নেকবর হোসেন
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। প্রার্থীরা জয় পেতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, দিন-রাত দৌড়ঝাঁপ করছেন। নির্ঘুম ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের কাছে ভোটারদের কদর অনেক বেড়েছে।
এদিকে এ নির্বাচনে ত্রিমুখি লড়াইয়ের মধ্যে শেষ হাসি হাসবে বাস প্রতীকে বলছেন নগরীর বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, সূচনার বিজয়ের লক্ষ্যে নেতাকর্মীরা ও রাজনৈতিক দলমতের উর্ধ্বে থাকা সাধারণ ভোটাররা সিটির উন্নয়নে স্বার্থে বাস প্রতীকের ভোট দিবেন বলে জানান, এ উপনির্বাচনে প্রভাবশালী তিন প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হতে পারে। প্রভাবশালী এ তিন প্রার্থী হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা, সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক নেতা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।
বিএনপি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও এ নির্বাচনে কায়সারের পক্ষে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে গণসংযোগ, উঠান বৈঠকে ও প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। এসব নেতাকর্মীরা আটঘাট বেধে প্রার্থীর জয়ের লক্ষ্যে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।
অপর প্রার্থী সাক্কুর পক্ষেও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা কাজ করছেন এবং তারা এবার সাক্কুর জয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপর প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা। এমপির কন্যা সূচনার বিজয়ের লক্ষ্যে জেলা-মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের,প্রবাসী আওয়ামীলীগ পরিবারের সৌদি আরব, লন্ডন ও ইতালি, সিঙ্গাপুর অন্যান্য দেশ থেকে আগত দুই শতাধিক প্রবাসী মীর মোতালেব লিটন ও আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ টি টিমে নেতাকর্মীরা একত্রে হয়ে ভোটের মাঠ চয়ে বেড়াচ্ছেন। ভোটের মাঠে চার প্রার্থীর মধ্যে এ তিন প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা ও ভোটের সমীকরণে ত্রিমুখি লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কিন্তু সাংগঠনিক দক্ষতা কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এখানে হাতি প্রতীকের প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রচারণা চালালেও তার পক্ষে দলের নেতাদের মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনি এলাকায় প্রতিদ্বদ্বী প্রার্থীদের মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণার ডামাডোল। নগরীর শপিং মল, দোকানপাট ও অলিগলি সড়কে শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। বলা যায়, পোস্টারে-ব্যানারে ছেয়ে আছে পুরো নগরী। নগর এলাকা ঘুরে সর্বত্র নির্বাচনের এমন-ই উৎসবমুখর চিত্র দেখা গেছে। তবে প্রার্থীদের গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠকে একে অপরকে টার্গেট করে দেয়া বক্তব্যে ভোটের মাঠে কিছুটা উত্তাপও ছড়াচ্ছে। এদিকে প্রার্থীদের নিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা কোমর বেঁধে নির্বাচনি মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। তবে এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চান ভোটাররা। নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার হাবিব মিয়া ও আশ্রাফপুরের মাসুদ আহমদ, ঠাকুরপাড়া কাউসার মিয়াসহ অনেকে জানান, তারা ক্লিন ইমেজের সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দেখে-শুনে-বুঝে ভোট দেবেন এবং যিনি সুখে-দুঃখে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দেবেন। তবে ভোট সুষ্ঠু হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেক ভোটার। নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকার আশিকুর রহমান ও অশোক তলা এলাকার মহিউদ্দিন ও রানির বাজার এলাকার স্বপন সাহাসহ অন্তত ৯/১০ জন ভোটার বলেন, ভোটের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। এমন পরিবেশ অক্ষুণœ থাকলে তারা কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড অক্ষুণ রাখতে পারে তাহলে ভোটাররা শঙ্কামুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
প্রার্থীদের গণসংযোগ-উঠান বৈঠক: বৃহস্পতিবার দিনভর নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন।
তিনি ভোটারদের কাছে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরেন এবং নগরীর সকল ওয়ার্ডের উন্নয়ন সমতা বজায় রেখে নানান প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন – কুমিল্লা বাসীর জন্য আগামীদিনেও কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছি,সুখে -দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।আমি মানুষের মনে আছি। কখনো সংগঠনের হয়ে তাদের সাথে গিয়েছি।কখনো সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে গিয়েছি । কুমিল্লা নগরবাসী তাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে আমার আমার শিক্ষা, মেধা যোগ্যতা ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে বাস প্রতীকের ভোট দিবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন,আমার বাবা তরুন বয়সে মাত্র ৩১ বছর বয়সে কুমিল্লা পৌর সভায় দায়িত্ব নিয়ে যেভাবে দরজা খোলা রেখে কাজ করেছেন। আমিও সেভাবে দরজা খোলা রেখে সাধারন মানুষের কল্যাণে কাজ করব। বাবার অনেক স্বপ্ন রয়েছে এ সিটি করপোরেশন কে নিয়ে। বাবার স্বপ্ন পূরণে কাজ করব। কুমিল্লাকে একটি পরিকল্পিত স্মার্ট নগরী সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলব।
টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। তিনি বলেন,
দুই মেয়াদে তিনি এ সিটির মেয়র ছিলেন। সরকারের সহায়তায় নগরীর উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। দীর্ঘ বছর নগরবাসীর সেবা দিয়েছি, এখন তাদের দুয়ারে দুয়ারে ভোটের জন্য যাচ্ছি, সাড়া পাচ্ছি। আশা করি তৃণমূলের মানুষ আমাকে নির্বাচিত করে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার সুযোগ দিবেন।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে বিএনপির প্রার্থী দাবি করে বলেন, পঁচানব্বই ভাগ বিএনপির নেতাকর্মী তাঁর সাথে আছে। বিএনপির মূল চালিকা শক্তিও তাঁর পক্ষে। বিএনপি তাকে তাদের প্রার্থী মনে করে। মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপির লোক বলার সুযোগ নেই। কারণ তিনি বিএনপির আদর্শচ্যুত। বিএনপির ভোট ও যারা লুটপাট থেকে নগরকে বাঁচাতে চায় সেসব সাধারণ মানুষের ভোট পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঘোড়ায় দিবে।
হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেন। এসময় তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমতা রাখবেন এবং তিলোত্তমা নগরী গড়ে তুলবেন।