চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে এসেছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) ও চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ সহ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌদ্দগ্রাম ক্যাম্পের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। পরে জনরোষের মুখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা না করে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এ সময় উত্তেজিত জনতা প্রশাসনের লোকজনের উপর হামলার চেষ্টা করে।
সরেজমিন গিয়ে ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত জমির আহাম্মদ এর ছেলে মো: কবির আহাম্মদ এর কাছে গুনবতী বাজারস্থ ইউনিয়ন পরিষদের সামনের একটি পুকুর (জলাশয়) ৫ বছরের জন্য লিজ প্রদান করে। লিজকৃত পুকুরের উত্তর পাশের জায়গায় জোরপূর্বক মাটি ভরাট করে এবং আরসিসি ফিলার স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করে আসছিল। পুকুরটি লিজ দেওয়ার পর থেকে অবৈধ দখলদারদেরকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বারংবার বিভিন্ন আইনী নৌটিশ প্রদানের পরও তারা রেলওয়ের জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনা না সরিয়ে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ সংক্রান্তে আদালতে মামলা চলমান ছিল। মামলার রায় রেলওয়ের পক্ষে আসে। আদালতের রায়ের পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযানের তারিখ নির্ধারণ করলেও দখলদারদের বাধার কারণে উচ্ছেদ অভিযান ব্যাহত হয়। সর্বশেষ রবিবার (২২ জুন) সকালে রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যার নেতৃত্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করতে আসে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ সময় দখলদাররা তাদের অপরাপর সহযোগিদের সাথে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে (স্কেভটর ও আভিযানিক সরঞ্জাম সহ) দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জনরোষের মুখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ চার ঘন্টা অপেক্ষা করে অভিযান পরিচালনা না করে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুকুর লিজ নেওয়া মো: কবির আহাম্মদ জানান, আমি চার বছর আগে এ পুকুরটি সরকারি বিধি মোতাবেক রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ করি। লিজ নেওয়ার পর থেকে কতিপয় দুষ্কৃতকারী দুইবার লিজকৃত পুকুরে বিষ ঢেলে মাছগুলো মেরে ফেলে। যার ফলে আমি ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ি। পুকুর পাড়ে অবৈধ দোকান নির্মাণ করে যারা ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের সাথে বিভিন্ন সময় আমার বাকবিতন্ডা হয়। এখন তারাই আমাকে সে পুকুরে মাছ চাষ করতে বাধা দিচ্ছে। আজ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আসে। স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকের তোপের মুখে কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা না করে ফিরে যায়। দখলদাররা প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আমার উপর বর্বরোচিত হামলা করে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে রেলওয়ে জায়গায় ব্যবসা পরিচালনাকারী সহ স্থানীয়রা জানান, আমরা দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে আমরা জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত আছি। তবে, আমাদেরকে আরও সময় দিতে হবে। বারবার নৌটিশ প্রদানের পরও জায়গা খালি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এ রকম নৌটিশ বহুবার দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কখনো অভিযান হয়নি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের পেটে লাঠি মারতে এসেছে। আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। শুনানি শেষে আদালতের রায় মেনে নিব।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রামের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) দীপঙ্কর তঞ্চঙ্গ্যা সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বলেন, যারা রেলওয়ের জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদেরকে রেলওয়ের জায়গা খালি করে দিতে বেশ কয়েকবার নৌটিশ প্রদান করা হয়েছে। গত তিন যাবৎ উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে মাইকিং করে স্থাপনা ও তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। আজ অভিযানে আসলে অবৈধ দখলদাররা আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।