মো: ওমর ফারুক মুন্সী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষা চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম বড় সবজির মোকাম কুমিল্লার নিমসার বাজার। রাতে শুরু হয়ে জমজমাট এ বাজার শেষ হয় সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পর। বর্তমানে এই বাজারে সবজির বেচাকেনা নেমেছে অর্ধেকের চেয়েও কম। পাইকারী ব্যবসারীরা শুয়ে-বসে সময় কাটান। শীতের শুরুতে এই বাজারে সবজির দাম চড়া থাকলেও এখন একেবারেই কম। ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে পাইকারদের।
তবে এর উল্টা চিত্রও দেখা গেছে। এই বাজারের আড়তদারদের হাতবদল হয়ে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরের কুমিল্লা শহরের খুচরা বাজারে এলে একই সবজির দামে পার্থক্য দেখা যায় কেজি প্রতি ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারী বাজার থেকে খুচরা বাজারে প্রায় তিনগুণ চার গুন বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। নিমসার বাজার থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দুরে কংশনগর বাজারেও দ্বিগুন দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। গ্রামের হাটগুলোর চিত্রও প্রায় একই রকম। পাইকারী বাজার থেকে গাড়িতে উঠলেই দাম বেড়ে যায় তিনগুন। পরিবহণ খরচের অজুহাতে তিন গুন দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দেশের অন্যতম সবজির বড় পাইকারি বুড়িচংয়ের নিমসার কাঁচা বাজার এবং কুমিল্লা নগরীসহ আশ পাশের উপজেলা সদরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।
সরেজমিনে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা, রাজগঞ্জ, চকবাজার ও টমছমব্রিজ বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আলু প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, বড় ফুল কপি ২০-২৫, বাধা কপি বড় ৪০ টাকা, গাজর ৭০-৮০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৩৫-৪০, করলা ৫৫-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পেপে ৫০-৫৫ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
অথচ নিমসার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলুর (ডায়মন্ড) দাম মাত্র ২৮-৩৫ টাকা, বড় ফুল কপি ৬-৮, বাধা কপি বড় ১২-১৫ টাকা, গাজর ৩০-৩২ টাকা, বেগুন (লম্বা) ১২-১৫ টাকা, করলা ৪০টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫-২৮ টাকা, পেপে ২৮-৩০ টাকা, টমেটো ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
যশোর থেকে আসা পাইকারী ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ বলেন, রাত ৩টা বাজে এখনও কোন ক্রেতা আসেনি। বসে বসে সময় কাটাচ্ছি, পাইকারী ব্যবসায়ে লোকসানে আছি।
নিমসার বাজারের আড়তদার মো.জসিম উদ্দিন ও মোখলেছুর রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি এই বাজারে আসে। আগে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল নিয়ে যেত এখন তেমন একটা আসেন না। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। তাঁরা আরও বলেন, পাইকারী বাজারে সবজির দাম কমলেও খুচরা বাজারে কিন্তু চড়া দাম নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। গাড়িতে মাল উঠলে দ্বিগুন/তিনগুন দাম বেড়ে যায়।
টমছমব্রীজের খুচরা ক্রেতারা মো. কামাল উদ্দিন, শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, পাইকারী বাজারে সবজির দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমেনি। বাজার মনিটরিং এর অভাবে খুচরা বাজারে দ্বিগুন/তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু সবজি আমাদের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যেও নেই।
এ বিষয়ে কুমিল্লা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো.কাউছার মিয়া বলেন, দামে এত পার্থ্যক্য হওয়ার কথা নয়, কি কারণে এত পার্থক্য খুজে বাহির করব। দুই-একদিনের মধ্যে অভিযানে বের হবো, আপনারাও সাথে থাকবেন, আশা করছি ভালো একটি ফলাফল আসবে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আইউব মাহমুদ , আমরা উৎপাদন বিষয়টি তদারকি করার চেষ্টা করি, চলতি বছরে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষামাত্রা আছে, এ পর্যন্ত ১১ হাজারেও বেশি জমিতে সবজি চাষের আওতায় আসছে। এটি আরও বাড়বে। বাজারের দামের বিষয়টি আমাদের আয়ত্বে নেই, বাজার তদারকি করছেন কৃষি বিপনন দেখা শুনা করছেন।
কুমিল্লা কৃষি বিপনন কার্যালয়ের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রেজা শাহবাজ হাদী বলেন, কৃষি বিপনন আইনে কোন পণ্যে কত টাকা লাভ করতে পারবে তা উল্লেখ রয়েছে। খুচরা পরিবহন, শ্রমিক, লোডিং-আনলোডিং, দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন এগুলো খরচের পর একজন পাইকারী বিক্রেতা ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা বিক্রেতা ১০-১২ শতাংশ লাভ করতে পারবেন এটা আইনে অনুমোদন রয়েছে এর বেশি করতে পারবেন না।