1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
দেবীদ্বারে ভূমিখেকুদের দৌরাত্ম্যে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি; নিঃস্ব কৃষকদের আর্তনাদ - Dainik Cumilla
বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
কুমিল্লা সীমান্তে ভারতীয় মোবাইল ও ডিসপ্লে জব্দ বুড়িচংয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণ কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে বেঁধে নির্যাতন, মূল হোতা আটক ব্রাহ্মণপাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ২ ব্যাক্তিকে কারাদণ্ড ব্রাহ্মণপাড়া ইউএনওর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন চৌদ্দগ্রামে অবৈধভাবে জগন্নাথদীঘির পানি আটকে রাখার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন কুমিল্লায় নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবীতে নাঙ্গলকোটে মানববন্ধন দাউদকান্দিতে ইসলামি ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের মানববন্ধন

দেবীদ্বারে ভূমিখেকুদের দৌরাত্ম্যে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি; নিঃস্ব কৃষকদের আর্তনাদ

  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০২৩
  • ২৪৫ বার পঠিত

শফিউল আলম রাজীব,

কুমিল্লার দেবীদ্বারে ভূমিখেকু ও ড্রেজার মালিকদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। ড্রেজারের কূপে(গর্তে) বিলিন হওয়া আবাদী জমির মালিক (কৃষক) দিনে দিনে নিঃস্ব হচ্ছে আর বিলিন হচ্ছে ফসলী জমি। দেবীদ্বার উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন ঘিরে অন্তত: ৩০টি স্পটে ড্রেজার মালিক ও মাটি খেকুদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ সাধারন মানুষ। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের বরাবরে বারবার লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলেনি ভোক্তভূগীদের। এমনটাই জানিয়েছেন একাধিক ভোক্তভূগী।

ভোক্তভূগীরা আরো জানান, প্রভাবশালী মাটি খেকুরা প্রথমে মৎস খামারের নামে আবাদী জমিতে ভেকু দিয়ে পুকুর খনন করে, তার পর ওই মৎস খামারের ভেতর ড্রেজার মেসিন বসিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে দূর দুরান্তে মাটি বিক্রি করা শুরু করে। পাশের জমিগুলো ধীরে ধীরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মৎস খামারে বিলিন হতে থাকে। প্রতিবাদ করতে গেলে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হতে হয় জমির মালিকদের। এক পর্যায়ে দালালের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে মৎস খামারী ওই বিপদে পড়া কৃষকের জমি কিনে নেন।

মঙ্গলবার সকালে দেবীদ্বার উপজেলা ৪নং সুবিল ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন জানান, গত কয়েকদিন ধরে ওয়াহেদপুর কাজী বাড়ির কাজী খোরশের ড্রেজার মেসিন দিয়ে ওয়াহেদপুর পূর্বপাড়া বিলে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনে ব্যবসা শুরু করছে। প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করে লাভ নেই তাই অভিযোগ করিনি।

মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে ফাতেমা আক্তার নামে ৫০ উর্ধ এক নারী দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে জানান,- আমার জীবনকে জীবন মনে করি নাই, খেয়ে না খেয়ে, সন্তানদের মূখে ভালো খাবার না দিয়ে, নিজের অসুখে ঔষধ না খেয়ে, গার্মেন্টসে, তুলা কারখানায়, শহরের বাসা বাড়িতে, গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঝি চাকরানির কাজ করে, দান- সদগাহ- জাকাত- ফেতরার টাকা, পত্তনে জমি রেখে কিছু টাকা জমিয়েছি। জীবনের ৩০টি বছরের কষ্টের সঞ্চিত টাকায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে দেবীদ্বার উপজেলার ৪নং সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম মোখাড়া গ্রামে বাবার বাড়ির পাশে গত বছর ৩৩ শতাংশ জমি ১২ লক্ষ টাকায় কিনেছি। আমার সেই জমির পাশে ভূমিখেকু ফরিদ মিয়ার মৎস খামারে নজরুল মেম্বারের ড্রেজারের কূপে ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে, গত দু’দিনে আমার জমির অনেক আংশ ওই খামারে ভেঙ্গে পড়ে যায়। আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। আমার মতো অনেক কৃষক সর্বশান্ত হচ্ছে, আবাদী জমি ধ্বংস হচ্ছে। ওই চক্রের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বার বার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাইনি। সোমবার (১৫ মে) ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা করেছি। প্রতিবারের ন্যায় এবারো ফোনে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে বলেন, ল্যান্ড অফিসে আবেদন করতে বলেন। আমি বলেছি আপনি ব্যবস্থা নেন, তিনি আবারো বললেন মামলা করতে। আমি গরিব মাানুষ ওদের সাথে মামলা করে জমি রক্ষা সম্ভব নয়।

