শফিউল আলম রাজীব।।
কুমিল্লার দেবীদ্বারে জঙ্গলের খুপরিতে ১৭বছর বসবাসের পর হাসপাতালে ঠাঁই নেয়া আলোচিত চিরকুমার মুজিবর(৬০)’র ঘটনার সপ্তাহ পার না হতেই এবার শিকলবন্দী ক্ষত বিক্ষত শরির নিয়ে বাঁশ ঝারের নির্জন খুপরিতে মানবেতর জীবন যাপনকারী ইউনুছ মিয়া(৫৩) নামে আরো এক ব্যক্তির সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। শিকলবন্দি ইউনুছ মিয়াকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করলো উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আলম মিয়ার বাড়ির একটি পরিত্যাক্ত ঘর থেকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় তাকে উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সে একই গ্রামের মোক্তল হোসেনের ছেলে।
এর আগে শুক্রবার (২ জুন) বিকেলে উপজেলার ৬ নং ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের লুতু ভূঁইয়া কমপ্লেক্সের পাশে আলম মিয়ার বাড়ির নির্জন বাঁশঝারের ভেতরে ওই মর্মান্তিক ও অমানবিক দৃশ্যের দেখা মিলে।
ওখানে গিয়ে দেখা যায়, মশা-মাছি দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে ৫ ফুট দৈর্ঘ, প্রস্থ এবং উচ্চতার একটি ছাপড়া, তার উপরে টিনের ছাউনি, এক পাশে প্লাষ্টিক বস্তার বেড়া ৩ পাশ খোলা এবং মশারী টানানো একটি খুপরির ভেতরে পায়ে শিকলবন্দী অবস্থায় বসে আছেন ইউনুছ মিয়া(৫৩) নামে এক ব্যক্তি। তার ডান হাতের আঙ্গুলে পঁচন ধরেছে, দু’হাতই ভাঙ্গা। পরনের কাপড়গুলো গত শীতে শরীরে জড়ানো ময়লাযুক্ত। ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করা হলে তিনি ইউনুস মিয়ার ভাইদের তাকে বাড়িতে আনার নির্দেশ দেন।
ইউনুছ মিয়ার বড় ভাই নূরুল ইসলাম ও স্থানীয়রা জানান, ইনুছ মিয়া সংসার জীবনে একা। প্রায় ২০ বছর পূর্বে বিয়ে করলেও সংসার টিকেনি তার। তারপর থেকে মেঝো ভাই কবির আহাম্মদের সাথেই থাকেন। সম্প্রতি কৌশলে তার সকল সম্পত্তি নিজ নামে লিখিয়ে নিয়েছেন কবির আহমেদ। কবির তাকে প্রায়ই মারধোর করতো। কেউ এগিয়ে গেলে গালাগাল করে মারতে তেড়ে আসতো কবির ও তার ছেলেরা। গত ৮দিন যাবৎ বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে ছোট্ট একটি টিনের ছাউনির ভিতর মশারী টানিয়ে পায়ে একটি শিকল বেঁধে গাছের সাথে তালাবন্ধী করে রাখা হয়েছে ইউনুছকে। মেঝো ভাবীর দেয়া আগুনে পোড়া হাত ও মুখের ক্ষতে ধরেছে পঁচন, দেহে পচন ধরায় দুর্গন্ধে কাছে যায় না কেউ, আসেনা স্বজনরাও। খবর পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় বন্দিদশা থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
ভুক্তভোগী ইউনুছ মিয়া জানায়, তাকে পুড়িয়ে মারতে মেঝো ভাইয়ের স্ত্রী সেলিনা বেগম দেহে আগুন দিয়েছে। মেরে দুই হাত ভেঙ্গে দিয়েছে। ভাই কবির আহমেদ ও তার ছেলেরা ৮দিন যাবৎ তার পায়ে শিকল লাগিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বাঁশঝাড়ের খুপড়ি ঘরে আটকে রেখেছে।
মেঝো ভাই অভিযুক্ত কবির আহাম্মদ জানান, তার ভাই মানষিক ভারসাম্যহীন। ঘরে পায়খানা প্রশ্রাব করে সব নোংরা করে ফেলে। বেধে না রাখলে মার্কেট থেকে গাঁজা কিনে এনে সেবন করে মাতলামী করে। ঘরের ভিতর আগুন ধরিয়ে দেয়। গত শুক্রবারও ঘরে আগুন দেয়। এতে তার হাত পুড়ে যায়। পোড়া ঘর মেরামত করতে তাকে বাঁশ ঝাড়ে ঘর বানিয়ে রেখেছেন। শুক্রবার বিকেলে আবার বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মাসুদ বলেন, আমি শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি জেনে ইউনুছকে বাড়িতে নিয়ে যাবার জন্য তার ভাইকে বলেছি। শোনেছি তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, ইউনুস মিয়াকে শিকলে বেধে রাখার সংবাদে তাকে উদ্ধারে তাৎক্ষনিকভাবে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।