মোঃ রেজাউল হক শাকিল।।
গ্রামবাংলার পরিবেশবান্ধব তালগাছ সময়ের পরিক্রমায় দিন দিন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। বৈশাখী ঝড়, ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাত মোকাবিলায় তাল গাছের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। বজ্রপাত জনিত মৃত্যুর হার কমানোর প্রধান সহায়ক হলো তালগাছ। এ ছাড়াও কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। সব গাছ ছাড়িয়ে আকাশে উঁকি মারা তালগাছ সেই আদিকাল থেকে গ্রামবাংলার শোভা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে আসলেও আধুনিক যুগে এসে আজ গ্রামবাংলার পরিবেশ থেকে হারাতে বসেছে। ফলে নতুন প্রজন্ম ভুলতে বসেছে তালগাছের বৈশিষ্ট্য, তালের উপকারিতা ও তাল ফলের স্বাদ।
জানা গেছে, তালগাছ এক বীজপত্রী জাতীয় উদ্ভিদ। এটি শাখা প্রশাখাবিহীন এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যতম দীর্ঘ গাছ। গ্রামীণ জনপদে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে পরিবেশবান্ধব এই তালগাছ। যার উচ্চতা ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড় ও বজ্রপাত প্রতিরোধক হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই উপকারী ভূমিকা রেখে আসছে। গ্রামবাংলায় এটি বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।
বিংশ শতাব্দীর কবিদের ছড়া ও কবিতায়ও এই তালগাছ উঠে এসেছিল নানা কাব্যিকতায়। ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা’, অথবা, ‘তালগাছ এক পায় দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে’, কিম্বা ‘ঝাঁকড়া-চুলো তালগাছ তুই দাঁড়িয়ে কেন ভাই। আমার মতো পড়া কী তোর মুখস্থ হয় নাই।’ এ ধরনের নানা পঙক্তি, ছড়া ও কবিতায় তালগাছ উঠে এসেছিল শ্রুতিমধুর কাব্যিকতায়। এতেই বোঝা যায় তালগাছ একসময় গ্রামবাংলার পরিবেশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে ছিল। যা বর্তমান আধুনিক কবিতায় নেই।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কিছু কিছু এলাকায় তালগাছ দেখা গেলেও অধিকাংশ এলাকাতেই তালগাছের দেখা মেলা ভার। ওই এলাকার প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামবাংলায় একসময় তালপিঠা ছাড়া আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেতো না। একসময় এই গাছের মাধ্যমে পাড়া, মহল্লা ও বাড়ির পরিচয় দেওয়া হতো। তালগাছ, একসময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আকবার পট, লেখবার পুঁথি, পুতুল ইত্যাদি তৈরি ও ব্যবহার করা হতো। তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো। তালগাছের অঙ্গ থেকে কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয়, প্রায় কিছুই ফেলা যায় না। কিন্তু গ্রামবাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাংলার পরিবারগুলোতে নেই সেই তালপাতার পাখা ও তাল পিঠা দিয়ে মেটানো আত্মীয়তা। তালগাছ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মানুষের অবহেলা আর অসচেতনতায়।
উপজেলার দীর্ঘভূমি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আরছব আলী বলেন, একসময় রাস্তার পাশে, বাড়ির পাশে ও পুকুর পাড়ে তালগাছ ছিল। তালের পিঠা, তাল গাছের পাতা গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হতো। দিন দিন তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে। বিধ্বংসী ঝড় তুফান ও বজ্রপাত থেকে তালগাছ আমার রক্ষা করে আসছে সেই আদিকাল থেকেই। আমি মনে করি তালগাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হওয়ার আগেই আমাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
উপজেলা বন কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, সড়কের পাশে তাল গাছের চারা রোপণের কোনো কর্মসূচী আপাতত সরকারের নেই। তবে এলাকার সচেতন নাগরিকরা ইচ্ছে করলে নিজ উদ্যোগে তাল গাছের চারা রোপণ করতে পারে। তালগাছ একটি পরিবেশবান্ধব গাছ।