সাকলাইন যোবায়ের।।
ভাষাসৈনিকদের অন্যতম একজন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তিনি। মূলত তিনিই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের বীজবপণকারী। পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবকারী তিনি। অথচ বাংলার এই সূর্যসন্তানের স্মৃতিবিজড়িত একমাত্র বাড়িটি প্রশাসনের অবহেলা আর উত্তরাধিকারীদের ইতিবাচক সাড়ার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, গণপরিষদে একটি ছোট সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। মূল প্রস্তাবে বলা হয়েছিল—ইংরেজির সঙ্গে উর্দুও পাকিস্তান গণপরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে বিবেচিত হবে; ধীরেন্দ্রনাথের সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, সেই সঙ্গে বাংলাও পরিষদের সরকারি ভাষারূপে গণ্য হবে।
তিনি সংশোধনীটি দেন ২৩ ফেব্রুয়ারিতে। আর তা গণপরিষদে আলোচিত হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি।
এ আলোচনার আগে মুসলিম লীগের সংসদীয় দলের সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল এবং তিনি ও মুসলিম লীগ দলীয় আরো কোনো কোনো সদস্য—তাঁদের মধ্যে উর্দুভাষী সদস্যও ছিলেন—তা সমর্থন করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটে তারা হেরে যান এবং সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় ওই সংশোধনীর পক্ষে কিছু না বলার জন্যে।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন একাধারে আইনজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। তার জীবন ছিল বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্রময়।
নগরীর ঝাউতলার এ ভাষাসৈনিকের বাড়িটি এখন ময়লা আবর্জনায় সয়লাব। বাড়িটির দক্ষিণ পাশে হাসপাতালের বর্জ্য, অন্যপাশে নালার দুর্গন্ধযুক্ত কালো পানি, মাঝে টিনশেডের একটি ঘর, তার পেছনে জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে চারকক্ষবিশিষ্ট ভবনটি, যা একেবারে জরাজীর্ণ! টিনশেডের ঘরটির চালও ফুটো, যেটি বৈঠকখানা হিসেবে ব্যবহার করতেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। আর বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই জমে হাঁটু পানি। চরম অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা বাড়িটির সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ আজও কেউ নেয়নি। ২০১০ সালে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বাড়িটি পরিদর্শন করে এখানে ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ বছরেও সেই আশ্বাস পূরণে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে।
কুমিল্লার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের দাবি, এই ভাষাসৈনিকের স্মৃতিরক্ষার্থে বাড়িটি সংস্কার, সংরক্ষণ করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত জাদুঘরে রূপান্তর করা হোক।