নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লার হোমনায় মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)কে কটূক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় মহসিন (৩৫) নামে এক যুবককে আটক করে থানা পুলিশ।
বিষয়টি মুহুর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে প্রতিবাদে থানা ভবন ঘেরাও করে উত্তেজিত হতে থাকে ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ।
পরে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জহিরুল হক জহর ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষ্যামালিকা চাকমা বিষয়টির আইনি সমাধানের আশ্বাস দিলে বুধবার ক্ষুব্দ জনতা শান্ত হয়ে ফিরে যায়।
এঘটনায় রাসূল (সঃ)কে কুটুক্তি ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শরীফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযুক্ত মহসিনকে বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামের ফকির কফিল উদ্দিন শাহ’র নাতি ও আলেক শা’র ছেলে মহসিনের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে।
এদিকে এই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের বাবরকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক উপজেলা জামায়াত ইসলামী নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র কুমিল্লা পশ্চিম অঞ্চল নেতা মাওলানা তাইজুল ইসলামের নেতৃত্বে তৌহিদি জনতার ব্যানারে উপজেলার আসাদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এর পরই উত্তেজিত জনতা দাহ্য পদার্থের মাধ্যমে আসাদপুর ফকির কফিল উদ্দিন শাহ’র মাজার ও বাড়ী-ঘরে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে। পরে উত্তেজিত জনতা নোয়াগাও কালু ফকিরের মাজার, স্কুলের দক্ষিনে অবস্থিত আব্দু শাহ’র মাজার ও পূর্বে হাওয়ালী’র মাজারঘর ভাংগচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় উত্তেজিত জনতার ভয়ে এসব পরিবারের ও আশপাশের লোকজন প্রাণ বয়ে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, হোমনা থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ ব্যবহারের ফলে মুহুর্তেই ঘর-বাড়ী, আসবাবপত্র, বাড়ী-ঘরের দলিল ও ব্যাংকের বিভিন্ন কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জানা যায়, আসাদপুর গ্রামের ফকির কফিল উদ্দিন শাহ’র নাতি ও আলেক শাহ’র ছেলে মহসিনের কন্যা সন্তান নিয়ে প্রতিবেশীরা কুটুক্তি করলে সে তার ব্যবহৃত “বেমজা মহসিন” ফেসবুক আইডি থেকে নিজের সাথে তুলনা করে লিখেন, “যারা আউলিয়া তাদের পুত্র সন্তান হয়,যারা দেওলিয়া তাদের কন্যা সন্তান হয়, নবী মোহাম্মদ খুব খারাপ মানুষ ছিলেন তাই তার পুত্র সন্তান হয়নি বর্তমান পীর সাহেব নবীর চেয়ে বেশি পবিত্র, তাই তাদের পুত্র সন্তান হইছে।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পোষ্ট নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হলে কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোষ্টে জাতীর কাছে ক্ষমা চেয়ে এর ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেন, “প্রথমে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,অনেকে ভাবছেন আমি নবীজিকে খারাপ বলেছি,আসল ব্যাপার হলো আমার পুত্র সন্তান নাই,৩ টা মেয়ে,আমাকে অনেকে খোটা দেয়,প্রায় লোকেই বলে খারাপ মানুষের ছেলে হয়না,এজন্য আমি বলেছি যে নবীজীর তো ছেলে ছিলনা,তাহলে কি তিনিও খারাপ,এই কষ্ট থেকে কথাটা এভাবে লিখেছি,আপনারা কেউ ভুল বুঝবেন না,আমি নবীকে আমার নিজের থেকে বেশি ভালবাসি,সকলেই আমাকে মাফ করবেন,কারণ আমি একজন বাবা,সন্তান নিয়ে খোটা দিলে আমার ও খারাপ লাগে,।”
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত মহসিন তার “বেমজা মহসিন” নামক আইডিতে বুধবার সকাল ১০টা ৫২মিনিটে নবী (স.) নিয়ে কটুক্তি করে পোস্ট দেন। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ করলে পুলিশ অভিযুক্ত মহসিনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কারো কোন ইন্ধন আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক জহিরুল হক জহর বলেন, গতকাল আমি থানার সামনে বিক্ষুব্ধ জনগণকে শান্ত শিষ্ট থাকার আহ্বান করেছি,অভিযুক্তকে আটক করেছে। আইন অনুযায়ী আজ না হয় কাল বিচার হবেই। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো আবার একটু বোশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এসব করা একেবারেই ঠিক হয়নি। এগুলো আমি সমর্থন করি না।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি হোমনা অঞ্চল) মোঃ আব্দুল করিম জানান, আমরা গতকালই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক রাখতে অভিযুক্তকে আটক করেছি, মামলা নিয়েছি, রিমান্ড চেয়ে জেল হাজতেও পাঠিয়েছি। তবে আজকে সকাল খবর পেয়ে আমরা দ্রুতই পদক্ষেপ গ্রহণ করি ও ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু উত্তেজিত জনতা চারিদিক থেকে আক্রমন করে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। এ বিষয়েও প্রশাসন বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বর্তমান ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।