1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
ঢাকায় সংঘর্ষে নিহত তিনজনের দাফন কুমিল্লার দেবিদ্বারে, পরিবারে কান্না থামছেই না - Dainik Cumilla
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ০৯:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
কুমিল্লায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেপ্তার ৬ কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ওসি’র সম্মাননা পেলেন দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুনায়েত চৌধুরী ব্রাহ্মণপাড়ায় ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি চৌদ্দগ্রামে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’র অবস্থান কর্মসূচি পালন বাসস এর চিফ রিপোর্টার দিদারুল আলম ময়নামতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি কুমিল্লায় ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরোহীর স্বামীর মৃত্যু, স্ত্রী আহত কাজ না করেই বিল উত্তোলন, ৫ কর্মদিবসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু চৌদ্দগ্রামের গুনবতীতে রাস্তার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ চিতই পিঠার মত উঠছে রাস্তার কার্পেটিং, নিম্নমানের কাজ বন্ধ করালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

ঢাকায় সংঘর্ষে নিহত তিনজনের দাফন কুমিল্লার দেবিদ্বারে, পরিবারে কান্না থামছেই না

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪
  • ১২১ বার পঠিত

মো: ওমর ফারুক মুন্সী।। 

ঢাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে বিভিন্ন সময়ে নিহত তিন জনের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মা-বাবা, স্বজন বা প্রতিবেশী কেউই মেনে নিতে পারছেনা তাদের এমন মৃত্যু। নিহতদের কথা উঠলেই কেউ না কেউ ফেলছেন চোখের পানি।

নিহতরা হলেন, ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৪)। বড়শালঘর ইউনিয়নের বড়শালঘর গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে মো. সাগর মিয়া (১৯) ও রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামের মো. মানিক মিয়ার ছেলে মো. হোসাইন মিয়া (১০) । এ তিনজনের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। জানাজা শেষে তিনজনকে দাফন করা হয়েছে নিজ নিজ গ্রামের কবরস্থানে। তাঁরা সবাই ছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সংসারের অভাব ঘুচাতে, মা কিংবা বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে তিনজনই লেখাপড়া ছেড়ে রোজগারে নেমেছিলেন। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

২৪ বছরের যুবক কাদির হোসেন সোহাগ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। মা-ছোট ভাই মিলে তিনজনের সংসার। পিতাহীন সংসারে অসুস্থ্য মায়ের কস্ট লাঘব করতে পড়া ছেড়ে একটি পার্সেল সার্ভিসে চাকরি নেন সে। থাকতেন ঢাকার গোপীবাগ এলাকার একটি মেসে। গত ২০ জুলাই রাত ৮টার দিকে খাবার কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ছুটে যায় ছোট ভাই সহিদুল ইসলাম। রাত সোয়া ৩টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সোহাগ। পরদিন দুপুওে দেবিদ্বারের ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সোহাগের ছোট ভাই সহিদুল ইসলাম বলেন, ভাই গুলি খাওয়ার পর তার বন্ধুরা আমাকে ফোনে জানায়। আমি রাত ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে  পৌছাই, গিয়ে দেখি ভাইয়ের বুকে ব্যান্ডেজ করা। আমাকে দেখে ভাই বলে, তুই এত রাতে এখানে কেন আসছিস। তুই মাকে দেখে রাখিস। রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে ভাই মারা যায়। ভাই আমাদের সংসার চালাত। বাবা ও ভাই হারিয়ে আমরা আজ নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

মো. সাগর মিয়া (১৯) বাবা-মার সাথে থাকতেন মিরপুর এক নম্বরে। অসুস্থ বাবার একটি কিডনী নেই, কাজ কর্ম তেমন করতে পারে না। ছোট্ট একটি চা দোকানের আয়ে ৫ জনের সংসার চলে না। বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ জোগাতে তাই ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন সাগর। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকালে ভ্যানে সব্জি নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে যান। সেখানে সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয় সাগর। কয়েকজন তাকে মিরপুরের একটি প্রাইভেট কিøনিকে নিয়ে গেলে রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরদিন শনিবার দুপুরে তার মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলার বড়শালঘর গ্রামে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত সাগরের বাবা আবু হানিফ মিয়া বলেন, ঘটনার দিন আমি বারবার বলছিলাম বাবা তুই আজকে যাইস না। আমার ওষুধ ও ঘরে বাজার নাই। হাতেও টাকা ছিল না তাই পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে বের হইছিল। আমার একটি মাত্র ছেলে তাকেও আল্লাহ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল। আমি অসুস্থ কখন মারা যাই ঠিক নাই, আমার পুরো সংসারটা শেষ হয়ে গেল। তার মা ও দুই বোন রয়েছে তাদের দেখাশোনা কে করবে এখন।

মায়ের চিকিৎসার জন্য চিটাগাং রোড এলাকার বিভিন্ন বাসে বাসে পানি, চকলেট, পপর্কন বেঁচতেন দশ বছরের হোসাইন মিয়া। মা- বাবার সঙ্গে থাকতেন ওই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। গত ২০ জুলাই শনিবার বিকালে ভাত খেয়ে বাসা থেকে বের হয় হোসাইন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চিটাগাং রোড এলাকায় সে গুলিবিদ্ধ হয়। অনেক খোঁজাখুজির পর রাত ৯টার দিকে হোসাইনের বাবা মানিক মিয়া জানতে পারেন তার ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। পরে সেখানে গিয়ে মর্গের ভিতরে অনেকগুলি লাশের মাঝে তার ছেলের মরদেহ দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মানিক মিয়া। সারাদিন শেষে রবিবার রাতে মানিক মিয়ার কাছে তার ছেলের লাশ হস্তান্তর করা হয়। দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নের বেতরা গ্রামে এনে রাত তিনটার দিকে জানাজা শেষে তার নানার বাড়ির একটি কবরস্থানে হোসাইনকে দাফন করা হয়। হোসাইনের মা মালেকা জানান, ভাত খেয়ে ঘরে থাকতে বলছিলাম তবুও ছেলে বের হয়ে যায়। আমি বার বার ডেকে ঘরে আনার জন্য যাই, আর বলি বাবা রাস্তায় গোলাগুলি হচ্ছে তুই বাসায় চলে আয়, ছেলে বলে মা আমি ছোট্ট আমারে কে গুলি করবে ? আমি গার্মেন্সে কাজ করতাম। আমি অসুস্থ হয়ে চাকরী ছেড়ে দিলে হোসাইন বাসে বাসে পানি, পপকর্ন ও চকলেট বেঁচা শুরু করে। সে যা আয় করত তা দিয়ে আমার চিকিৎসা চলতো।

দেবিদ্বার থানার ওসি মো. নয়ন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত দেবিদ্বার উপজেলায় তিনটি মরদেহ আসার খবর পেয়েছি। নিহতদের পরিবারগুলোর খোঁজ খবর রাখছি।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা বলেন, ঢাকায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আমি নিজে নিহতদের বাড়িতে গিয়েছি এবং হোসাইনের পরিবারের হাতে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দিয়েছি। বাকী দুই পরিবারকেও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। ভবিষ্যতেও যাতে পরিবারগুলো সরকারী সহায়তা পায় সে চেস্টা করবো।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD