মো: ওমর ফারুক মুন্সী :
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, মোবাইল কোর্টের অভিযান, জেল-জড়িমানা, মালামাল জব্দ করন, কৃষক-জনতার প্রতিবাদ, কোন কিছুইতেই থামছে না মাটি খেকোদের দৌড়াত্ম। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা, কোনো মৌসুমেই থেমে নেই গোমতীর চর কিংবা চরের বাইরের ফসলী জমির উর্বর মাটি লুট। মাত্র চার মাস আগে গোমতীতে প্রবল পাহাড়ী ঢলের রুদ্ররুপ দেখেছে উপজেলাবাসী। দীর্ঘ সময় ধরে মাটিলুটের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। বাঁধ মেরামত এবং বাঁধ পাহাড়া দিয়েও ঠেকানো যায়নি ভাংগন। অথচ ভয়াবহ বন্যার ক্ষত না শুকাতেই শুরু হয়ে গেছে মাটি খেকোদের লুটপাট। কৌশলে জিম্মি করে লুটে নেওয়া হচ্ছে অসহায় কৃষকদের জমির মাটি। কুমিল্লার দেবিদ্বারে গোমতী চরসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে মাটি সিন্ডিকেটের এমন দৌড়াত্ম।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, দেবিদ্বারে গোমতীর চরের মাটি কাটছে একাধিক সিন্ডিকেট। দিনের বেলায় ফসলি জমি ও রাতের বেলায় নদীচরের মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। ড্রেজার, ভেলচা-ভেকু দিয়ে জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠানের জায়গা ভরাটের জন্য। প্রশাসনের অভিযানের পরেও কমছে না অবৈধভাবে মাটিকাটা। এতে অসহায় কৃষকদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে নদীরক্ষা বাঁধ আবারও হুমকির মুখে পড়ছে। ট্রাক্টর চলাচলের ফলে বাঁধ ও রাস্তার পাশের বাসিন্দাদের ধুলোবালিতে নাকাল হওয়ার জোগার। অপরদিকে গোমতীর মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে ইতঃপূর্বে একাধিকবার মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার জাফরগঞ্জ, লক্ষীপুর, আসানপুর, খলিলপুর, শিবনগর, মাছুয়াবাদ, আব্দুল্লাহপুর, শিবনগর, বারেরারচর, বড়আলমপুর, বিনাইপাড়, দুয়ারিয়া, রাজামেহার, ভিংলাবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় চর ও ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে সিন্ডিকেট।
খলিলপুর এলাকার বাসিন্দা মোসলেহ উদ্দিন বলেন, মাটি খেকোদের অধিকাংশই প্রভাবশালী। তারা প্রথমে ছোট একটি জমি কিনে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে আশপাশের জমির মাটিও কাটতে থাকে। পরে দালালদের মাধ্যমে কৃষকের জমির মাটি বিক্রিতে বাধ্য করে। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না। আমাদের এখন হাহাকার করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আব্দুল্লাহপুর এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, দিনে কৃষকের জমির মাটি এবং রাতে চরের মাটি কাটে সিন্ডিকেট। নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে চরের মাটি লুট। শুক্র ও শনিবার অফিস বন্ধ থাকায় মাটিকাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। অবিলম্বে অবৈধ মাটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রুহুল বলেন, গোমতী চরের মাটি লুটের জন্য একটি চক্র শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। আমরা চেষ্টা করেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। এতে আমার এলাকার চরের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন প্রশাসন যদি জোরালো পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে চরের ভূমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রায়হানুল ইসলাম বলেন, ইতঃপূর্বে আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। গত দুইদিনে বারেরা ও বড় আলমপুর এলাকায় দুইজনকে আটক করে প্রতিজনকে এক বছরের করে জেল দিয়েছি। ড্রেজার, ভেকু, ট্রাক্টর জব্দ এবং মাটি সিন্ডিকেটের সদস্যদের জেল, জরিমানাসহ তাদের প্রতিরোধে সামনে আমরা আরও কঠোর অভিযান পরিচালনা করব।