মো: ওমর ফারুক মুন্সী :
১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর আবদুল্লাহপুরের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ফয়সাল (২৪)। কারফিউর মধ্যেই থানা, হাসপাতাল আর সম্ভাব্য স্থানসমূহে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজে পরিবারের লোকজন। ১৩ দিনপর ১ আগস্ট আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে গিয়ে জানতে পারে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে সে। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে ফয়সালের মরদেহ।
নিহত ফয়সাল সরকার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর গ্রামের সরকার বাড়ির মো.সফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে। সে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সাথে থাকতো। ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার পরে পরিবারের হাল ধরতে শ্যামলী পরিবহনে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি নেয়। চাকরীর পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন লেখাপড়াও। এ বছর দক্ষিণখান এলাকার এমএম মোজাম্মেল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল।
তার পরিবার জানায়, ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকালে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টারে যায় ফয়সাল। সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ চলাকালে আবদুল্লাহপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সে। গুলিতে উড়ে যায় তার মাথার খুলি। কোনো অভিভাবক না পেয়ে ২২ জুলাই থেকে ২৫ জুলাইয়ের কোন এক সময় বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাকে ঢাকায় দাফন করে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম ।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকালে ফয়সালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফয়সালের ছবি হাতে নিয়ে বুক চাপরে বিলাপ করছেন নিহত ফয়সালের বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম, বাবা সফিকুল ইসলাম। তাদের আর্তচিৎকারের স্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ। পাশে বসে কাঁদছেন ফয়সালের বোন ও স্বজনেরা। ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বারবার চিৎকার করে বলছেন, ‘‘কোন পাষন্ড আমার ছেলেরে এমনে গুলি করল, তার কি একটু হাত কাঁপলো না’’। ‘‘পোলারে কত জায়গায় খুঁজছি, কেউ বলতে পারেনা সে কই আছে। থানায়, এই হাসপাতালে, ওই হাসপাতালে ঘুরছি, কোথাও পাইনাই। ১৩দিন পর জানছি, আমার ছেলেরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করছে, তারে কই দাফন করছে তাও কেউ জানেনা।’’
নিহত ফয়সালের ছোট ভাই ফাহাদ সরকার বলেন, গত ১৯ জুলাই বিকালে আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টারে উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় ভাই। সন্ধ্যার পর ভাইয়ের ফোন বন্ধ পেলে আমরা উদ্বিগ হয়্নে বিভিন্ন জায়গায় খুজি। বাহিরে তখনও গন্ডগোল চলছিল। কোথাও ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে ২৮ জুলাই দক্ষিণ খান থানায় জিডি করি। গত ১২দিন থানা, হাসপাতালসহ সব জায়গায় খোঁজাখুজি করেছি, কোথাও হদিস পাইনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকালে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিলে তাঁরা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহগুলোর ছবি দেখায়। ছবিগুলোর মাঝে ফয়সাল ভাইয়ের মরদেহের ছবি দেখতে পাই। তার লাশ কোথায় দাফন করা হয়েছে জানতে চাইলে তাঁরা জানায়, কাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তা নির্দিস্ট করে বলা সম্ভব না।
ফয়সালের বাবা সফিকুল ইসলাম জানান, ফয়সাল লেখাপড়ার পাশাপাশি শ্যামলী বাসে সুপাইভাইজারের কাজ করে সংসার চালাত। সে তো কোন রাজনীতি করত না, তাকে কেন গুলি করে মারা হলো ? এই বিচার আমি কার কাছে দেব?
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ফয়সালের মৃত্যুর খবরটি গতরাতে জানতে পেরেছি। এর আগেও খবর পেয়ে ঢাকায় নিহতদের বাড়িতে আমি গিয়েছি, সহযোগিতা করেছি। ফয়সালের পরিবারের সাথেও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করব এবং যথাসম্ভব সরকারিভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।