মো: ওমর ফারুক মুন্সী :
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। সোমবার ফতেহাবাদ ইউনিয়নে অন্তত ১৮টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী গ্রামের মানুষদের বিভিন্ন স্কুলের আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার (২৬ আগষ্ট) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে একাকার। ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড়া,বিষ্ণুপুর, জগন্নাথপুর, সুলতানপুর, দক্ষিণ ফতেহাবাদ, খলিলপুর, জয়পুরসহ অধিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কোথায়ও চার ফুট, কোথায়ও ছয় ফুট পানি। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের চারপাশে পানিতে টুইটম্বুর। মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারছেন না। স্কুলে আশ্রয়ন কেন্দ্রে হওয়ায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান। তলিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমিও। অপরিপক্ক ধানগাছ কেটে গরুর খাবারের জন্য নিয়ে আসছেন কৃষকরা। ফিসারী ও পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বানের পানিতে।
ক্ষতিগ্রস্তরা কৃষকরা জানান, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে প্রায় ১৮টি গ্রাম। বন্যায় পাকা আউশ ধান ও আমন ধানের চারা তলিয়ে গেছে। পানিতে আউশ ও আমনের মাঠসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিখেত তলিয়ে যায়। অপরিপক্ক ধানগাছ কেটে গরুর খাবারের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্তত ১০টি ফিশারি ও ২০ টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য খামারিরা শত চেষ্টা করেও মাছ আটকে রাখতে পারেননি। খামারিরা জানিয়েছেন কৃৃষি ও মৎস্য খাতের দুটিই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এনে মাছের খামার করলেও বন্যায় ভেসে গেছে সব মাছ।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাইচাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৮০টি পরিবার এই কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাঁরা গত তিনদিন ধরে ঘরে চুলা জ¦লাতে পারছেন না। তবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সকাল ও রাতে রান্না করা খেচুরি ও বিরানি দেয়া হচ্ছে বলে জানান ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, কালেকশন করে বড়দের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা গেলেও শিশু খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এই আশ্রয়ন কেন্দ্রের অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র। তাঁরা শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যায় রয়েছে। এখানকার অধিকাংই শিশুই জ্বর ঠান্ডায়সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে ভোগছে।
সুলতানপুর গ্রামের পানিবন্দী মালেকা বেগম বলেন, কোন রকম একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। তিন দিন ধরে ঘরে রান্না হয় না। নাতি ছেলের বউ বাবার বাড়ি চলে গেছে। এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। এবারের বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
ফতেহাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সালাউদ্দিন রুহুল বলেন, নতুন করে ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের মানুষদের উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব মানুষদের ত্রাণ সহযোগিতা করা হচ্ছে তবে তা পর্যাপ্ত নয়।