পড়বে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের আবাসস্থল নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার কুমিল্লার কাগজ কি বলেন, শিল্পী পাখি বাবুই এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না, কুমিল্লায় বনভূমির অভাবে বাবুই পাখি ও তার বাসা হারাতে বসেছে আজ। সবুজ সমারহের সংকট উঁচু উঁচু তালগাছ আর চোখে মিলে না, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশ দূষণ এর কারণ ও বাবুই পাখি ও তার বাসা কুমিল্লা তথা পুরো দেশ থেকে হারাতে বসেছে।