একই সূরে কথা বললেন, ফতেহাবাদ ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামের ভোক্তভূগী মৃত: আদম আলীর পুত্র মাঈনুদ্দিন ও মইনুদ্দিন। তারা জানান, একই গ্রামের মাটি খেকু মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে প্রভাবশালী সামসুল হক এবং মামুন গোমতী নদীর ভেরী বাঁধের বাহিরের অংশে ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে মাটি কাটার ফলে চলতি বর্ষায় গোমতী বাঁধ যেমন ঝুকিতে আমাদের বাড়িটিও ঝুকিতে, যে কোনমূহুর্তে ভূমি খেকুদের খননকৃত কুপে(গর্তে) বিলিন হতে পারে আমাদের থাকার সর্বশেষ ঠিকানা বাড়িটি। আমরা গরিব মানুষ নিজেদের ভিটে মাটি রক্ষায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করায় আমাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করেছে।

গুনাইঘর উত্তর ইউপির ধলাহাস গ্রামের আবুল হাসেম জানান, ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ি মৃত; সাহেব আলী মেম্বারের পুত্র নজরুল ইসলাম সুদন অবৈধ ড্রেজারে মৎস খামারের নামে কৃষি জমি ধ্বংস করছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পক্ষে প্রতিকারে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও থানা পুলিশকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। আমরা একদিকে প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হুমকীর মূখে আছি, অপর দিকে আমাদের কৃষি জমিগুলো ড্রেজারের কূপে(গর্তে) বিলিন হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, দেবীদ্বারে প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অবাদে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি লুটে নিচ্ছে ড্রেজার মালিক নজরুল মেম্বার ও তার সহযোগী মৎস খামারের মালিক ফরিদ মিয়া নামের এক ভূমিদস্যু। গত তিন বছর আগে উপজেলার এগারগ্রাম বাজারের দক্ষিন পাশের্ব পশ্চিম পোমকাড়া গ্রামে প্রায় ৬০ শতাংশ (ভিপি তালিকা ভূক্ত) ফসলী জমি নিয়ে তাদের এই অবৈধ মাটি খনন ও বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। বিগত তিন বছরে দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের পশ্চিম পোমকাড়া মৌজায় ১৭টি দাগে ২৪৭ শতাাংশ ফসলী জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

এ ব্যাপারে ড্রেজার মালিক নজরুল মেম্বার বলেন, আমি আর এ ব্যবসা করবনা, ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছি। এখনো মাটি উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার ড্রেজার মেসিন ভালো আছে কিনা তা পরীক্ষা করতেই মেসিন চালু করেছি।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা বলেন, গোমতী নদীর চর থেকে এবং কৃষি জমি ধ্বংস করে অবৈধভাবে মাটি কাটা ও ড্রেজার মেসিনের ভোগান্তিতে পড়া ভোক্তভূগিদের অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা পর্যায় ক্রমে অভিযান চালিয়ে তা প্রতিরোধ করছি এবং অভিযান অব্যাহত আছে।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD