নিজস্ব প্রতিবেদক, লাকসাম:
ইসলামী বিধিবিধানের বিষয়ে এদেশের মানুষের কাছে একটি মহল ভুল বার্তা দিচ্ছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কলম ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি ও কুমিল্লা-৯ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ এ কে এম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া কর্মরত সাংবাদিকদের সম্মানে লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
ডঃ সরওয়ার সিদ্দিকী বলেন, একটি মহল প্রচার করছে- যদি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন হয় অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামী যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে সামান্য চুরির কারণে চোরের হাত কাটা হবে। সামান্য চাল চুরি করে বা ডাল চুরি করে এর জন্যও চোরের হাত কেটে দেয়া হবে। ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করা হবে কেসাস চালু হবে ইত্যাদি। এখানে দুটি বিষয়; একটি হচ্ছে ফতোয়া আরেকটি হচ্ছে বিচার। যেমন একজন মুফতি ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে চোরের হাত কেটে দেয়ার বিধান। আর একজন বিচারক যখন বিচার করেন তখন তিনি চোরের পারিপার্শ্বিক বিষয় বিবেচনা করে রায় দেন। যেমন একটি কাঁচি নাপিতের হাতে থাকে, আরেকটি একজন সার্জেন্টের হাতে থাকে। নাপিত খচখচ করে কাটতে পারে, কিন্তু একজন সার্জেন্ট খচখচ করে কাটতে পারেন না। তিনি অনেক হিসাব নিকাশ করে কাটতে হয়।
তিনি বলেন ডাঃ জাকির নায়েকের মত একজন স্কলারকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় চোরের বিধান কি? তিনি বলবেন যে অমুক সুরার অমুক আয়াত বা অমুক হাদিসে চোরের হাত কেটে দেয়ার বিধান। কিন্তু একজন হাকিম ধরেই চোরের হাত কেটে দিতে পারেন না তিনি চরের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন এই চুরি কি তিনি পেটের দায়ে করেছেন, না স্বভাবগতভাবে করেছেন। ফতোয়া ইউনিভার্সাল আর বিচারের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক বিষয় জড়িত।
ডঃ সরওয়ার বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে চোরের হাত কেটে দেয়া হবে বিষয়টি তা না। ইসলামী রাষ্ট্রকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বলা হয়। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে সকল জনগণের ভাত-কাপড়সহ মৌলিক মানবিক প্রয়োজন নিশ্চিত করা। অর্থাৎ রাষ্ট্র সমস্ত লোকের খাদ্যের নিশ্চয়তা দেবে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা দেবে, চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেবে, শিক্ষার নিশ্চয়তা দেবে, অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনগুলোর নিশ্চয়তা দেবে। এরপর যদি কেউ চুরি করে তাহলে সেটা স্বভাবের চুরি হবে।
বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তার একজন পিয়ন ৪শ কোটি টাকার মালিক। এদের এমপি-মন্ত্রীরা এদেশের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। এ ধরনের চোরদের কি শুধু হাত কাটলেই হবে! কয়েক হাজার বার গলা কাটলেও তাদের অপরাধ শেষ হবে না।
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানায় একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, তখন চোরের হাত কাটা আইন স্থগিত রাখা হয়েছিল। কেউ যদি পেটের দায়ে চুরি করে তাহলে চোরের হাত কাটা যাবে না।
ডঃ সরওয়ার সিদ্দিকী বলেন, আজ আছিয়াদের মত মেয়েরা ধর্ষিত হচ্ছে। আজ কথিত বামপন্থীরাও আছিয়ার ধর্ষকদের ফাঁসির আইন চাচ্ছে। কিন্তু চৌদ্দশ বছর আগে ইসলামে ধর্ষকের শাস্তি পাথর মেরে হত্যা। আর যদি আপনার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় তাহলে আপনি দর্শকের কি বিচার চাইবেন।
যারা আছিয়াদের মত মেয়েদের ধর্ষণ করে, তারাই শরীয়া আইনকে ভয় পায়। ইসলাম সার্বজনীন। জামায়াতে ইসলামী এদেশে ইসলামের সুমহান আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়।
লাকসাম পৌরসভা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মাওলানা মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহর পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বদিউল আলম সুজন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী ব্যাংক লাকসামসাগর ব্যবস্থাপক মোঃ সানাউল্লাহ, এখন পৌরসভা জামাতের সহ-সেক্রেটারি মাস্টার এ কে এম শাহ আলম, মোঃ নুরে আলম, লাকসাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর উদ্দিন জালাল আজাদ, সেক্রেটারি কামাল উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মো. আবুল কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মান্নান, সাংবাদিক ফারুক আল সারাহ, জাফর আহমদ, আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন বাবুল ওমর ফারুক সহ লাকসামে কর্মরত প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।