নেকবর হোসেন :
কুমিল্লা নগরীর টানা বৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু সমান বৃষ্টির পানি উপেক্ষা করে চলাফেরা করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুদিনও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে কুমিল্লাতে রোববার সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ভোরবেলা থেকে একটানা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে নগরীর কান্দিরপাড় থেকে রাণীরবাজারমুখী সড়ক, শিক্ষা বোর্ড, সালাউদ্দিন মোড়, জিলা স্কুল থেকে ঈদগাহ মোড়, অশোকতলা মোড় এলাকা, পুলিশ লাইন, রেসকোর্স, বাগিচাগাঁও, ভাটপাড়া, ধানমন্ডি, বিসিক এলাকা, ঠাকুরপাড়া, দক্ষিণ চর্থা, সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে হাঁটু পানিও জমেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। ছাতা নিয়ে বের হয়ে কিংবা হাঁটু সমান প্যান্ট তুলেও রেহাই মিলছে না পথচারীদের।
নগরবাসীর ক্ষোভ, সঠিক সময়ে সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা গেলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। বিভিন্ন রাস্তা ও ড্রেনের কাজ ধরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করায় সেসব জায়গাগুলোতে ইট-বালু-সিমেন্ট জমে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে আছে।
নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেট ও নজরুল এভিনিউ এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই দুই জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসনে কখনোই কোনো পরিকল্পনা মতো কাজ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। বৃষ্টি হলেই এসব এলাকার মানুষজনকে জলাবদ্ধতার অসুবিধা মাথায় নিয়েই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। পানি উঠে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল এবং গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে প্রতি বছরই। এখানকার সমস্যা নিরসনে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
নগরীর কান্দির পাড়ের বাসিন্দা লিটন দাস বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা কুমিল্লার নগরীর প্রধান সমস্যা। পরিকল্পনা করে উন্নয়ন না হওয়ায় কুমিল্লাবাসী এ সমস্যা থেকে মুক্তি পায় না।’
মোগলটুলী হাই স্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা মুন্সী বলেন, ‘কুমিল্লা হাই স্কুলের পেছনে রাস্তাটি গত ৫ থেকে ৬ মাস ধরে উন্নয়ন কাজ চলছে। কিন্তু এটি শেষ করতে এতদিন লাগার কথা নয়। বৃষ্টি হলেই এখন নির্মাণের জন্য খানাখন্দগুলোতে পানি জমে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এলাকাবাসী সাময়িক সময়ের জন্য কোনো রকম পানি সরিয়ে দিলেও আবার বৃষ্টি হলে পানি জমে ভোগান্তি তৈরি হয়।’
এদিকে, সড়কে পানি জমে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে দিগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে নগরবাসীকে। কোনো কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বিভিন্ন এলাকায় রিকশা, অটোরিকশা ইজিবাইক কিছুই যাতায়াত করতে চায় না। বৃষ্টির মধ্যে হেঁটেই দীর্ঘ পথ যেতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
কুমিল্লা নগরীর ধর্মপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ এলাকা থেকে কান্দিরপাড় এলাকায় অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, এখান থেকে কান্দিরপাড় পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা, কিন্তু বৃষ্টিতে কান্দিরপাড়ে পানি জমায় সেখানে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।
কান্দিরপাড় এলাকায় কথা হয় বিশ্বরোড থেকে আসা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বরোড থেকে কান্দিরপাড় সিএনজিতে ২০ টাকা নিয়মিত ভাড়া। কিন্তু, বৃষ্টির কারণে সেটা ৩০ টাকা হয়ে গিয়েছে এখন। কি আর করব, গন্তব্যে তো পৌঁছাতে হবে।’
কান্দিরপাড় থেকে ছোটরা-কালিয়াজুরিগামী অটোটিকশা চালক মহসিন মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে দুবার কুমিল্লা স্টেডিয়ামের সামনে রাস্তায় ইঞ্জিনে পানি লেগে অটোরিকশা আটকে গেছে। কোনোরকম ঠিক করে চালাচ্ছি। গ্যারেজের ভাড়া উঠানোও আজ কষ্ট হবে।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম জানান, সম্প্রতি ঠিকাদারদের তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। টানা বর্ষণ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক ও ড্রেনেজের সকল কাজ শেষ করার জন্য তাদের বলা হয়েছে।
আর মাল্টিপারপাস অ্যাডভোকেসি ফোরামের কুমিল্লা জেলা সভাপতি বদরুল হুদা বলেন, ‘যেসব উন্নয়ন কাজের জন্য পানি অপসারণের পথ বন্ধ হয়ে আছে সেগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ঠিক করে জলাবদ্ধতা সাময়িক নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে সিটি করপোরেশন। তবে আমরা চাই এই নগরী স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা মুক্ত হোক।’
কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া অফিস প্রধান সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, এমন বৃষ্টিপাত আরও দু–একদিন থাকতে পারে। লঘুচাপের কারণে মেঘমালা তৈরি হয়েছে, যার ফলে এমন টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরও দু-এক দিন এভাবে ভারী বর্ষণ হতে পারে।