খলিলুর রহমান ।।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের (ভিসিটি) ৮ম ব্যাচের সদস্য নাট্যকর্মী সোহাগী হজাহান তনুর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার(২০মার্চ) সকাল ১১টায় কলেজের মোতাহের হোসেন চৌধুরী কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের নিচ তলায় ভিসিটির কার্যালয়ে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভিসিটির পৃষ্ঠপোষক ও কলেজ উপাধ্যক্ষ মো. আবদুল মজিদ; ভিসিটির প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর জীতেন্দ্রনাথ তরফদার; ভিসিটি’র সভাপতি মো: সাব্বির আহমেদ;সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ;অর্থ সম্পাদক মো. ফয়সাল(আফ্রদী); প্রচার সম্পাদক খলিলুর রহমান ; সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক দীপিতা রায়; আপ্যায়ন সম্পাদক শশী; নির্বাহী সদস্য উম্মে হাবিবা, শশী,মাহমুদা,দীনা,সাইফুল ইসলাম মাহিন এবং অন্যান্য সদস্যরা উপস্তিত ছিলেন।
ভিসিটির সভাপতি মোঃ সাব্বির আহমেদ এর সঞ্চালনায় ভিসিটির পৃষ্ঠপোষক উপাধ্যক্ষ মো. আবদুল মজিদ বলেন, তনু আমাদের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলো এবং ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারে সাংস্কৃতিক চর্চায় অনেক এগিয়ে ছিল। তার মেধা এবং প্রজ্ঞায় জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কারও এনেছিল। তার এই নির্মম হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানাবো যত দ্রুত সম্ভব তনু হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য।
ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের প্রধান শিক্ষক উপদেষ্টা জীতেন্দ্রনাথ তরফদার বলেন, তনু যখন হত্যা হয় তখন আমি এই কলেজে ছিলাম। হত্যার কিছুদিন আগে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নৃত্যে সে প্রথম হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করে একদিন শুনি তনুর নির্মম হত্যাকান্ডের কথা! আজ নয় বছর হয়ে গেছে এখনো তনুর হত্যার কোন বিচারকার্য সমাধান হয়নি। যদি তনু হত্যার বিচারটা প্রথম দিকেই হয়ে যেত তাহলে হয়তো দেশে পরবর্তীতে এতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না । আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানাবো যেন তনু হত্যার সুষ্ঠু বিচার করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।
ভিক্টরিয়া কলেজ থিয়েটারের বর্তমান সভাপতি মোঃ সাব্বির আহমেদ বলেন। সোহাগী জাহান তনু আপু আমাদের ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের অষ্টম ব্যাচ এর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন৷ তনু আপুর হত্যার আজ নয় বছর পেরিয়ে গেল আমরা এখনো সুষ্ঠ বিচার পাইনি । তার পরিবারের আর্তনাদ এখনো আমরা বিন্দুমাত্র কমাতে পারিনি। সরকারের শক্ত পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন দেশে তনু হত্যার মত নির্মম হত্যাকাণ্ড গুম, খুন, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। দেশের নতুন মানুষকে কাছে নতুন প্রজন্মকে আমরা তনু হত্যার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তনু আপুকে আমরা ভুলিনি। এ জাতি কখনো তনুকে ভুলবে না। আমরা তনু হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বক্তব্যশেষে প্রথম ধাপে ভিসিটির মহড়া কক্ষে এবং দ্বিতীয় ধাপে কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সোহাগী জাহান তনুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে মামলার তদন্তে কেটে গেছে ৯ বছর। তবে দুই দফায় করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও তার মৃত্যুর কারণ ‘উল্লেখ’ করা হয়নি। তাই মামলার তদন্তে মৃত্যুর রহস্য বের না হওয়া এবং বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবার।