1. support@dainikcumilla.com : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. ghossaintamzid@gmail.com : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. admin@dainikcumilla.com : unikbd :
দেবীদ্বারে ঘরের অভাবে ৬ সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মামুন-নিলুফা দম্পতি - Dainik Cumilla
সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ঘূর্ণিঝড়ে কুমিল্লায় ৬২ ট্রান্সফার্মার বিকল, ভেঙেছে ৮৪ খুঁটি নাঙ্গলকোটে উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের আয়োজনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত লাকসামে কৃষক-কৃষাণীদের নিয়ে ‘পার্টনার কংগ্রেস’ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উদ্যোগে ব্রাহ্মণপাড়ায় বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতা দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরে ঐকতান পরিবার’র রবীন্দ্র জয়ন্তী স্মরণানুষ্ঠান কুমিল্লায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা কুমিল্লায় পশুরহাটের ইজারাদারদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মতবিনিময় সভা চৌদ্দগ্রামে শ্বশুর বাড়ীর জমি নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আদালতে চার্জ গঠন মৌলিক সংস্কার ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনা করলে আস্থার সংকট কেটে যাবে: ডা. তাহের কুমিল্লা কারাগারে থাকা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যু

দেবীদ্বারে ঘরের অভাবে ৬ সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মামুন-নিলুফা দম্পতি

  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৬৮ বার পঠিত

শফিউল আলম রাজীব,

আমার থেকে রোহিঙ্গারাও ভালো আছে। আমার থাকার জায়গা নেই, খাবারের ব্যবস্থা নেই, অসুস্থ্যতার জন্য কেউ কাজে নেয় না তাই কর্ম সংস্থান নেই, ভিক্ষাবৃত্তিই আমার একমাত্র সম্বল। স্ত্রী-পুত্র-কণ্যাসহ ৮ জনের পরিবার নিয়ে যাযাবরের মতো খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি। মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনরা অনেক সুযোগ পেয়েছে, আমি পাইনি। এখন আমার একটি ঠিকানা প্রয়োজন। এমন করে কথাগুলো বললেন ওই অসহায় গৃহকর্তা মো. মামুন মিয়া।

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামের তাজু মুহুরীর পরিত্যাক্ত একটি নির্জন বাড়িতে মামুন মিয়ার পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

নির্জন ঝোপঝারের ভিতরে প্রায় ৩০ বছর আগের একটি দোচালা টিনসেট ও একচালা একটি রান্না ঘর রয়েছে। প্রায় ৩ মাস পূর্বে ভিক্ষা করতে এসে এ বাড়িটির সন্ধান পায় মামুন। আশ-পাশে কোন বাড়িঘর নেই, একেবারে একটি ভুতুরে জঙ্গল পোকা- মাকড়, মশা, জোকের উপদ্রপ বেশী থাকলেও এরই মাঝে ৬ শিশু সন্তানসহ এ অস্বাস্থ্যকর বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশেই তাদের বসবাস। বাড়ির মালিকের সন্ধ্যান না পেলেও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এখানেই অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারা। দোচালা টিনের ঘরটির দরজা জানালা নেই, ঘরের বেড়া ভাঙ্গা। রান্না ঘরের চালা থাকলেও বেড়া নেই। রাতের অন্ধকারে কুপি বাতিই ভরসা। মশা এবং জোকের উপদ্রপ থেকে রক্ষায় একটি মশারি কেনারও সামর্থ্য নেই তাদের।

মামুন জানায়, তার আদিবাড়ি দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের আজিউল্যার বাড়ি। তার পিতা মালেক মিয়াও ভূমিহীন ছিলেন। তিনি উপজেলার ধামতী গ্রামের নিলুফাকে বিয়ে করেন। নিলুফা গার্মেন্টেসে চাকরি করত। সে সুবাদে সেও গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে স্ত্রীর সাথে চাকুরি শুরু করেন। লেখাপড়া কম জানায় ভালো বেতন না পেয়ে দেবীদ্বারে চলে আসেন। পৌর এলাকার বানিয়াপাড়া ভাড়া বাসায় থেকে ভ্যান- রিক্সা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আসছিল। একসময় অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভাড়া বাসায় থাকা সম্ভব হয়নি। বারেরারচর গ্রামের গুচ্ছগ্রামে সুফিয়া বেগমের নামে বরাদ্ধকৃত ঘরে থাকা শুরু করেন। ওখানে প্রায় ১০ বছর থাকেন। সুফিয়া চট্রগ্রামে থাকত, এখন সুফিয়া ফিরে তার ঘর বুঝে নেন। মামুন মিয়া ভিক্ষাবৃত্তির সুবাদে পোমকাড়া গ্রামের এ পরিত্যাক্ত বাড়ির সন্ধান পান। তার জাতীয় পরিচয় পত্র থাকলেও সেটি হারিয়ে ফেলেন। তার স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারের নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এমনকি ৩ পুত্র ও ৩ কণ্যা শিশুর জন্মনিবন্ধনও করাতে পারেননি। বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভূমিহীন, গৃহহীন যাযাবর হওয়ায় সন্তানদের নেই কোন শিক্ষার সুযোগ সুবিধা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কোন কর্মীর সাথে কখনো তাদের সাক্ষাৎ ঘটেনি। বিাবাহের পর ৬ সন্তানের জনক- জননী হয়েছেন তারা। মামুনের তথ্যানুযায়ী তার সন্তানদের নাম ও বয়সের দিক থেকে জানান, বড় ছেলে আরিফ(১০), বড় মেয়ে শারমিন(৮), মেঝো ছেলে সজিব(৬), মেঝো মেয়ে মাহিমা (৫), ছোট মেয়ে মারিয়া (১৫ মাস) এবং ছোট ছেলে আলী বাবা (১৪ দিন)।

তিনি তার পিতৃ পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তার বাবা একসময় বেবী টেক্সি চালাতেন, একটি ঘর ছিল তা বিক্রি করে দেন। বাবা এখন ভিক্ষাবৃত্তির আয়ে চলেন, মা পাগল হয়ে নিরুদ্দেশ, বড় ভাই সুমন মিয়া ময়মনসিংহে শ্বশুর বাড়িতে থেকে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালান, ছোট ভাই স্বজল চট্রগ্রামে শ্বশুর বাড়িতে থেকে তরকারি বিক্রি করে সংসার চালান। আমি এ অবস্থায় আছি।

স্থানীয় দুলাল মিয়া বলেন, প্রায় ৩মাস পূর্বে এ পরিত্যাক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেন মামুনের পরিবার তখন তার স্ত্রী গর্ভবতী ছিল। এ বাড়ির মালিকের ১১ ছেলে সবাই নামীধামী শিক্ষক, এলাকায় কেউ থাকেন না। বাড়িটি দখলে রাখতে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে একটি টিন সেট ঘর ও একটি পাকা ভবন নির্মানাধীন অবস্থায় ফেলে যান। আমরা ছোটবেলায় দিনেও এ এলাকায় আসতে ভয় পেতাম। এখনো সেই ঝোপ-ঝার রয়েছে। সাপ, বিচ্ছু, জোঁক, মশা- পোকামাকড়ের মধ্যে ওদের বসবাস। প্রায় দু’সপ্তাহ আগে মামুনের স্ত্রীর ডেলিভারী খরচ ১৪শত টাকা দিয়ে সহায়তা করি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. গোলাম সারওয়ার মুকুল ভূইয়া বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা ছিলনা। এখন আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি। ইউএনওর সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে তার আবাসনসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করব।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD