1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
(আজ পবিত্র ফাতেহা - ই ইয়াজদাহম) ইসলামের খেদমতে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ:) - Dainik Cumilla
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
কুমিল্লা সীমান্তে ভারতীয় মোবাইল ও ডিসপ্লে জব্দ বুড়িচংয়ে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণ কুমিল্লায় সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধকে বেঁধে নির্যাতন, মূল হোতা আটক ব্রাহ্মণপাড়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে ২ ব্যাক্তিকে কারাদণ্ড ব্রাহ্মণপাড়া ইউএনওর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মানববন্ধন চৌদ্দগ্রামে অবৈধভাবে জগন্নাথদীঘির পানি আটকে রাখার প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন কুমিল্লায় নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবীতে নাঙ্গলকোটে মানববন্ধন দাউদকান্দিতে ইসলামি ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের মানববন্ধন

(আজ পবিত্র ফাতেহা – ই ইয়াজদাহম) ইসলামের খেদমতে হযরত বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ:)

  • প্রকাশিতঃ শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৯ বার পঠিত

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির:

আজ বিশ্বের নানা প্রান্তে পবিত্র ইসলামের জয়গান। পৃথিবীর আনাচে কানাচে ধ্বনিত হচ্ছে আজানের মধুর বানী। সুদূর আরবের হেরা গুহা থেকে বিচ্ছুরিত কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আলোকবর্তিকা আজ অনির্বাণ শিখার মতো সর্বত্র। মহানবী হযরত রাসূলে কারীম (সা) ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন জুহুদ ও জিহাদের মাধ্যমে। অর্থাৎ আত্মগঠনের শিক্ষার মাধ্যমেই ইসলামী জ্ঞানসাধনার সূচনা এবং সমাজে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর মহিমা সমাপ্তি। এ কঠিন ব্রত পালনের জন্য প্রিয় নবীর সাহাবীরা তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করতেন। পরবর্তীতে মহান চার খলিফা ও আব্বাসীয় উমাইয়া যুগেও এ বায়াতের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন ছিল। ইসলামী রাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক থেকে আমির বা খলিফা পর্যন্ত এ ছিল এক আধ্যাত্ম বাঁধন। যার মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে বৈশ্বিক জীবন পর্যন্ত মুসলমানদের একতাবদ্ধ পদচারণা ছিল। বায়াত বা খিলাফতের অবলুপ্তির পর সে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন বিশ্বের নিবেদিত প্রাণ ইসলাম প্রচারক মহান সাধক পুরুষ আউলিয়ায়ে কেরামগণ। আমাদের এ উপমহাদেশে তাদের ভক্ত অনুরক্ত ও অনুসারীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। আর এজন্যই এখানকার মানুষ নিঃসন্দেহে ধর্মপরায়নও বটে। মহান চার তরিকার চার ইমাম বা মুর্শিদগণ অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত বা যারা আকণ্ঠ দুনিয়াবী শিক্ষায় নিমজ্জিত তাদেরকে সত্যিকারের ইসলামী শিক্ষা সাধনায় ও আমল আখলাকে দীক্ষিত করেন। আমাদের ঐতিহ্যের ভাষায় এ জগতকে বলা হয় তরিকত বা তাসাউফের জগৎ। ইসলামী শরীয়তের বাহ্যিক রুকন আরকান প্রভৃতিতে প্রেম, ভক্তি ও আন্তরিকতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে তরিকত দীক্ষার একটা বিরাট প্রভাব রয়েছে।

বলা বাহুল্য, ইসলাম কিন্তু সাধারণ যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞান সাধনার পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি, আত্মগঠন, আত্মবিলোপ, আত্মিক উৎকর্ষতা প্রভৃতি বিষয়কে সমান গুরুত্ব দেয়। কোন জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি যদি ঐ বিষয়টি অস্বীকার করেন বা উপেক্ষা করেন, আমার মনে হয় ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হবেন। এ উপলব্ধি থেকে সৃষ্টি হয়েছে আল্লামা রুমি, কবি হাফিজ, ফেরদৌসী, শেখ সাদী, জামি, শামসে তিবরিজ, নিজামুদ্দীন আউলিয়া, শাহজালাল, শাহ পরাণ, পীর খানজাহান আলী, শাহ আমানত, বদর শাহ (রহ.)। এদেরই অগ্রজ চার তরিকার মহান চার ইমাম। হযরত বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) কাদেরিয়া তরিকার, হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.) চিশতিয়া তরিকার, হযরত মুজাদ্দেদে আলফে সানি শেখ আহমদ শেরহিন্দ (রহ.) মুজাদ্দেদিয়া তরিকার, হযরত বাহাউদ্দীন নখশেবন্দী (রহ.) নখশবন্দীয়া তরিকার প্রবক্তা ও স্বপ্নদ্রষ্টা। তারা সাধারণ মানুষকে ফরজ, ওয়াজিবের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নাত ও মুস্তাহাব বিষয়াদিকে প্রাধান্য দিয়ে ধুলার মানুষকে আধ্যাত্মিকতার স্বর্ণশিখরে উন্নীত করতে নিরলস ও নিরহঙ্কার অবদান রেখেছেন এবং আজও তাদের সিলসিলার অধঃস্তন সাধক পুরুষগণ সেই মহৎ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন মসজিদ, মক্তব ও খানকায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় চিন্তা- চেতনায় সুফী-দর্শন ও অন্যান্য মরমী দর্শনের প্রভাব লক্ষণীয়। সুফী দর্শন ইসলামের অভ্যন্তরীণ মরমী দিক। এর উৎস পবিত্র কোরআন ও হাদিস। অনাড়ম্বর, বিলাসহীনতা ও অনাসক্তির প্রতীক ‘সুফী’। অনাড়ম্বর জীবন, দেহ-মন-আত্মার পবিত্রতা রক্ষার সাধনা সুফীর লক্ষণ। হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, খ্রীস্টান ও ইসলাম ধর্ম বিভিন্ন নামে মরমীবাদকে আখ্যায়িত করেছে ঠিক কিন্তু সর্বধর্মের লক্ষ্য স্রষ্টার নৈকট্যলাভ। হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে যাকে অতীন্দ্রিয়বাদ বলা হয় তাকে ইহুদী ও খ্রীস্টান ধর্মে বলা হয় মিষ্টিসিজম, ইসলাম ধর্মে বলা হয় সুফীবাদ – তাসাউফ। পারস্য সাহিত্যে সুফীবাদ শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

বাংলাদেশ তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রভাবিত সুফীদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন হযরত বায়জীদ বোস্তামী, শাহ সুলতান মাহী সওয়ার, হযরত শাহ জালাল, হযরত শাহ মাখদুম রুপোস, হযরত শাহ আলী বোগদাদী, খান জাহান আলী শাহ, শরফুদ্দীন চিশতী, শরফুদ্দীন আবু তওয়ামাহ, শাহ মিসকীন, মাও. সৈয়দ গোলাম রহমান মাইজভাণ্ডারী, সুফী ফতেহ আলী, শাহ মহসীন আউলিয়া (রহ.) প্রমুখ। (ড. এম শফিকুল আলম, বাংলাদেশে সুফীবাদ ও অন্যান্য মরমী দর্শন, আত্-তাকবীর গবেষণা জার্নাল, চ. বি. সংখ্যা ৯ , ২০০৩- ’০৪ সাল) স্মর্তব্য, এ রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখ ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম। ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম হলো কাদেরীয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা বড় পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহির ওফাত দিবস। হিজরী ৫৬১ সালের ১১ রবিউস সানী আধ্যাত্মিক জগতের এ মহান কৃতী পুরুষ ওফাতপ্রাপ্ত হন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৪৭০ হিজরীতে ইরানের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবু সালেহ জঙ্গী এবং মাতার নাম সাইয়্যেদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাগদাদের নিজামিয়া মাদরাসায় তিনি কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, আকাইদ ইত্যাদি বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়া করে সনদ লাভ করেন। এ প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতাও করেন। তারপর বাগদাদের মহান পীর হযরত আবু সাঈদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখরুমী (রহঃ) – এর কাছ থেকে মারিফাতের জ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করেন এবং খিলাফত প্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন জাহেরী বাতেনী উভয় জ্ঞানে জ্ঞানবান। আউলিয়া ও সুফী দরবেশের অপরূপ পবিত্র জীবন কথা ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং পরম গৌরবের বস্তু। আজ দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ইসলামের যে বিস্ময়কর প্রচার ও প্রকাশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে আউলিয়া দরবেশগণের নিরবচ্ছিন্ন মোজাহেদা, ত্যাগ ও চরম আত্মবিলোপ। দুনিয়ায় অগণিত অসংখ্য অলী আবদালের মধ্যে হযরত বড় পীরের স্থান ও মর্যাদা সর্বোচ্চ। আমাদের সুন্দর জীবন গড়ার মানসে তাঁকে জানা ও বোঝা অতীব জরুরী। ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম প্রতি বছর আমাদেরকে সে সুযোগ এনে দেয়। তিনি ইতিহাস খ্যাত এমন এক ব্যক্তিত্ব- যিনি তলোয়ার কিংবা কোন দুনিয়াবী শক্তির লাগাম ধরে বিশ্বময় সুনাম অর্জন করেননি। তিনি অকৃত্রিম খোদাপ্রেম, কোরআন ও সুন্নাহর পূর্ণ ইত্তেবা, শরীয়ত তরিকত ও মারিফাতের অফুরন্ত জ্ঞানাহরণ, মাতৃভক্তি, সততা ও সত্যবাদিতার গুণে বিশ্বের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলিম-উলামা, আমির-উমরাহ, অলী-দরবেশগণেরও অনুসরণীয়- অনুকরণীয় হয়েছেন।

তিনি ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাতেন এবং চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও আদর্শিক মনোবৃত্তি গঠনের মানসে কাজ করে যেতেন। তাঁর কেরামত বা আলৌকিক ঘটনাবলী প্রদর্শনের কথা মানুষের ঘরে ঘরে কিংবদন্তি হয়ে আছে। হযরত শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)- এর অস্তিত্ব ছিল সেই বস্তুবাদী যুগে ইসলামের একটি জীবন্ত মু’যিজা এবং এক বিরাট গায়েবী মদদ। তার ব্যক্তিসত্তা, তার কামালিয়াত, তার প্রভাব আল্লাহ পাকের দরবারে তার মকবুল বান্দা হিসেবে গৃহীত হবার চিহ্নাদি, আল্লাহর মাখলুকাতের মধ্যে তার মাহাত্ম্য ও সম্মানজনক মর্যাদার স্বীকৃতি, তার ছাত্র ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাথীদের নৈতিক চরিত্র এবং তাদের জীবন ও চরিত্র সবই ইসলামের সত্যতার দলিল এবং তার জীবন্ত কামালিয়াতের প্রমাণ। (রেনেসার অগ্রপথিক-১)। দীর্ঘকালব্যাপী বিশ্বকে স্বীয় জাহেরী ও বাতেনী কামালিয়াত দ্বারা উপকৃত করে এবং মুসলিম জাহানে আধ্যাত্মিকতা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাবার বিশ্বজয়ী আনন্দ, সুখ ও স্বাদ সৃষ্টি করে তিনি ৫৬১ হিজরীতে ৯০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার পুত্র হযরত শরফুদ্দীন ঈসা (রহ.)- তার ওফাতের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন : যখন তিনি সেই রোগে আক্রান্ত হন যে রোগে শেষাবধি তার ইন্তেকাল হয়েছিল তখন সাহিবজাদা শায়খ আবদুল ওয়াহহাব তাকে (শায়খকে) আরজ করেন : আপনি আমাকে কিছু ওসিয়্যত করুন যা আপনার পরে আমি আমল করতে পারি। তিনি বললেন : আল্লাহকে সদা-সর্বদা ভয় করতে থাকবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করবে না। তিনি ভিন্ন আর কারও কাছে কোন কিছু প্রত্যাশা করবে না। নিজের যাবতীয় প্রয়োজন আল্লাহর হাতে সমর্পণ করবে, কেবল তারই ভরসা রাখবে। সব কিছু তার নিকটই চাইবে, আল্লাহ ভিন্ন আর কারোর ওপর আস্থা রাখবে না। তাওহীদকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং তাকেই প্রধান অবলম্বন করবে। কেননা, তাওহীদের বিষয়ে কারও কোন মতভেদ নেই, বরং এতে সবার ঐকমত্য রয়েছে। তিনি আরও বলেন : যখন মানুষের দিল আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায় তখন কোন জিনিসই তার থেকে ছুটে যায় না…।’

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD