শফিউল আলম রাজীব, দেবীদ্বার :
কুমিল্লার দেবীদ্বারে গত এক সপ্তাহে তীব্র তাপদাহের মধ্যে ব্যাপক লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চলমান রমজানুল মোবারক এবং পবিত্র ইদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবনযাত্রায় তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে মাত্রাতিরিক্ত।
গত শুক্রবার থেকে এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে দেবীদ্বারে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এমন তীব্র তাপদাহের মধ্যে কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই দেয়া হচ্ছে লোডশেডিং ফলে উপজেলার প্রায় সব এলাকায় দিনে কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় দেবীদ্বারে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় এমন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। তীব্র গরমে মানুষ যখন হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫-৬ ঘণ্টা কোথাও কোথাও তারও অধিক লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারনে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। বিদ্যুৎ না থাকায় কুপি বাতি জ্বেলে সন্তানকে পড়াচ্ছেন ‘মা’। অপরদিকে তীব্র তাপদাহে ক্রেতা সংকটে ভুগছেন উপজেলার মার্কেট, ফুটপাতের হকার ও ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা। এমন তাপদাহের মধ্যে অতিরিক্ত লোডশেডিং বাসা-বাড়িতে অবস্থানরত মানুষগুলোও হাঁপিয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় সবথেকে কঠিন সময় পার করছে খেটে খাওয়া দিন মজুর, রিকশাচালক ও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। সারাদিন রোজা রাখার পর রাতে বিশ্রামের সময় লোডশেডিং হওয়ায় মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। অনেকেই ইবাদত ও সেহরি খেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল খোঁজে পাওয়া যায়না। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও তা চাহিদার তুলনায় কম হওয়ায় বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানান শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগ লোডশেডিংয়ের রোস্টার না মেনেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দিয়ে যায়, এমন লোডশেডিং জনজীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। দিন নেই রাত নেই ঘণ্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। রিকশা শ্রমিক রমিজউদ্দীন বলেন, কয়েকদিন ধরে যে গরম পড়ছে তার মধ্যে রিকশা চালানো কঠিন হইয়া গেছে। রিকশা না চালাইলে কী খামু, তাই রিকশা নিয়েই বের হতে হইছে। উপজেলার খলিলপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে। বিদ্যুতের ওপর। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানবাধিকার কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন, একে তো তীব্র গরম, তার ওপর দিনে ও রাতে দফায় দফায় যেভাবে বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে তাতে নাগরিকের জীবন যাত্রা ব্যাহত হওয়াই স্বাভাবিক। এমন তীব্র গরমে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার, তারাবি ও সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ চলে যায় তা অত্যন্ত দুঃখজনক। অতিরিক্ত লোডশেডিং রোধে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া জরুরী।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ-১ দেবীদ্বার জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী দ্বীপক সিংহ বলেন, এটা শুধুমাত্র দেবীদ্বার’র সমস্যা নয়। কয়েকদিন যাবৎ হঠাৎ করেই গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জেনারেশন কম থাকায় চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। দেবীদ্বারে গ্রাহকের চাহিদা পূরনে ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। আমরা পাচ্ছি সর্বোচ্চ ১৫ মেগাওয়াট। তাই আমাদের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। জাতীয় গ্রিডে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাকরছি শিঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে।