1. support@dainikcumilla.com : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. ghossaintamzid@gmail.com : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. admin@dainikcumilla.com : unikbd :
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস - Dainik Cumilla
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস কুসিকের প্রধান নির্বাহী সামছুল আলমকে অবমুক্ত করল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কুমিল্লায় বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু নাঙ্গলকোটের হোমনাবাদ আদর্শ কলেজ গভর্নিং বডি সভাপতি জাফর সাদিক, বিদ্যোৎসাহী আবু ইউনুস হাসান মানিক ব্রাহ্মণপাড়ায় পুকুর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধার মরদেহ উদ্ধার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ঘোষিত নাগরিক সেবামূল্য স্থগিত কুমিল্লায় তেল কম দেওয়ায় একটি পেট্রোল পাম্প সিলগালা করল বিএসটিআই চান্দিনায় কিশোর কর্মচারীর গায়ে ভাতের গরম মাড় ঢেলে দিল বাবুর্চি স্কেলের আঘাতে শিশুর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত: কুমিল্লার সেই স্কুলশিক্ষক গ্রেপ্তার নাঙ্গলকোটে বিএনপির সম্মেলনে সন্ত্রাসী হামলায় আহতদের পাশে বিএনপি, কমিটি বাতিল

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস

  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
  • ৪১ বার পঠিত

ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় খোসপাঁচড়া জাতীয় ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস ছড়িয়ে পড়ছে। এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সী মানুষ। এ রোগ প্রতিরোধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা না থাকায় আক্রান্ত রোগীর পর আক্রান্ত হচ্ছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। যার ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি চিকিৎসালয়গুলোতে বাড়ছে রোগীর চাপ।

তবে ছোঁয়াচে এ রোগের সংক্রমণে আতঙ্কিত না হয়ে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতায় এ রোগ থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। তবে এ রোগের চিকিৎসা না নিয়ে অবহেলা করলে কিডনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনার কথাও বলছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং উপজেলার বিভিন্ন চিকিৎসালয় ঘুরে রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল বছরের আগস্টে এই উপজেলা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যার দূষিত পানির ফলে বন্যা-পরবর্তী সময় থেকেই এই উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে চর্মরোগ দেখা দেয়। সেজন্য স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগী আগেও ছিল। তবে বর্তমান অবস্থার মতো এতোটা ভয়াবহ ছিল না। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া জাতীয় ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবেই এটি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগী। আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে অন্যান্য ডিজিজও রয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বেসরকারি চিকিৎসালয়গুলোতেও প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে অনেকেরই ভালো হয়েও আবারও আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। এর কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, স্ক্যাবিস একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবী চর্মরোগ। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামক এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে এ রোগ হয়। চর্ম রোগগুলোর মধ্যে স্ক্যাবিস রোগই বেশি ছোঁয়াচে। এই রোগটির প্রাদুর্ভাব সাধারণত গরমকালে দেখা দিলেও এখন এর প্রাদুর্ভাব সারাবছরই দেখা যায়। এই রোগ একজন থেকে আরেকজনের শরীরে দ্রুত সংক্রমিত হয়। এটি সঠিক চিকিৎসায় প্রতিরোধযোগ্য। তবে সঠিক চিকিৎসা না হলে এ রোগে আক্রান্ত রোগী কিডনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এ রোগের প্রাদুর্ভাবের পেছনে এ রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধ সম্মন্ধে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব।

চার বছর বয়সী স্ক্যাবিস আক্রান্ত সিনথিয়া জান্নাত নামের এক শিশুকে চিকিৎসা করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে নিয়ে এসেছেন তার মা বিলকিস আক্তার। রোগীর মা বিলকিস আক্তার বলেন, কয়েকদিন আগে আমার মেয়ের হাতে ও শরীরের কিছু জায়গায় লাল লাল গোটা বের হয়। পল্লী চিকিৎসক থেকে নিয়ে ওষুধ ও ক্রিম লাগিয়েছিলাম, কিন্তু ততটা আরোগ্য পাওয়া যায়নি। তাই সরকারি হাসপাতালে টিকিট কেটে চিকিৎসা করাতে এসেছি। ডাক্তার বলেছে এটি স্ক্যাবিস জনিত চর্মরোগ। ওষুধ লিখে দিয়েছে, বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে ১৪ বছর বয়সী জিসানকে নিয়ে এসেছেন তার বাবা আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের দুই হাতের কবজিতে ছোট ছোট লাল গোটা বের হয়েছে। এগুলো খুব চুলকায়। রাতে সে চুলকানির জন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। তাই আজকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার খাওয়ার ওষুধ, ক্রিম ও লোশন দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে ভালো হয়ে যাবে। তবে এ রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে আমাদের পরিবারের সবাইকে এ রোগের চিকিৎসা নিতে বলেছেন।

উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের লাড়ুচৌ এলাকা থেকে তেইশ মাস বয়সী তানহাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে নিয়ে এসেছেন তার বাবা আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন আগে তানহার আঙুলের ফাঁকে ও তালুতে চুলকানি রোগ দেখা দিয়েছে। ছোট ছোট লাল গোটা থেকে পানি বের হয়। বাড়ির পাশের ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ ও ক্রিম লাগিয়েছিলেন। আরোগ্য না দেখে সরকারি হাসপাতালে এসেছেন মেয়ের চিকিৎসা করাতে।

উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের জামতলী এলাকার ১২ বছর বয়সী আমেনা আক্তার স্ক্যাবিস নিয়ে এসেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে। তার কনুইর ভাঁজে স্পষ্ট হয়ে আছে স্ক্যাবিস আক্রান্তের চিহ্ন। চিকিৎসক তাকে চিকিৎসাপত্র ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন। আমেনা আক্তার বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে এই গোটার যন্ত্রণা ভোগ করছি। দিনের বেলা যেমনতেমন রাতে এগুলো অনেক চুলকায়। ডাক্তার চিকিৎসা দিয়েছেন, বলেছেন নিয়মকানুন মেনে চিকিৎসা চালালে ঠিক হয়ে যাবে।

চিকিৎসকরা জানান, স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীদের কোমর, হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে, নিতম্বে, যৌনাঙ্গে, ঘাড়, হাতের তালু ও কবজিতে, বগলের নিচে, কনুই ও নাভিতে এ রোগের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এছাড়া শরীরের অন্যান্য স্থানেও এ লক্ষণ দেখা দেয়। আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট লাল দানাদার র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠে। আক্রান্ত স্থান খুব চুলকায়, সাধারণত রাতে বেশি চুলকায়। আক্রান্ত এসব স্থান থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হতে পারে।

স্ক্যাবিস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে চিকিৎসকরা জানান, প্যারাসাইটটা ( সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া) মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্ক্যাবিস রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। ছোঁয়াচে এ রোগটির সংক্রমণ প্রতিরোধে সুস্থ ব্যক্তিদের আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে। অপরদিকে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত রোগীসহ রোগীর সংস্পর্শে আসা পরিবারের অন্য সদস্যদেরকেও একযোগে চিকিৎসা নিতে হবে। অবশ্যই এ রোগ নিয়ে অবহেলা করা চলবে না।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. শঙ্খজিৎ সমাজপতি বলেন, স্ক্যাবিস সাধারণত গরম মৌসুমে দেখা যায়। তবে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখন সারাবছরই এই রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অধিকাংশ রোগীই রোগটা কমে গেলে কোর্স কমপ্লিট না করে মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে রোগটা আবারও রিকারেন্ট করে। এভাবে বার বার আক্রান্ত হওয়ায় ফলে রোগীরা কিডনি জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু বয়স্করা নয় শিশুরাও এই ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই এই জটিলতা থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের দেওয়া চিকিৎসাপত্র ও উপদেশ মানাটা জরুরি।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শেখ হাসিবুর রেজা বলেন, স্ক্যাবিস একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবী চর্মরোগ। এটি সারকোপটিস স্ক্যাবিয়া নামক এক ধরনের পরজীবীর আক্রমণে হয়ে থাকে। এটি ছোঁয়াচে জাতীয় রোগ। তাই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।

তিনি বলেন, বছরের এই সময়টায় এ রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি দেখা যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগী ও রোগীর স্বজনদের রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা, ওষুধ এবং রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও একসাথে চিকিৎসা নিতে হবে। ব্যবহৃত কাপড় ও বিছানার চাদর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তবেই এ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD