নেকবর হোসেন
কুমিল্লা জেলায় জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে অপরাধজনিত মামলার সংখ্যা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন থানায় আগস্ট মাসে সর্বমোট ৫১৯টি মামলা দায়ের হয়েছে, যেখানে জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল ৪৭৫।
গতকাল রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ডাকাতির মামলা হয়েছে পাঁচটি, যা জুলাই মাসে ছিল দুইটি। দস্যুতার মামলা আগস্টে একটি হলেও জুলাইয়ে ছিল নয়টি। খুনের মামলা আগস্টে হয়েছে ১০টি, যা জুলাই মাসে ছিল ১১টি। ধর্ষণের মামলা বেড়ে আগস্টে দাঁড়িয়েছে ১০টিতে, যেখানে জুলাইয়ে ছিল ৮টি। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা আগস্টে হয়েছে ২৮টি, জুলাইয়ে ছিল ৩২টি। চাঁদাবাজির মামলা
আগস্টে কমে দাঁড়িয়েছে একটি, জুলাইয়ে হয়েছিল তিনটি।
এছাড়া আগস্ট মাসে আহত হওয়ার মামলা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৮টিতে, যা জুলাই মাসে ছিল ৯২টি। ছিনতাইয়ের মামলা আগস্টে হয়েছে দুইটি, জুলাইয়ে ছিল একটি। অস্ত্র উদ্ধার মামলা আগস্টে হয়েছে সাতটি, জুলাইয়ে ছিল ছয়টি। দুই মাসেই চোরাচালানের মামলা হয়েছে চারটি করে। তবে মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত মামলায় বড় ধরনের বৃদ্ধি হয়েছে আগস্টে ২০৫টি মামলা হলেও জুলাইয়ে ছিল ১৮৬টি।
সভায় জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সমস্যা তুলে ধরেন উপস্থিত নাগরিকরা। সাংবাদিক শাহজাদা এমরান অভিযোগ করেন, কুমিল্লা শহরে চুরি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। শহরের অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অকার্যকর থাকায় চুরি ও অপরাধ দমন ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও দাবি করেন, সম্প্রতি ধর্ষণের শিকার এক শিশুকে চিকিৎসা না দিয়ে কথিত প্রভাবশালী মহল মীমাংসার নামে একটি ঘরে আটকে রেখেছিল। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
সভায় আরও আলোচিত হয় চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সামনে গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড ও পোস্টার টানানোর বিষয়টি। স্থানীয় ইউএনও অপসারণের আশ্বাস দিলেও এখনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ উঠে। পরিবেশের সুরক্ষায় এ ধরনের অনিয়ম বন্ধের দাবি জানান অংশগ্রহণকারীরা।
গোলাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় মাদকসেবীদের অবাধ চলাচল এবং এ নিয়ে বিজিবির নিষ্ক্রিয়তাও সভায় সমালোচিত হয়। পাশাপাশি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের দেরিতে আসা নিয়েও অভিযোগ তোলা হয়। জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে চিকিৎসা শুরুর নিয়ম থাকলেও শতকরা ৭০ ভাগ চিকিৎসক নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকেন না।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, অপরাধ দমনে পুলিশ ও প্রশাসন সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে। তবে,
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। শহরে সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, চুরি ও ছিনতাই প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি, সীমান্ত এলাকায় মাদকসেবীদের অবাধ চলাচল বন্ধ করা এবং সরক সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কোনো ধরনের অবহেলা বরদাশত করা হবে না।
সভায় জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মোস্তাক মিয়া ছাড়াও প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।