1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মোজাম্মেলের যত দুর্নীতি টাকা ছাড়া হয়না কোনো কাজ, সকলে তার কাছে জিম্মি - Dainik Cumilla
শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
চৌদ্দগ্রামে শিশুকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে পল্লী চিকিৎসক আটক কুমিল্লা জেলার চলমান উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ: প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বাঙ্গর বাজার থানাকে উপজেলা বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশে অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় একই পরিবারের চারজন নিহতের ঘটনায় কাভার্ডভ্যান চালক গ্রেপ্তার কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী আবু সায়েম আজাদের নাঙ্গলকোটে গণসংযোগ নাঙ্গলকোটে এনসিপি’র মতবিনিময় সভা কুমিল্লা সীমান্তে চোরাইভাবে আনা ৮৬ লক্ষ টাকার ভারতীয় মোবাইল ডিসপ্লে আটক নাঙ্গলকোটে আলাউদ্দিন মেম্বার হত্যা মামলার ৭ আসামী কারাগারে হোমনায় মহানবীকে কটুক্তির অভিযোগে আটককৃত যুবকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন, ৪টি মাজার ও বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ কুমিল্লায় অপহরণের পর অটোরিকশাচালক খুন, ৩৬ দিন পর কঙ্কাল উদ্ধার, গ্রেফতার ৩

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মোজাম্মেলের যত দুর্নীতি টাকা ছাড়া হয়না কোনো কাজ, সকলে তার কাছে জিম্মি

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৮ বার পঠিত

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি:

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. মোজাম্মেল হক। এক যুগ ধরে কর্মরত আছেন একই কার্যালয়ে। যার সুবাধে এখানকার নাড়ি-নক্ষত্র সবই তার নখদর্পনে। দীর্ঘদিন যাবৎ একই কার্যালয়ে কর্মরত থাকার সুবাধে অনুসারী ও সুবিধাভোগিদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন আলাদা সিন্ডিকেট। তিনিই যেন সর্বেসর্বা। অফিসের অলিখিত বস তিনি। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন সময় নাজেহাল করতেন অফিসের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বড় বড় কর্তাবাবুরাও তার কাছে বাধ্য হয়ে ধরা দিতেন নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ও কাজ আদায় করে নিতে। মোজাম্মেলের ক্ষমতার দাপটে তারাও ঐসময় ছিলেন একেবারে অসহায়। ঘুষ না দিলে কারোই কাজ করতো না সে। আর ঘুষ দিলে নিমিষেই হয়ে যেত সকল কাজ। এ যেন টাকার নৌকা পাহাড়ে চলার মত অবস্থা! দুর্নীতি-অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যে নিজের নামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। কিনেছেন বিলাশবহুল গাড়ি। আছে দামি ফ্ল্যাটও। এসব বিষয়ে ক্ষিপ্ত কর্মচারীরা কর্তৃপক্ষ বরাবর দিয়েছেন লিখিত অভিযোগ।

প্রত্যয়নপত্র, বদলি আদেশপত্র প্রস্তুত করে দেওয়া, শান্তি বিনোদন ভাতা, ছুটির দরখাস্ত, বর্ধিত বেতন প্রক্রিয়া, ভিটামিন এ ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কাজে কেউ তার কাছে গেলেই নানান অজুহাতে তাদের কাছে সে অর্থ দাবি করতো। কর্মচারীদের মুখের উপর সরাসরি বলে দিতো ঘুষের টাকা না দিলে কোন কাজ হবেনা। প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণের বিষয় নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে দিতো বিভিন্ন হুমকি-ধমকি।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মো. মোজ্জামেল হক বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের নাম ভাঙ্গিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে নানান কৌশলে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। মোটা অঙ্কের টাকা না দিলে আটকে দিতেন প্রশাসনিক ও অফিসিয়াল প্রয়োজনীয় সকল কাজ। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়ীকরণ, বদলি ফরোয়ার্ডিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর, ছুটি পরবর্তী যোগদান বাবদও তাকে দিতে হতো নগদ টাকা। কর্মচারীদের উচ্চতর গ্রেড মঞ্জুরির কাজ সম্পাদনে জনপ্রতি তাকে দিতে হয় কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। জিপিএফ ঋণ উত্তোলনের জন্য সুবিধাভোগিদের প্রত্যেকের কাছ থেকে নিতেন গড়ে ১,৫০০-২,০০০ টাকা করে। শান্তি বিনোদন, ল্যামগ্র্যান্ড, পেনশন, পিআরএল মঞ্জুরি করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাজেট শাখার মোহাম্মদ হানিফের নাম ভাঙ্গিয়ে কর্মচারিদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মত গুরুতর অভিযোগও রয়েছে অসৎ এই প্রধান সহকারী মোজ্জামেলের বিরুদ্ধে। তার হাত থেকে রেহাই পায় না হাসপাতালের অভ্যন্তরীন কোন দপ্তর। কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন ভাউচার পাশ করার নামেও নগদ অর্থ গ্রহণ করেন তিনি। টাকা না দিলে কর্মচারীদের পিআরএল নির্দিষ্ট সময়ে মঞ্জুর না করে বিভিন্নভাবে হয়রানি করার নজির আছে অহরহ। কখনো কখনো মোটা অঙ্কের টাকা দিলেও সময় অতিক্রান্ত করেই পিআরএল মঞ্জুর কাজ সম্পাদন করেন।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদ থেকে পিআরএলে যান আবুল বাশার। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে গিয়েছেন পেনশনে। আবুল বাশার স্বীয় স্ত্রীর মৃত্যুর পর পরিবারের সমস্যার কথা জানিয়ে বারবার অফিসে ধরনা দিয়েও কাজ আদায় করতে পারেননি। হাসপাতালের প্রধান সহকারী মোজাম্মেলের সাথে মোটা অঙ্কের টাকার (১৪ হাজার) চুক্তি না করায় আজও হাসপাতালের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছেন। ২ বছর যাবৎ ঘুরেও এখনো পাননি চাকুরির পেনশনের টাকা। ফাইল আটকে রেখেছেন অভিযুক্ত মোজাম্মেল। এভাবেই পেনশন মঞ্জুর করার সময় টাকার জন্য কর্মচারীদেরকে জিম্মি করেন মোজাম্মেল। একপর্যায়ে টাকা পেলে পেনশন মঞ্জুর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

আবুল বাশার জানান, একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীর বহু আশা-আকাঙ্খার পিআরএল ও পেনশনের টাকার জন্য এতটা হয়রানির শিকার হতে হলে কিভাবে চলবে তার সংসার। অথচ এ অর্থ দিয়ে অবসর পরবর্তী সময়ে চলে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক-সাংসারিক চাহিদা নিবারনের সকল কাজ। হাসপাতালের প্রধান সহকারী মোজাম্মেলের হয়রানির কারণে যথাসময়ে পিআরএল ও পেনশন এর টাকা না পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এবং পারিবারিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। শুধু আমি নই, যারাই কোনো অফিসিয়াল কাজ করতে যায়, টাকা না দিলে মোজ্জামেল তাদেরকে ভিষণ হয়রানি করেন।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেক্মো) আবুল হাশেম সবুজ বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত শতকরা ৯৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীই হাসপাতালের প্রধান সহকারী মোজ্জামেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ দিবে। টাকার লেনদেন ছাড়া তার কাছ থেকে কোনো অফিসিয়াল কাজ সম্পাদন করা যায় না। একজনের বদলীর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েও কাজ করেননি তিনি। তাহার হয়রানি ও অত্যাচারে আমরা দিশেহারা। যেকোনো প্রয়োজনে হয়রানি আতংকে থাকে অফিসের সবাই। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদ্বাচরণ যেন তার নিত্য সঙ্গী। তাহার হয়রানি ও সার্ভিস বুকের জটিলতার ভয়ে আমরা এতদিন তাহার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও পারিনি। বর্তমানে তাহার আচার-আচরণ ও দুর্নীতির মাত্রা তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ায় উপর মহলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হলাম আমরা।

উপজেলা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ১২ বছর ধরে বেশ ভোগান্তিতে আছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসের যেকোনো কাজ আদায়ে প্রধান সহকারী মোজ্জামেল হককে প্রকাশ্যে ঘুষ দিতে হয়। টাকা ছাড়া কাজ করাতে চাইলে সবার সাথে সে খারাপ ব্যবহার করে। অবৈধ সম্পদে তিনি কুমিল্লা শহরে একাধিক বিলাশবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে শুনেছি। হরহামেশা চড়েন দামি গাড়িতে। লোকমুখে শোনা যাচ্ছে নিজস্ব দামি গাড়িও আছে তার। রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য কিছুদিন পরপরই কক্সবাজার-সাজেকসহ দেশের দর্শনীয় নানান জায়গায় স্বপরিবারে ঘুরতে যান তিনি। আমরা তার দুর্নীতি থেকে মুক্তি চাই।

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মোজ্জাম্মেল হক বলেন, ‘আমি কোন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই, ঘুস গ্রহণের কোনো প্রমাণ কারো কাছে নেই। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো ডাহা মিথ্যা। প্রয়োজনে আপনারা অফিসে এসে স্যারের (উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা) সাথে কথা বলতে পারেন। এসব বিষয় নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাইনা।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশিদ আহমেদ চৌধুরী তোফায়েল বলেন, ‘আমি যোগদানের পরই প্রধান সহকারী মোজ্জামেল হক এর নামে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে তাকে সংশোধন হতে বলেছি। পরবর্তীতে অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী লিখিত অভিযোগ দেয়। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো পর মোজ্জামেল হকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, ‘চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী মোজ্জামেল হকের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কর্মচারীরা একটি যৌথ অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। আপাতত এসব বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আরও ভালো হয়। তদন্ত সাপেক্ষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD