নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লা জেলার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার (২ মে) এক পর্যালোচনা সভা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানেরা উপস্থিত থেকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও মতামত দেন।
এসময় বিশেষ সহকারী বলেন, আগামী এক দেড় মাসের মধ্যে সব সংকট দূর করতে হবে। সব দপ্তরের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সভা হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
সভায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, বর্তমানে জেলা সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে।কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে কুমিল্লা-কসবা সড়ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে কুমিল্লা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের ওপর চাপ কমবে।
সভায় বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন,‘বাগমারা বাজারে সড়কের ওপর থেকে অটোরিকশা সরাতে হবে। সেখানে দুই নেতার রেষারেষির কারণে বাগমারা বাজারের সড়ক সম্প্রসারণ ও চারলেন হয়নি।’
এই সময় জেলা প্রশাসক বলেন,‘ বাগমারা বাজারে মামলার কারণে কাজ বন্ধ ছিল। কুমিল্লা- নোয়াখালী চারলেন সড়কের চার একর জায়গার অধিগ্রহণ বাকি আছে। আমাদের কাছে দুই তৃতীয়াংশ টাকা আছে অধিগ্রহণের জন্য। আরও ৪০-৪৫ কোটি টাকা লাগবে। ’
এ সময় সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এই চারলেন সড়কের প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে।
জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন,‘ আপনারা টাকা যোগাড় করেন। আমাকে কোথাও লাগলে বলবেন। দুই নেতার রেষারেষির কারণে বাগমারা বাজার সরানো হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
সভায় সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,‘ আগে একজন ঠিকাদারই বেশি কাজ পেত। এখন আমরা এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছি। সামনে আর এই বদনাম থাকবে না। বর্তমানে পাঁচটা প্রকল্প চলমান। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া মেজর কোন সমস্যা নেই।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন,‘ ছয়মাস আগে আমি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বাড়ি গেছি। পদুয়ারবাজার রামপুর ইউলুপের কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ভূমি অধিগ্রহণে ডিসি ও এসিল্যান্ডদের সহযোগিতা করতে হবে। লাকসাম বাইপাস থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সরানো হয়েছে। ওরা যেন আবার বসতে না পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন. চার বছর আগে নতুন ডাকাতিয়ার রাজাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজ হয়। কিন্তু নদীর মধ্যে কাজের গোড়ায় গর্ত দেখা দিয়েছে।
সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন,‘ গত বারের বন্যায় কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। গত ১০০ বছরে ওই এলাকায় এমন বন্যা হয়নি। বাঁধের জন্য নতুন প্রকল্প নিতে হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যা হতে পারে। স্টাডি করতে ১০ কোটি টাকা লাগবে। এ সময় বিশেষ সহকারী বলেন,‘ আপনারা নিজেরা করেন স্টাডি। টাকা লাগবে কেন? খরচ করবেন কেন? গত ১৫ বছরে অনেক প্রকল্প নিয়েছে। যা ইচ্ছে তাই করেছে।
সভায় বিএডিসির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান বিশেষ সহকারী। পরে তাঁকে কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয়।
নাঙ্গলকোটের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে চাইলে টিটিসি কুমিল্লার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান বলেন, সেখানে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা। লোকবল সমস্যা। জবাবে বিশেষ সহকারী বলেন,‘ ৬০ শতাংশের নিচে হলে জনবল সমস্যা বলা হয়ে থাকে।’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূঁঞা বলেন,‘পুরাতন গোমতী নদী নিয়ে একটা প্রকল্প আছে। সেখানে নদীরপাড়ে ৫০০ অবৈধ দখলদার। উচ্ছেদ করা হয়নি। এই প্রকল্প করতে ২০০ কোটি টাকা আছে।
এ সময় কুমিল্লা জেলা প্রশ্সাক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, কাজ শুরু করলে উচ্ছেদ অভিযান হবে। তখন বিশেষ সহকারী বলেন,‘উচ্ছেদের বিষয়টি সবুজ পাতায় (নথি) তুলবেন।’
কুমিল্লা শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে কি করেছেন সায়েমের কাছে জানতে চান বিশেষ সহকারী। জবাবে সায়েম বলেন,‘ কুমিল্লা নগরের ৩৫ কিলোমিটার খালের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার সংস্কার করেছি। নালা ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার হয়েছে। ’
এ সময় বিশেষ সহকারী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি কোন সভা করেনি।এক মাসের মধ্যে যৌথ সভা করতে হবে।
গভায় বিশেষ সহকারী বলেন, লালমাই আইটি সেন্টার থেকে সেনাবাহিনীকে অন্যত্র স্থান্তান্তর দরকার। দুই মাসের মধ্যে আমরা সেটি চালু করব।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে বেলতলিতে ১০০ শয্যার ট্রমা হাসপাতাল হওয়ার কথা। পরে সেখানে মা ও শিশু হাসপাতাল করা হয়। এলাকাবাসীর যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাঁরা চান ট্রমা সেন্টার হোক। এ সময় বিশেষ সহকারী বলেন,‘ হাসপাতাল দুই ভাগ করেন। ট্রমা সেন্টার – মা ও শিশু বিভাগ থাকুক।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন,‘ কুমিল্লায় অনেক বড় প্রকল্প আটকে আছে। এগুলো নিয়ে আমার কাছে কেউ আসে না। এটা নিয়ে আমি হতাশ। আসে অন্য তদবিরের জন্য। দেবীদ্বার মা ও শিশু প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে শেষ হয়। আমি আর আসিফ (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা) এসে উদ্বোধন করব। পুরনো হাসপাতালে ভবন করা হবে। নতুন হাসপাতাল এখন না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে পার্ক হবে। পরিবারের লোকজন ঘুরতে পারবে। খেয়াল রাখবেন কোনভাবেই যেন টপ সয়েল বিক্রি না করা হয় ইটভাটায়। এতে মাটির উর্বরতা কমে যায়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,‘ আমাদের এই মুহুর্তে কোন রাজনৈতিক দল কে টেক কেয়ার করতে হবে না। আপনার অফিসে কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে এনটাইটেল করবেন না। ’
সভায় বদিউল আলম মজুমদার বলেন,‘ আমি এলাকায় গিয়েছি। মানুষ সেবা পাচ্ছে না। এই নিয়ে নানা অভিযোগ। আমরা তারকা জাতি। সেটা প্রমাণ করতে হবে। কেন বিরাট গণ অভুত্থান হল ? আমরা আবারও সেদিকে যাচ্ছি। আমার জীবনের শেষ ইনিংসে চেষ্টা করছি। তবু আমরা কাঙ্খিত মাত্রায় যেতে পারছি না। আমরা এর চেয়ে ভালো করতে পারি না। আমরা কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। আবু সাঈদেও রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আপনারা যদি চান কুমিল্লা জেলাকে চেঞ্জ করতে পারেন।
তিনি বলেন, এই সরকার মেয়াদ ডিসেম্বর- জুনে নির্বাচন হওয়ার পর শেষ হবে।
এই সময়ে আমরা কিছু করতে চাই। ওদের রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। তাহলে এতোগুলো লোকের প্রাণহুতি নিয়ে আপনারা কিছু বলেন।