মোঃ রেজাউল হক শাকিল ।।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে সোনালি আঁশ। পাট থেকে সোনালি আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সবাই। নদী-নালা ও খাল বিল থেকে জাগ দেওয়া পাট তুলে এনে তার থেকে আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ করছেন তারা । এ বছর পাটচাষে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পাট চাষীদের বিপাকে পড়তে হয়েছিল। তবু সোনালি আঁশের সোঁদা গন্ধে ও স্বপ্নের সোনালি আঁশ দেখে কৃষকদের মনে স্বস্তি ফিরেছে। তবে এ বছর পাটের ফলন ভালো হলেও আশানুরূপ মূল্য না-পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পাট চাষীর সংখ্যা প্রতিবছরই কমছে। কৃষক ধান চাষের দিকে ঝুঁকছে বেশি। অন্য বছরের তুলনায় এবছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান চাষীরা। চাষিরা পাট কেটে তা নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে বাজারে তা বিক্রিসহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে নারী-পুরুষের অংশ গ্রহণে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ চলছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের বাজারমূল্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এ বছর কুমিল্লা বিভিন্ন উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কুমিল্লায় দেশি পাট অর্জিত হয়েছে ৪৭৬ হেক্টর তুষা ৫৬৩ হেক্টর অর্জিত হয়েছে বলে জানান কুমিল্লা কৃষি বিভাগ।
এছাড়া দেশি পাট গড় ফলন ১০৫ হেক্টর ৮.০৫ মেট্রিক টন ফলন সংগ্রহ করা হয়েছে। এবং তুষা জাতের পাট ৪০৪ হেক্টর ১১.৫ মেট্রিক টন পাট সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বছর হোমনা, তিতাস, মেঘনা এবং দাউদকান্দি উপজেলায় পাট চাষ ভালো ফলন হয়েছে।
এদিকে পাট চাষী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কান্দুঘর এলাকার জয়নাল আবেদীন বাচ্চু বলেন, এখন পাট কাটা, পানিতে ডোবানো ও ধোয়ার কাজে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। তবু পাটের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। শুর থেকে পাট শুকানো পর্যন্ত যা খরচ করেছি সেই অনুযায়ী পাটের মূল্য পাব কিনা জানি না। শুনছি এ বছর পাটের বাজার মন্দা যাচ্ছে।
বুড়িচং উপজেলার পাট চাষী আবদুল হক বলেন, এ বছর আমি একুশ শতক জমিতে পাটচাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পাটচাষে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। তবে আশানুরূপ মূল্য না পেলে আমি পাটচাষে ক্ষতিগ্রস্ত হব।
দেবিদ্বার উপজেলার এগারগ্রাম এর পাট চষী আক্কাস মিয়া জানান, এ বছর তিনি ৩২ শতক জমিতে পাটচাষ করেছি এতে তাঁর খরচও হয়েছে অনেক। পাটের ফলনেও তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে পাটের বাজারমূল্য আশানুরূপ না পেলে পাটচাষে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক( ডিডি) আইয়ুব মাহমুদ গতকাল কুমিল্লার কাগজকে বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর পাটচাষ কিছুটা ব্যহত হয়েছে। অধিকাংশ কৃষকই পাটচাষ ছেড়ে ধান চাষে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন। তবে এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাটের ন্যায্য মূল্য পেলে চাষিদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ বাড়বে।