শফিউল আলম রাজীব:
কুমিল্লার দেবীদ্বারে মাদ্রাসা থেকে পালাতে ৬ তলা থেকে রসি বেয়ে নামতে গিয়ে ফসকে পড়ে ২ হাত ভেঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরানী শ্রেণীর সজিব(১১) নামে এক শিক্ষার্থী। চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে মাদ্রাসার ওস্তাদের লোকজনের ভয়ে বিব্রত আহত সজিব ও তার স্বজনরা। তাদের অভিযোগ দুই হাত ভাঙ্গার এক্সরে রিপোর্ট ছিনিয়ে নেয় মাদ্রাসার ওস্তাদের লোকজন।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাগুর গ্রামের বাগুর আল মানার ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। আহত ছাত্র ‘আল মানার ইসলামিয়া মাদ্রাসার’ নূরানী শ্রেণীর ছাত্র মো. সজিব আহমেদ ইব্রাহীম(১১) মুরাদনগর উপজেলার উড়িষ্যা গ্রামের সিসিলিয়া প্রবাসী আব্দুল কাদেরের পুত্র।
‘আল মানার ইসলামিয়া মাদ্রাসার’ নূরানী শ্রেণীর ছাত্র আহত মোঃ সজিব আহমেদ ইব্রাহীম জানায় শুক্রবার মাগরিবের নামাজের আগে আমার চাচা মকবুল হোসেন খাবার নিয়ে মাদ্রাসার নিচে দাড়িয়ে আছে, অন্য এক ছাত্রকে দিয়ে তার কাছে খবর পাঠায়। এ সময় শ্রেণী কক্ষের ওস্তাদ মাওলানা মো. জাহিদুল ইসলামের নিকট তার চাচার সাথে দেখা করতে যাওয়ার অনুমতি চাইলে হুজুর নিষেধ করেন। পরে অপর এক সহপাঠি এসে চাচার সাথে দেখা করতে যেতে বলায় আমি হুজুরকে না বলে চাচার সাথে দেখা করতে নিচ তলায় যাই। ফিরে আসার পর হুজুর আমাকে ডেকে নিয়ে কসটেপ পেচানো বেতের মাথা আগুণে পুড়ে ওই বেত দিয়ে বেধরক পিটিয়ে আমার শরীর ও হাতের আঙ্গুল ফাটিয়ে ও ২ হাত ভেঙ্গে দেয়।
‘আল মানার ইসলামিয়া মাদ্রাসার’ প্রতিষ্ঠাতা ও মোহতামিম মাওলানা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থী সজিব মারাত্মক আহত হওয়ার বিষয়টি শুনেছি, আমাদের মাদ্রাসায় মাগরিবের নামাজের পরপরই ক্লাশ শুরু হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটলেও রাত ১০টার পর সে পালিয়ে যায়। শ্রেণী কক্ষের ওস্তাদ হাফেজ মোঃ জাহেদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় শুক্রবার ক্লাশে এক ঘন্টা বিলম্বে আসায় তাকে একটি বেতের পিটা দিয়ে শাসন করেছি মাত্র। কিন্তু মারাত্মক আহত করার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সজিব এর আগেও একাধিকবার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা তার পরিবার জানেন।
তিনি আরো জানান, সন্ধ্যায় টেকনেশিয়ান ডেকে এনে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সজিব আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় নিচে কনফেকশনারীর ফোম বিছিয়ে সজিব তার বরাবর ৬ তলা ছাদের উপরে কাপড় কেটে রসি বানিয়ে নামার চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে রসিতে ছেছড়ে তার হাতের আঙ্গুলগুলো ছিলে যায় এবং রসি ছিড়ে পড়ে দুই হাতের হাড় ফেটে যায়।
আহত শিশুর মা’ শরিফা আক্তার জানান, আমার ছেলে শুক্রবার রাত ১০টায় মাদ্রাসা থেকে বেড়িয়ে আহত অবস্থায় চান্দিনা উপজেলা সদরে অবস্থান নেয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোনে জানিয়েছে আমার ছেলে পালিয়েছে। সকালে আমার ছেলে ফোনে মারধরের ঘটনা জানায়, সকালে চান্দিনা সদর থেকে এক দম্পতি আমাদের খবর দিয়ে আমার ছেলেকে মারাত্মক আহত অবস্থায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করা হলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষে কয়েকজন যুবক এক্সরে কাগজটি নিয়ে যায়। আবারো এক্সরে করে দুই হাতই হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার প্রমান পাই।
এবিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, ভিক্টিম এবং অভিযুক্ত শিক্ষকের স্বাক্ষ এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।