নেকবর হোসেন
কুমিল্লা জেলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ টি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৩১টি এবং ধর্ষণের ঘটনায় ৬ টি মামলা দায়ের হয়েছে বিভিন্ন থানায়। জেলায় বিভিন্ন এলাকাতে চুরির ঘটনায় ২৩টি মামলা হয়েছে, ডাকাতের ঘটনায় ৪ টি এবং দস্যুতার ঘটনায় ৪ টি মামলা দায়ের হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন অপরাধে ফেব্রুয়ারি মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৪৪টি।
গতকাল ৯ মার্চ কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মার্চ মাসের জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার কার্যপত্রে তুলনামূলক গুরুতর অপরাধ বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সারের সভাপতিত্বে করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান আকন্দ।বিগত সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত সমূহ পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা মতিন।বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান, পিপি কাইমুল হক রিংকু,আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেছেন, সম্প্রতি দেশে আইন না মানার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। দেশে আইন শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার আরও বলেন, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের নিরাপদ চলাচলের স্বার্থে সকল ডিভাইডারের সংস্কার কাজ ঈদের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে হাইওয়ে পুলিশের টহল বাড়ানোসহ নিরাপত্তা কর্মীদের কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। গোমতী নদীতে মাটি কাটার ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। ফসলী জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে পারিবারিক পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে মাকে তার শিশু সন্তানদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে জাতীয় পতাকা স্ট্যান্ডে জুতা ঝুলানোর ঘটনা দুঃখজনক। ইমাম নিয়োগের বিষয়টি অধ্যক্ষ মহোদয় ঘটনার আগে মীমাংসার প্রয়োজন ছিল। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় গোমতী নদীর বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটিকাটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলতা প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার। সভায় উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে তিনি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন অথবা সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছ থেকে এক্সকেভেটর ভ্যেকুর সহযোগিতা নিয়ে গোমতীর চর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় যে রেম্পগুলো (নদীর তীর থেকে মাটি তুলে রাস্তায় নেয়ার ব্যবহৃত পথ) ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিনষ্ট করে দিতে হবে। এ সময়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিষয়টি কঠোরভাবে ব্যবস্থাপনার নির্দেশ দেন।
সভায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন – সদর উপজেলায় গোমতী নদীর ১৭ টি পয়েন্টে মাটিকাটা হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট করে মাটি ব্যবসায়িদের থামানোর চেষ্টা করছি। অবৈধভাবে মাটি ব্যবসায়ীদের প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীর দুই পাড়ার রাস্তায় পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করারও পরামর্শ দেন তিনি। গোমতী নদী ও কাকরী নদী থেকে মাটি কাটার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীদা আক্তার ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া খানম।
সভায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ নাজির আহমেদ খান বলেন, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সবাইকে নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। কৃত্রিম ভাবে মব তৈরী করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ে জেলা পুলিশ বিশেষভাবে কাজ করছে।
সভায় পিপি কাইমুল হক রিংকু বলেন, কুমিল্লার আদালতে বর্তমানে জুলাই-আগস্টের ঘটনার মামলা বেশি। কিন্তু বেশ কিছু মামলার ফরওয়ার্ডিং সঠিকভাবে আদালতে পেশ না করায় রায় প্রদানে বিজ্ঞ আাদালত বিলম্ব করছেন। সঠিক ফরওয়ার্ডিং প্রদানের ব্যাপারে তিনি সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।