নেকবর হোসেন
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এমপি বাহারের অনুসারী ডজনখানেকের বেশি জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় নাগরিক সেবার এমন হাল হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা।
এদিকে কুসিকের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
প্রশাসক নিয়োগের ফলে মেয়রের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও তৃণমূল পর্যায়ে নাগরিকরা এখনো অনেকটাই সেবাবঞ্চিত। কারণ নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে আওয়ামী লীগসমর্থিত ডজনখানেকের বেশি জনপ্রতিনিধি ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে।
এমন পরিস্থিতিতে নাগরিক সেবা স্বাভাবিক রাখতে আশপাশের ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলরদের আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধির ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুসিক কর্তৃপক্ষ। তবে নগরবাসী বলছে, অন্য ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দিয়ে আগের মতো সঠিক সেবা পাবে না নাগরিকরা।
নির্দিষ্ট কাউকে ওই সব ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
কুসিকের একাধিক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার নন্দনপুরে মাসুম মিয়া নামের এক হোটেল কর্মচারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত ১৯ আগস্ট কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় হওয়া প্রথম হত্যা মামলায় আসামি হন সাবেক মেয়র সূচনাসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। এখন পর্যন্ত চারটি মামলায় সাবেক মেয়র সূচনাকে আসামি করা হয়।
সূচনার সঙ্গে কুমিল্লা কোতোয়ালি ও কুমিল্লা সদর দক্ষিল মডেল থানায় দায়ের করা পৃথক মামলায় আসামি হওয়া কুসিকের এক ডজনেরও বেশি কাউন্সিলর এখন এলাকাছাড়া। মামলায় আসামি হওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জমির উদ্দিন খান জম্পি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আজাদ হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসান, ২ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মঞ্জুর কাদের মনি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রায়হান আহমেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুস সাত্তার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আমিনুল ইসলাম ইকরাম, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের হানিফ মাহমুদ, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের এমদাদ উল্লাহ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শওকত আকবর এবং সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর কাউসারা বেগম সূমি। এঁদের সবাই সাবেক এমপি বাহার ও তাঁর মেয়ের সূচনার অনুসারী এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ড ও পাশের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুজনই অনেক আগে থেকেই একাধিক হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর আগেও তাঁরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে মাসের পর মাস কারাগারে ছিলেন।
তখনো নাগরিক সেবা স্থবির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন নতুন করে মামলার আসামি হয়ে তাঁরা আত্মগোপনে রয়েছেন। ৫ আগস্টের পর এক দিনের জন্যও তাঁদের দেখা যায়নি। দুই ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা বন্ধ থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর মোঃ রাজিউর রহমান রাজিব জানান, অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের এলাকায় চলমান উন্নয়নকাজ তদারকি করার জন্য কাউন্সিলরদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটির সদস্যরা তাঁদের কাজ শুরু করেছেন।
কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলম বলেন, ‘গত ২৮ আগস্টের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে নাগরিক সেবায় ভোগান্তি নিরসনে অনুপস্থিত বা আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের পরিবর্তে বিধি মোতাবেক পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে যাঁরা আত্মগোপনে আছেন, তাঁদের ওয়ার্ডে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এতে মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি দূর হবে।’