মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
ব্রাহ্মণপাড়ার সদ্য বিদায়ী ইউএনও সোহেল রানা।
বদলির আদেশ পেয়ে বিদায় বেলায় ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা। সম্প্রতি বদলি হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) শেষ কর্মদিবস ছিল তার।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে অফিসিয়াল ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ইউএনও। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও স্থানীয়দের ভালোবাসার বিষয়টি তুলে ধরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ইউএনও লিখেছেন, ‘প্রিয় ব্রাহ্মণপাড়াবাসী, আসসালামু ওয়ালাইকুম। আমি সোহেল রানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ব্রাহ্মণপাড়া। ব্রাহ্মণপাড়ায় আমি এসেছিলাম ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে। ২ বছর ১০ দিন কর্মকাল শেষে আগামী রোববার (৮ অক্টোবর) অপরাহ্নে আমি ব্রাহ্মণপাড়া ছাড়ছি। সরকারি কর্মচারী হিসেবে প্রচণ্ড কর্মব্যস্ত, বৈচিত্র্যময় ও চ্যালেঞ্জিং দুটি বছর পার করেছি ব্রাহ্মণপাড়ায়। সরকার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ নিয়ে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করে সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ বাস্তবায়নে গত দুই বছরে উপজেলা প্রশাসন টিম সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
‘জনগণের জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠায় ও সব সরকারি দপ্তর যাতে মানুষকে অবাধে, নিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় সহজে সেবা প্রদান করে, সরকারি সুবিধার উপকারভোগী বাছাই করে এবং সমাজে সুশাসন ও জনস্বার্থ বাস্তবায়ন করতে পারে সেটি বাস্তবায়নই ছিল উপজেলা প্রশাসন টিমের মূল লক্ষ্য।’
তিনি লিখেছেন, ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আইনের শাসন বাস্তবায়ন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। উপজেলা প্রশাসন বিগত দুই বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন আয়োজনে, স্থানীয় বিরোধ মীমাংসায়, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ক্ষমতাহীন ও দুর্বলদের আইনের চোখে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে যাতে সমাজের দখল না চলে যায় সেটি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। কাজ করেছে দুর্বল, অত্যাচারিত ও প্রতারিতদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায়। ন্যায়বিচার একটি সমাজের মেরুদণ্ডসম, দুর্বৃত্তদের দমনে করে আমরা সেই মেরুদণ্ড সমুন্নত রাখার চেষ্টা করেছি।’
ইউএনও সোহেল রানা আরও জানান, সরকার উন্নয়ন, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস ও দুর্বল ও পিছিয়ে পড়াদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে। উপজেলা প্রশাসন নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে, শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্ভাবনী নানা পরিকল্পনায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগে, পিছিয়ে পড়াদের সরকারি সুবিধায় অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই সব সরকারি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ছিল সর্বোচ্চ সচেষ্ট। এই দুই বছরে সরকারি কর্মচারী হিসেবে আমার টিমের যা কিছু সাফল্য তার যোগ্য দাবিদার যারা আমাদের আমাদের দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন ও আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে নিজেকে শামিল করেছেন। পেশাদারিত্ব ও জনকল্যাণের প্যাশনের সমন্বয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছি আমরা। আমাদের চেষ্টা সফল না ব্যর্থ- সেই বিচারের ভার ব্রাহ্মণপাড়ার আপামর জনসাধারণের।’
‘ব্রাহ্মণপাড়ার সর্বস্তরের জনসাধারণ আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও সেটি করতে গিয়ে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা আমাদের জানিয়েছেন সেজন্য তাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ জানাই তিনজন সম্মানিত জেলা প্রশাসক স্যারসহ অন্যান্য সকল সহকর্মী সরকারী কর্মচারীদের যাদের নির্দেশনা, পরামর্শ, সহযোগিতা পেয়েছি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যানসহ সব জনপ্রতিনিধিদের যাদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছি। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক সমাজ, সুশীল সমাজসহ ব্রাহ্মণপাড়ার আপামর জনসাধারণকে। আর আমাদের যা কিছু ব্যর্থতা- আইনের ব্যত্যয়, ন্যায়বিচারের ব্যত্যয়, নিরপেক্ষতার ব্যত্যয়, দক্ষতার ব্যত্যয়- তার সবকিছুর দায়ভার আমাদের। সেই ব্যর্থতা আপনারা নিজগুণে ক্ষমা করবেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি, এটি রক্ষা করার দায়িত্ব তোমাদের।’ ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষ বিগত ২ বছরে প্রমাণ করেছে অন্যায়ের চেয়ে ন্যায়ের পক্ষের মানুষ শক্তিশালী ও প্রতিবাদী জনপদ হিসেবে তারা নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে সক্ষম।
ভবিষ্যতের স্মার্ট ও ন্যায়ভিত্তিক ব্রাহ্মণপাড়া বিনির্মাণে আপনাদের জন্য রইল শুভকামনা। ব্রাহ্মণপাড়ার সবুজ গ্রাম ও সাদা মানুষদের প্রচণ্ড মিস করব।