নেকবর হোসেন:
কুমিল্লা শহরকে যানজটমুক্ত ও সবধরণের যানবাহন চলাচলে একটি নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্যে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরুর মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের সুবিধাভোগীদের রোষানলে পড়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া। এর আগে কুমিল্লা জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা ডিএসবিতে দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের জায়গাটি অনেক শক্তিশালী করে তুলেন।
দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা শহর, শহরতলী ও উপজেলাগুলোর যানজট চিত্র এতোতাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, এই ত্রাহি অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে অন্তত কিছুটা স্বস্তি দিতে নতনু দায়িত্বে আসা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার পরিকল্পনা শুরুর আগে তা থেমে গেছে।কারণ হিসেবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের অনৈতিক সুবিধা নিতো তারাই একটি সুন্দর পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখতে দেয়নি। উপরুন্তু এই কর্মকর্তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারে পরিণত করেছে। এনিয়ে কুমিল্লার সুশীল সমাজ ও পরিবহন নেতারা বিষয়টিকে দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
জানা গেছে, জেলা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা যানজট নিরসনের কার্যক্রমে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ের সকল যানজট নিরসন প্রতিনিধিদেরকে সার্বিক সহায়তা প্রদান এবং গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এসব নির্দেশনা মোতাবেক কার্যক্রম করতে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের শহর কুমিল্লায় ট্রাফিকের ডিউটি সুচারুভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা সার্বক্ষনিক নজরদারিতে রাখেন এবং কড়াকড়ি আরোপ করেন। আইন অমান্যকারী চালকদের সড়ক পরিবহন আইনের আওতায় আনার জন্য নিয়মিত মামলা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি তার পরিকল্পনায় উল্লেখ করেন, কুমিল্লা শহরে প্রায় ৪০ হাজার অনিয়ন্ত্রিত ও অনিবন্ধিত ইজিবাইক, মিশুক চলাচল করায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে শহরকেন্দ্রিক ধারন ক্ষমতা অনুসারে ৬ হাজার ইজিবাইক, মিশুক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট সভাগুলোতে উত্থাপন করেন। বাকি বাহনগুলো শহরের বাইরে চলাচলের জন্য ৮টি সীমারেখা পোষ্ট স্থাপনের একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। এছাড়াও কুমিল্লা শহরে ৪টা বাসস্ট্যান্ড থাকায় প্রচুর পরিমাণ বাস শহরে প্রবেশ করে। সরু রাস্তায় একদিকে বাস, অন্যদিকে ইজিবাইক, মিশুক চলাচলে জনজীবন চরম দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। যেখানে সেখানে সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি হিসেবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উঠিয়ে দেন। অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা সহ শহরের রাস্তায় স্বল্প পরিমাণ ইজিবাইক, মিশুক চলাচলের ওপর শক্ত অবস্থানে থাকায় অবৈধ, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন থেকে সুবিধাভোগীদের স্বার্থে আঘাত লাগে। আর তখনই এই স্বার্থান্বেষী মহলটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমমুখি দাঁড় করায়। আর এর মধ্যদিয়েই যানজট নিরসনের একটি সুন্দর পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখার আগেই নিভিয়ে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, কুমিল্লায় যানজট নিরসনে যে উদ্যোগগুলো অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া নিয়েছিলেন, এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল।কিন্তু হঠাৎ করে ওনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে একটি মহল। এটি দু:খজনক। তিনি অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে যানজট নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। যানজট নিরসনে আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি সবাই ওনার উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানিয়েছি এবং আমাদের সহযোগিতাও ছিল। ভালো কাজে বাধা থাকেই, তবে আমি মনে করি সমাজে ভালো কাজ করার মানুষদের যেনো আমরা থামিয়ে না দেই।
জানতে চাইলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. শামীম কুদ্দুছ ভূঁইয়া বলেন, দ্বায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি কুমিল্লাকে যানজট মুক্ত রাখতে। নগরীর সড়কগুলোতে অন্তত ১০ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল জনবল নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সামলাতে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে যানজটের কারণে অফিসগামী মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট না হয়। যাতে যানজট ঠেলে ঘর্মাক্ত শরীরে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছতে না হয়। তিনি আরও বলেন, ভালো কাজে অনেক সময় বাধা আসে, আমি সব প্রতিবন্ধকতা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছি।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও যানজট নিরসন নিয়ে কাজ করা মানবিক কুমিল্লার চেয়ারম্যান উদবাতুল বারী আবু বলেন, সঠিক তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণ ছাড়া যেকোন সংবাদই সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। যানজট নিরসনের একটি সুন্দর উদ্যোগ মিথ্যাচার ও অনৈতিক সুবিধাভোগীদের কারণে থেমে যেতে দেওয়া যাবেনা। এসব মিথ্যা সংবাদের নেপথ্যের কারিগরদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া উচিত।