
কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুবি ছাত্রদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। হুমকির কারণে আতঙ্কিত হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলাম হৃদয়।
শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লাইভে এসে ছাত্রদলের রোষানল থেকে বাঁচতে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন, “আমি এখন শঙ্কিত, আমি এখন আতঙ্কিত। আমাকে শুধু এতটুকুই নিশ্চিত করুন যে, ছাত্রদল আমার কিছু করবে না।”
তিনি আরো বলেন, “আমার জুনিয়রদের প্রতি অনেক রাগ ছিল, তাদের স্থায়ী বহিষ্কার চেয়েছিলাম। পরে চেয়েছিলাম সাময়িক বহিষ্কার, পরে আবার ক্ষমা করে দিয়েছি। তাহলে কেন আজকে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাকে আক্রমণাত্মকভাবে কথা বলবে যে আমি কেনো পোস্ট দিয়েছি, কেনো নিউজ করাইছি। আমি শুধু স্বাভাবিক থাকতে চাই।”
ভিডিও পোস্ট করার কিছুক্ষণ আগে রাত ৯টার দিকে তিনি আরেকটি ফেসবুক পোস্টে লিখেন, “আমি তো সব ভুলে গিয়ে জুনিয়রদের ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি বাড়াইনি। তাহলে কেন ছাত্রদলের পোলাপান রুমে এসে আমাকে আক্রমণাত্মকভাবে বিভিন্ন কথাবার্তা শুনিয়ে যাবে? একেবারে সাধারণ একটা ছেলেকে কেন এভাবে ট্রমাটাইজড রাখা হবে। আমি তো একটু প্রশান্তির জন্য ঝামেলা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম…..??”
জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর রাতে ভুক্তভোগী টিউশন শেষে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত রুমে গিয়ে উঠলে রুমের দুই শিক্ষার্থী রোমান (বাংলা-১৮) ও ইউনুস (বাংলা-১৮) তাকে আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকেন। তারা বলেন, “হলে উঠার, হলে থাকার কিছু রুলস আছে। চাইলেই কেউ হলে উঠতে পারে না, হলে থাকতে হলে কষ্ট করতে হয়।” তিনি প্রতিবাদ করলে রোমান উচ্চস্বরে বলেন, “এই, আস্তে কথা বলুন, আপনি এখনো হলে থাকেন না।” আর ইউনুস আঙুল তুলে বলেন, “প্রশাসন মুখ্য না, প্রশাসন চাইলেই কাউকে শিফট করতে পারে না।” সেই ঘটনার পর হল প্রশাসন বিষয়টি সমাধান করতে অভিযুক্তদের সিট বাতিল করে শাস্তি দিলেও পরবর্তীতে তিনি সেই শাস্তি প্রত্যাহার করেন।
দ্বীন ইসলাম অভিযোগ করেন সেই ঘটনা নিয়ে নিউজ হওয়ায়, ওই পোস্ট দেওয়ার কারণে শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে জিসান (১৬তম আবর্তন), ছাত্রদল কর্মী তাওহিদ (অ্যাকাউন্টিং-১৭) ও আকরাম (১৮তম আবর্তন) তার রুমে গিয়ে তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। এতে তিনি মারাত্মক মানসিক চাপে পড়েন এবং বর্তমানে নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে তোহিদুল ইসলাম জিসান বলেন, “ওরা যে রুমে থাকে আমি ঠিক ওই রুমের উপরের তলায় থাকি। ওই রুমগুলো যারা থাকেন তাদের সাথে সবসময় কথাবার্তা বলি। আমি আমার একটা বড় ভাই হারিস ভাইয়ের কাছে গিয়েছি, সিনিয়র-জুনিয়র যে রকম কথাবার্তা হয় সেরকম কথা বলছিলাম। এখানে কোনো উচ্চগলায় কোনো কথা হয়নি। আমি কোনো রাজনীতি করি না, কোনো দলেরও না।”
তার সাথে ওই রুমে অন্য কেউ ছিলেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমার সাথে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। সে হয়তো ছাত্রদল করে আমি এই বিষয়ে ক্লিয়ার না। ওর রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে, আমার রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই।”
হৃদয়ের সাথে আক্রমণাত্মকভাবে কথা কে বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এখানে কোনো কথাই বলিনি, আমার যা কথা হয়েছে সব হারিসের সাথে।”
বিষয়টি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, “যদি ছাত্রদলের কেউ এরকম কিছু করে থাকে, তা প্রমাণিত হয় তাহলে আমাদের দলীয় শৃঙ্খলা অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ছাত্রদলের তদন্ত কমিটি গঠন:
এদিকে এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুবি ছাত্রদল। শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে হৃদয় ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন যে, তার সঙ্গে অসদাচরণ হয়েছে এবং এতে ছাত্রদলের নামও উল্লেখ করেন। বিষয়টি কুবি ছাত্রদলের নজরে আসার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশারকে, আর সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাইদুল ইসলাম শাওন ও রিয়াজ উদ্দিন অন্তর। কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।