1. support@dainikcumilla.com : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. ghossaintamzid@gmail.com : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. admin@dainikcumilla.com : unikbd :
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
চৌদ্দগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে পড়ে, নিহত ৫ এক দফা দাবিতে কুবি শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর পক্ষে নাইঘর বাসীর একাত্মতা প্রকাশ ধর্ম অবমাননার দায়ে কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার চৌদ্দগ্রামে ৫০ কেজি গাঁজাসহ আটক ১ দেবীদ্বারে আনোয়ারাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার দায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড বরুড়ায় বই ও কসমেটিক বিক্রেতাকে হত্যার দায়ে স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড, স্বামী’র কারাদণ্ড চৌদ্দগ্রামে ইটভাটায় নারী শ্রমিকের আত্মহত্যা কুমিল্লায় ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হজ্ব যাত্রীদের সেবায় ভিক্টোরিয়া কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা

বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা বা নামাজ

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪
  • ৭৩ বার পঠিত

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।

বৃষ্টি মহান আল্লাহ পাকের রহমত এবং বিশ্ববাসীর জন্য আশীর্বাদ। বৃষ্টি হয় বলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। বৃষ্টি একদিকে মৃত জমিতে প্রাণ সঞ্চারিত করে শস্য উৎপাদনের উপযোগী করে তোলে, মানুষ এবং জীবজন্তু খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছে। অপরদিকে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে জমা হয়ে পৃথিবীবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে। এই সত্যের দিকে নির্দেশ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, এরপর তা মেঘ সঞ্চারিত করে, এরপর আমি তা চালিয়ে নিয়ে যাই এমন ভূখণ্ডের দিকে, যা (খরার কারণে) নির্জীব হয়ে গেছে। তারপর আমি তা দিয়ে ভূমিকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় সঞ্জীবিত করি।’ (সুরা ফাতির: ৯)

অনেক সময় মানুষের পাপের কারণে অথবা মহান প্রভুর অন্য কোনো হিকমতের কারণে পৃথিবীতে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। বৃষ্টির মৌসুমেও বৃষ্টি হয় না। জমি শুকিয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গাছপালা মরে যায়। ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যায়। এভাবে খাদ্য ও পানির অভাবে চরম দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। তখন পৃথিবীবাসী নিজ নিজ বিশ্বাস ও রীতি অনুসারে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে। আর মুমিনরা বৃষ্টির একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে এবং বিনয়াবনত হয়ে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে। এটাকেই বলা হয় ইসতিসকা বা বৃষ্টির প্রার্থনা।

পূর্ববর্তী নবীদের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা:

রাসুল (সা.)-এর আগেও নবী-রাসুল ও মুমিনগণ আল্লাহর কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে এসেছে। যেমন নুহ (আ.)-এর কওমের ক্রমাগত আল্লাহর নাফরমানির শাস্তি স্বরূপ যখন আল্লাহ বৃষ্টি বন্ধ করে দিলেন, তখন নুহ (আ.) তাদের বৃষ্টি প্রার্থনার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের কাছে গুনাহ ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি মহা ক্ষমাশীল। তখন তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (তাফসিরে কুরতুবি, সুরা নুহ: ১০-১১)

বনি ইসরাইল যখন পানি সংকটে পড়ল, তখন মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে পানির জন্য প্রার্থনা করলেন। পবিত্র কোরআনে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যখন মুসা তার জাতির জন্য পানি প্রার্থনা করল, তখন আমি বললাম, তোমার লাঠি দিয়ে পাথরটিকে আঘাত করো। তখনই সে পাথর থেকে ১২টি পানির ধারা জারি হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা: ৬০)।

একইভাবে একদিন সোলায়মান (আ.) লোকজন নিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করার জন্য বের হলেন। তখন তিনি দেখলেন, একটি পিঁপড়া চিৎ হয়ে শুয়ে দোয়া করছে, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার অন্যতম মাখলুক। তোমার বৃষ্টি ও রিজিকের আমার খুব প্রয়োজন। সুতরাং হয় বৃষ্টি বর্ষণ করুন, নয়তো আমাকে মৃত্যু দান করুন।’ এটা শুনে সোলায়মান (আ.) লোকজনকে বললেন, ‘ফিরে যাও। অন্য মাখলুকের দোয়ার বরকতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে।’ (দারাকুতনি, ইবনে আসাকির) ।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর যুগে বৃষ্টি প্রার্থনা:

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ প্রয়োজনের সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। সাধারণ দোয়া-ইসতিগফার ও বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইসতিসকা)—এ দুই পদ্ধতিতে বৃষ্টি প্রার্থনা করার কথা বর্ণিত আছে।

দোয়ার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা:

হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, জুমার দিন রাসুল (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, ‘ (অনাবৃষ্টির কারণে) মাল-সম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দোয়া করুন , যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দান করেন। রাসুল (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের বৃষ্টি দান করুন।’ আনাস (রা.) বলেন, দোয়ার পরপরই আকাশে মেঘ ছেয়ে গেল এবং অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামল। (বুখারি ও মুসলিম)।

নামাজের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা:

খরা দেখা দিলে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম খোলা ময়দানে গিয়ে ঈদের নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এরপর কিবলামুখী হয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে কান্নাকাটি করে দোয়া করতেন। একেই সালাতুল ইসতিসকা বলা হয়। বিশিষ্ট ফকিহ ইবনে আবদুল বার বলেন, সব আলিম এ বিষয়ে একমত যে অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষের সময় সালাতুল ইসতিসকা পড়া সুন্নত। (আত তামহিদ)।রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম সালাতুল ইসতিসকা পড়েছেন—এমন অসংখ্য বর্ণনা এসেছে হাদিসের কিতাবগুলোতে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন রাসুল (সা.) বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হলেন। এরপর আমাদের নিয়ে আজান-ইকামত ছাড়া দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজের পর খুতবা দিলেন এবং কিবলার দিকে ফিরে হাত তুলে দোয়া করলেন। এরপর চাদরের ডানের অংশ বাঁয়ে এবং বাঁয়ের অংশ ডানে পরিবর্তন করে দিলেন। (আহমদ, ইবনে মাজাহ)।

সাহাবিদের যুগে বৃষ্টি প্রার্থনা:

হযরত সাবিত আল বুনানি বর্ণনা করেন, আনাস (রা.)-এর জমির তত্ত্বাবধায়ক এসে বললেন, অনাবৃষ্টির কারণে আপনার জমি তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছে। তখন আনাস (রা.) চাদর জড়িয়ে খোলা ময়দানে গেলেন এবং নামাজ আদায় করে দোয়া করলেন। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি নেমে এল। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)।

শাবি বর্ণনা করেন, একদিন ওমর (রা.) বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে বের হলেন। কিন্তু শুধু অধিকহারে ইসতিগফার (গুনাহ ক্ষমা চাওয়া) ছাড়া আর কিছুই করলেন না। লোকেরা বলল, ‘আপনি ইসতিসকা (বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা) করলেন না যে?’ তিনি বললেন, ‘যে বস্তু আকাশ থেকে বৃষ্টি নামিয়ে আনে (অর্থাৎ ইসতিগফার), আমি তার মাধ্যমে বৃষ্টি চেয়েছি।’

প্রিয় পাঠক ও সুধী মন্ডলী আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতের বারিধারা থেকে ভিক্ষা মাগি রাব্বুল আলামীন যেন আমাকে এবং সমগ্র মুসলিম জাতিকে কল্যাণ দান করেন। দেখুন, যুগে যুগে,কালে কালে তিনি তাঁর বান্দাকে নানা ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং সময় সময় বান্দা যখন মহান আল্লাহ কে ভুলে অন্যায়,অত্যাচার,অবিচার, ব্যভিচার,পাপাচারে লিপ্ত হয়ে মহান আল্লাহ কে ভুলে অন্যায় অত্যাচার করতে থাকে তখন আল্লাহ তায়ালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী,বন্যা, খরা সহ বিভিন্ন বিপর্যয় দিয়ে বান্দাকে অন্যায় অবিচার, ব্যভিচার, পাপাচার থেকে বেরিয়ে এসে মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগী করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এইতো দেখুন,করোনা ভাইরাস মহামারী বিশ্ববাসীকে আঙুল দিয়ে কি দেখিয়ে গেল? এখন আমরা মুখোমুখি তাপদাহের। প্রচন্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এসব কিছু থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই আমাদের সকলকে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ করতে হবে,ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁর গোলামী করতে হবে,অন্যায় -অবিচার,পাপাচার ছেড়ে দিয়ে -মহান আল্লাহ তায়ালা ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ ও মতে চলতে হবে। আর তাতেই আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে জীবন শান্তি এবং কল্যাণময় হবে, ইনশাআল্লাহ। ।

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন কুমিল্লা

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD