চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ৮ বছরের এক শিশুকে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মো. ইয়াছিন ডাক্তার নামে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত ইয়াছিন উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের চাঁন্দকরা উত্তরপাড়ার মৃত মইধর আলীর ছেলে ও স্থানীয় একতা বাজারের পল্লী চিকিৎসক। ভিকটিম একই ইউনিয়নের স্থানীয় একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি শিশুর মা বাদী হয়ে থানায় মামলা (নং-৩০/১৬.০৯.২০২৫ খ্রি:) দায়ের করেছেন। আটককৃত ব্যক্তিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ছানা উল্লাহ। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের চাঁন্দকরা উত্তরপাড়ায় ঘটনার দিন কিছু লোক মাছ ধরছিলো। এ সময় নানার বাড়ীতে বসবাস করা ভিকটিম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বাহেরগড়া পাটোয়ারী বাড়ির বাবলু পাটোয়ারীর মেয়ে হাবিবা আক্তার (৮) স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. ইয়াছিনের বাড়ীর পাশের ক্ষেতে মাছ ধরা দেখতে যায়। এ সময় পেয়ারা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ইয়াছিন তাকে জনৈক মাওলানা আব্দুল কাদেরের একটি পরিত্যাক্ত বাড়ীতে ডেকে নিয়ে যায় এবং গাছ থেকে ৩টি পেয়ারা পেড়ে শিশুটিকে দেয়। পরে কৌশলে তাকে ওই বাড়ির একটি পরিত্যাক্ত রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে সেখানে থাকা চৌকির উপর শোয়ায়। এ সময় সে শিশুটির পরনে থাকা জিন্স প্যান্ট খুলে তার শ্লীলতাহানি সহ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় শিশুটি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলে অভিযুক্ত ইয়াছিন শিশুটিকে ছেড়ে দেয়। পরে সে দৌড়ে ওই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যায়। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ভিকটিম শিশু তার মাকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি খুলে বলে। ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক নিজ চেম্বারে না বসে আড়ালে চলে যান। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এলাকার সামাজিক প্রভাবশালী লোকজন কয়েক দফা বৈঠকে বসে। পরে গত মঙ্গলবার বিকালে ভিকটিমের মা হাজেরা আক্তার বাদী হয়ে মো. ইয়াছিনকে আসামী করে চৌদ্দগ্রাম থানায় এজাহার দায়ের করিলে থানা পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে থানায় মামলা রুজু করে। পরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী হাজেরা আক্তার বলেন, ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। আমি থানায় মামলা করেছি। আসামীকে আটকের পর আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক মো. ইয়াছিন এর স্ত্রী নাছরিন সুলতানা কান্নাজিড়ত কন্ঠে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। এ ঘটনায় আমাদের পরিবারের মান-সম্মান শেষ। যেহেতু থানায় মামলা হয়েছে এবং আমার স্বামীকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সেজন্য আমরা আদালতের মাধ্যমে উনার জামিনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আদালতের মাধ্যমেই বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে যাচাই-বাছাই করার পর ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।