
চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে ইদুনি বেগম নামের প্রতিবন্ধী (বোবা) এক নারীর স্বামীর মৃত্যুর পরে রেখে যাওয়া প্রাপ্ত সম্পদের ন্যায্য হিস্যার ৭.৮৩ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করার অভিযোগ উঠেছে নিজ সন্তান আবিদ আলী ও তার ছেলে শামীম এর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা কাশিনগর ইউনিয়নের বালিমুড়ি গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগিরা প্রতিবাদ করলে দখলকারীরা আদালতে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যাপক হয়রানি করে আসছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি একই গ্রামের মৃত ছায়েদ আলীর ছোট ছেলে আব্দুল আলী চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ঘটনাটি জানাজালি হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের বালিমুড়ি গ্রামের মো. ছায়েদ আলী বেশ কিছু জমি রেখে বার্ধক্যজনিত কারণে ২০২৩ সালের ২৩ এপ্রিল নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রেখে যান। দেশের প্রচলিত আইন ও ইসলামী ফারায়েজ অনুযায়ী মৃত ছায়েদ আলীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিগুলো তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্ব-স্ব হিস্যা অনুযায়ী বন্টন হওয়ার কথা। কিন্তু মৃত ছায়েদ আলীর বড় ছেলে আবিদ আলী তার পিতার মৃত্যুর মাত্র ছয়মাসের মাথায় পিতার রেখে যাওয়া জমির তার প্রতিবন্ধী মায়ের হিস্যার অংশটুকু (৭.৮৩ শতক) কোনোরূপ আপোষ-বন্টন ছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে নিজের বড় ছেলে শামীম ও ছোট ভাইয়ের বড় ছেলে উসমানের মধ্যে সমান হিস্যা দেখিয়ে বসতবাড়ির জমি থেকে হেবা কবলা করে নেন। মৃত ছায়ের আলীর অন্য ওয়ারিশগণ বিষয়টি জানতেন না। ঘটনার একমাস পরে মৃত ছায়েদ আলীর ছোট ছেলে আব্দুল আলী বিষয়টি জানতে পেরে বড় ভাই আবিদ আলীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি। বিষয়টির সমাধানকল্পে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস অনুষ্ঠিত হয়। সমাধান না হওয়ায় উভয় পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এরমধ্যে কয়েকবার মারামারির ঘটনা ঘটে তাদের মধ্যে। মারামারির ঘটনায় ভুক্তভোগি আব্দুল আলী, তার ছোট ছেলে মামুন, স্ত্রী ও বোন সহ কয়েকজন আহত হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর আহত মামুন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় সপ্তাহ খানেক ভর্তি ছিল বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে অভিযুক্তরা আব্দুল আলীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া সহ নানান হয়রানি করে। একপর্যায়ে আবিদ আলী ছোট ভাইকে শায়েস্তা করতে তার ভাতিজা বউ ফাতেমাকে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে আদালতে নারী নির্যাতনের একটি মিথ্যা মামলা (নং-২৭১/২০২৪) দায়ের করেন। মামলায় নথি হিসেবে যে সকল কাগজপত্র আরজির সাথে উপস্থাপন করা হয়েছে, সে সূত্র থেকে বুঝা যায় মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই এ মামলাটি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পারিবারিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আব্দুল আলী। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার বিচার চেয়ে এখন ধারে ধারে ঘুরছেন ভুক্তভোগির পরিবার। চলাচলে বাধাগ্রস্থ হওয়া, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সহ নানান সমস্যায় জর্জরিত এখন তিনি।
ভুক্তভোগি আব্দুল আলী, তার বোন হালিমা বেগম ও জায়েদা বেগম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আলী আশ্রাফের ছেলে খোরশেদ ও আম্বর আলী মুন্সীর ছেলে তাজুল ইসলাম এর কারণে আজ আমাদের পরিবারে জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলমান। গ্রামবাসীকে নিয়ে আমরা সমস্যা সমাধানে একাধিকবার বসলেও এদের কারণে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। তারা বিগত সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আমাদের মধ্যে বিবাদ বাড়িয়ে দেয়। মারামারির ঘটনায় তারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো। আমাদের প্রতিবন্ধী মাকে দিয়ে তাদের সহযোগিতায় আমার ভাই একটি প্রতারণামূলক কবলা সৃষ্টি করে জোরপূর্বক জমি দখলে নিয়েছে। আমাদের ভাই-বোনের মধ্যে আগে মিল-মহব্বত ছিল। খোরশেদ আর তাজুল ইসলামের কারণেই আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমি আমার পৈতৃক সম্পদের ন্যায্য হিস্যা চাই। বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি পুলিশি সহযোগিতায় সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবিদ আলীর ছেলে মো. ফারুক বলেন, আমার চাচা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ এসে আমাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেছে। আমরা আইনীভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করবো।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক নিমাই চন্দ্রনাথ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উভয়পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় আসতে বলেছি। স্থানীয় সামাজিক লোকজনকে নিয়ে শীঘ্রই সমস্যাটির সমাধান করা হবে।