গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির:
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ও জাকের পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ছোট ছোট ইসলামপন্থি দলগুলো ঐক্য গড়ছে। এবারের নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে পাঠাতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় নতুন জোটের ঘোষণা আসতে পারে।
একাধিক দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, জাকের পার্টিসহ অন্তত ৫টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত দলের নেতারা এক হওয়ার আলোচনা চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট, সুপ্রিম পার্টি এবং ইসলামিক ফ্রন্ট জোটের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
বাকিদের সঙ্গে এই তিন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা জোট গড়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এম এ মতিন ———-কে বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক দল এবং তরিকতপন্থি সংগঠন দুই দিক থেকেই তারা এক হওয়ার চেষ্টা করছেন। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তরিকতপন্থি ও সুন্নীপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো এক হওয়ার প্রচেষ্টায় তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। ইতোমধ্যে তিনটি দল জোট গঠনের জন্য একমত হয়েছে। সমমনা অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে।’
জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে এম এ মতিন বলেন, তরিকতপন্থি সুফিবাদী শান্তিপ্রিয় জনগণ সবচেয়ে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার। স্বাধীনতার পর থেকেই এ বৈষম্য চলছে। তারা রাষ্ট্রের কাছে সবসময় অবহেলিত ছিল। অধিকার আদায়ের জন্যই ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রয়োজন।
তিনি জানান, বিভক্তির কারণে তারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে দুর্বল হয়ে আছেন। তারা নিজেকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ উল্লেখ করে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ওপর প্রতিটি সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। এক থাকলে তারা কত বড় শক্তি হতে পারেন তা ফিলিস্তিনের পক্ষে যৌথভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে জানান দিতে পেরেছে।
তিনি বলেন, সেদিনের কর্মসূচিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঢাকা শহর লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কিংবা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ- এর সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা চলছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দুই দলের সঙ্গে তাদের এখনো কোন আলোচনা হয়নি। পরিবেশ পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট তৈরি হলে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতেও পারে। তবে সেটি হবে জোটের সর্বসম্মতিক্রমে। তাই বিএনপি কিংবা জামায়াত নিয়ে তারা এখনো ভাবছেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান ড.সৈয়দ সাইফুদ্দীন মাইজভান্ডারি বলেন, অলি-আউলিয়ার এ বাংলাদেশর সুন্নি জনতা এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি। শান্তিপ্রিয় বৃহত্তর এ জনগোষ্ঠীকে একই প্ল্যাটফর্মে আনার জন্য জোটের কোনো বিকল্প নেই। তাই জোটবদ্ধভাবে আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান গড়ে নিতে চাই।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর জানান, সুন্নিদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ঐক্যের ক্ষেত্রে তারা দুটি জায়গায় জোর দিয়েছেন। একটি হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত- একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু দেশে এই নামে কয়েকটি সংগঠন আছে। তাই সবগুলোকে এক করা হচ্ছে। আরেকটি ঐক্য হচ্ছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে। জোট তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। জোটের যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে উল্লেখ আছে সমমনা কোনো দল জোটে আসতে চাইলে তাদেরকে নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, জোট গঠনের ক্ষেত্রে তারা দুইটি জিনিসকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। একটি হল রাষ্ট্রের স্বার্থ। রাষ্ট্রের মধ্যে পড়ে দেশত্ববোধ, দেশপ্রেম, ৭১ এবং ২৪ কে যারা ধারণ করবে তারা তাদের সঙ্গে আসতে পারবে। অন্যদিক হলো- আকিদা। যারা ভিন্ন আকিদার তাদের সঙ্গে আপাতত জোট করার চিন্তা করছেন না তারা।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক সচিব এডভোকেট কাজী ইসলাম উদ্দিন দুলাল ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ্ব মজিবুল হক শুক্কুর জানান, আগামী ২৩ আগস্ট সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, কাজী মঈন উদ্দিন আশরাফীর নেতৃত্বাধীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এবং সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বাধীন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত মিলে ঢাকায় কাউন্সিল আহ্বান করেছে। দেশে ১২ হাজার দরবার (মাজার) আছে। সব দরবারকে এক করার কাজ চলছে। এ ছাড়া পীর মাশায়েখরা আছেন।
সুন্নীপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভেদ থাকার কারণে আমরা আমাদের অনেক ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। নিজেদের ভুলগুলো বুঝতে পেরে আমরা এক হচ্ছি। এই ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে সংসদে আমরা আমাদের প্রতিনিধি পাঠাতে চাই।