নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় বৈষম্যবীরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৬ আইনজীবীকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় হাজিরা দিতে এসেছেন দুই ডজন আইনজীবী। বাকিদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) কুমিল্লার সিনিয়র জেলা ও দায়রাজজ মো. মাহাবুবুর রহমান এই আদেশ দেন।
হাজতে যাওয়া হলেন, কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া, এডভোকেট জাকির হোসেন, সাইফুল ইসলাম। এছাড়াও আইনজীবী মো. মহিন ও মো. সোহাগ অনুপস্থিত ছিল।
এদিকে আদালতে আসামিদের প্রিজনভ্যানে উঠানোর সময় ডিম নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় বারের সাবেক সভাপতি মোস্তাপিজুর রহমান লিটনের মাথায় ডিম পড়ে। চপরে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় তাদের প্রিজনভ্যানে উঠিয়ে তড়িঘড়ি করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এসময় আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এডভোকেট মাসুদ সালাউদ্দিন ও আব্দুল মোমেন ফেরদৌসসহ মোট ৪জন। আর বাদি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেলা পিপি কায়মুল হক রিংকু, বদিউল আলম সুজনসহ প্রায় ৩০জন আইনজীবী।
জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ আগস্ট কুমিল্লার পুলিশ লাইন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বহু ছাত্র-জনতা আহত হয়। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কুমিল্লা নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণসহ হামলার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ ২৬১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের অধিকাংশই আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ছাড়াও মামলায় আসামির তালিকায় আইনজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন।
১১ ফেব্রুয়ারি বেলা আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার সংগঠক মো. ইনজামুল হক রানা বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেন। ইনজামুল কুমিল্লা শহরতলির ডুমুরিয়া চাঁনপুর এলাকার মো. আমির হোসেনের ছেলে।
এই মামলার আসামিরা হলেন, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খোকন, আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, লাকসাম উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউনুস ভূঁইয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নূর-উর রহমান মাহমুদ, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁঞা, সাবেক সভাপতি আবদুল মমিন, সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জহিরুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল-আমিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।
পিপি কায়মুল হক রিংকু বলেন, হামলার মামলায় বাদি পক্ষ সকল আসামিকে কারাগারে প্রেরণের আবেদন জানায়। এসময় আদালত ৬জনকে কারাগারে পাঠায় বাকিদের জামিন মঞ্জুর করে।