মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ কানাইল খাল খনন ও খননকৃত খালের পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় আড়াই হাজার বৃক্ষের চারা রোপনের ফলে বেশ উপকার পাবে আশেপাশের জমিনের মালিকরা সহ হাজার হাজার কৃষক। বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ সরকারের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুকুর-খাল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া মিজির ব্রিজ থেকে মুন্সীরহাট ইউনিয়নের সিংরাইশ ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কানাইল খালটি পুনঃখননের জন্য ২ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। টেন্ডারে মাধ্যমে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর কাজটি সম্পন্নের দায়িত্ব পায় দাউদকান্দির হাসানপুর এলাকার ‘মেসার্স লিবার্টি ট্রেডার্স’ নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার স্মারক নং-৪৬.০২.০০০০.৮৯২.৯৯.০০২.১৮-৪৯৬৬। যথাসময়ে কাজটি সমাপ্ত করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অফিস কার্যাদেশ অনুযায়ী খাল খনন শেষে খালের পাড়ে ২ হাজার ৪০০ গাছ লাগিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বর্ষা মৌসুম থাকায় সেসময় খালের পাড়ে রোপনকৃত অনেক গাছই মরে যায়। খালটি এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ সংলগ্ন হওয়া গরু-ছাগলেও অনেক গাছ নষ্ট করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এরপর সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কুমিল্লা এলজিইডি অফিস থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকটি পরিপত্র জারি করে। পরিপত্র অনুযায়ী খালপাড়ে লাগানো নষ্ট হওয়া বা মরে যাওয়া গাছের স্থলে পূনরায় প্রায় ১০০০টি নতুন চারা গাছ রোপন করার জন্য বলা হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। গত সপ্তাহে ঠিকাদার ৭-৮শ নতুন চারাগাছ এনে মরে যাওয়া গাছের স্থলে প্রতিস্থাপনের কাজ শেষ করে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিন গিয়ে গাছ প্রতিস্থাপনের সত্যতা পাওয়া যায়। খালপাড়ে লাগানো গাছগুলো বড় হলে খালের পাড়ের মাটি ধরে রাখা সহ মাঠে আসা সাধারণ মানুষের জন্য শীতল ছায়ার ব্যবস্থা করবে। এ গাছগুলোই একসময় দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হবে। এছাড়াও সুপরিকল্পিতভাবে খালটি খননের ফলে এলাকার সাধারণ কৃষকরা বোরো মৌসুমে ধান ও ফসল উৎপাদনের সময় যথাযথ পানির চাহিদা পূরণে বেশ উপকার পাবে। যে বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ এতদিন বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলো। খাল খননের ফলে জনমনে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। পানি নিয়ে দুশ্চিন্তার বিপরীতে এখন তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
কানাইল খাল খনন প্রকল্পের ঠিকাদার মো. হাসিব জানান, যথাসময়ে খাল খনন কাজ শেষ করে পরিপত্রের আলোকে পাড়ে বৃক্ষরোপন করি। কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চলতি মাসেই পুনরায় প্রায় ১ হাজার চারা লাগিয়েছি। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজেও আমাদের তৎপরতা রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের সময় পর্যন্ত আমরা তদারকি করবো।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী পলাশ চন্দ্র রায় বলেন, সারাদেশে একযোগে খাল খনন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ধনুসাড়া ব্রিজ থেকে সিংরাইশ ব্রিজ পর্যন্ত এ কানাইল খালটি খনন করা হয়। প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঠিকাদার সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে যথাসময়েই খনন কাজটি শেষ করে। খাল খনন কাজে উপজেলা এলজিইডি অফিস ব্যাপক তদারকি করে। কাজ সমাপ্ত হলে এলজিইডি অফিসের প্রতিবেদন সাপেক্ষে ঠিকাদার চ‚ড়ান্ত বিল উত্তোলন করে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক দেখভাল তারাই করবে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও তদারকি করছি সবসময়। এরমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। প্রকল্পের কাজ শেষে নিয়মানুযায়ী ঠিকাদার খালেরপাড়ে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। বৃক্ষরোপনকালীন সময়ে বর্ষা মৌসুম থাকায় এবং গুরু-ছাগলের কারণে বেশকিছু চারাগাছ নষ্ট হওয়া সহ অনেক মরে যায়। বিভিন্ন প্রকল্পেই এমন ঘটনা ঘটে বিধায় এসব প্রকল্পে জামানত হিসেবে ১০ শতাংশ বিল আটকে রাখার বিধান রয়েছে। এরপর আমরা বিভিন্ন ধাপে প্রকল্প তদারকি শেষে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে জামানতের টাকা তুলতে পারবে ঠিকাদার। কিছুদিন আগে সরেজমিন এসে দেখলাম কিছু গাছ নাই হয়ে গেছে। পরে আবার পরিপত্র জারি করে ঠিকাদারকে মৃত গাছের জায়গায় নতুন চারাগাছ প্রতিস্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। গত সপ্তাহে ঠিকাদার নতুন করে মরা ও নষ্ট হওয়া গাছের স্থানে প্রায় এক হাজার চারাগাছ প্রতিস্থাপন করে। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের মাঝামাঝিতে শেষ হবে। মেয়াদ শেষ না হওয়া অবধি তদারকি অব্যাহত থাকবে। এরপরও কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে জরুরি ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক সমাধান করা হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণের পর যাচাই শেষে প্রতিবেদন প্রদান করা হয়। প্রতিবেদনের আলোকে ঠিকাদার জামানত ফেরৎ পাবে। অন্যথায় জামানত বাজেয়াপ্তও হতে পারে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান বলেন, খালের পাড়ে লাগানো গাছগুলোর মধ্যে প্রায় ৫-৬শ’ গাছ মরে গেছে। কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। কিছু গাছ মরে গেছে। নতুন নির্দেশনার আলোকে ঠিকাদার গত সপ্তাহে মরে যাওয়ার গাছের স্থানে নতুন করে আরও ১ হাজার চারাগাছ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এলজিইডি অফিসের পক্ষ থেকে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।