মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) রজব মাসের ২৭ তারিখ উর্দ্ধলোকে নভোমন্ডলে পবিত্র পরিভ্রমন করেছেন তা সাধারণ পরিভাষায় আরবীতে মিরাজ বলে পরিচিতি। মিরাজ ঘটনাটি আন্ত নাক্ষত্রিক ও গ্রহিক সমাধিক প্রচারিত ঘটনা। ইসলাম ও মিরাজ যেন দুধের মধ্যে নিহিত ননীর ন্যায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িত একটি বাস্তব ঘটনা। মহাঐশীবানী গ্রন্থ আল কোরআন ঘোষণা দিচ্ছেন ‘‘সুবহানাল্লাজী আছরা বি আবদিহী লাইলাম মিনাল মাসজিদিল হারামে ইলাল মাসজিদিল আকছাল্লাজি বারাকনা হাউলাহু লনূরিয়াহু মিন আইয়্যাতিন। ইন্নাহু হুয়াছ ছামীউম বাছির’’ । (সূরা বনী ইসরাইল)
অর্থ ঃ- তিনি পবিত্র মহিমাময় আল্লাহ যিনি তাঁর বান্দাহকে মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসায় রজনীযোগে ভ্রমন করিয়েছিলেন, যার পরিবেশ পরিমল্ডল আমি (আল্লাহ) বরকতময় করে দিয়েছিলাম তাঁকে (আমার সেই বান্দাকে) আমি আল্লাহর সকল নিদর্শনাবলী দেখাবার জন্য। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা পথ নির্দেশনা। পুনরায় আল্লাহ সূরা আন নজমের ১২-২৮ আয়াতে ঘোষণা করেন ,‘‘সে যা দেখেছে তোমরা কি সেবিষয়ে তাঁর সঙ্গে বিতর্ক করবে?’’ নিশ্চয়ই সে তাঁকে আরোকবার দেখেছিল, প্রান্তবর্তী কুল বা বড়ই বৃক্ষের নিকট, যার নিকটে আছে জান্নাতুল মাওয়া স্বর্গোদ্যান, যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারাই আচ্ছাদিত ছিল। তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুতও হয়নি। সে তাঁর প্রতিপালকের মহান নির্দশনাবলী দেখেছিল।’’
মহা প্রকৃতিক নিয়ামক আল্লাহ তায়ালা এই মিরাজ ঘটনাটিকে ঘটিয়ে কালাত্যয়ের মহানবী (সাঃ) পুতচরম ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে গোটা মানব জাতির সম্মানকে সমগ্র মহাপ্রসারমান সৃষ্টির মাঝে শ্রেষ্ঠত্বকে প্রদান করে রাখলেন যে মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তাই হযরত মাওলানা শাহ্ আবদুস সোবহান আল ক্বাদেরী (রঃ) বলেছেন
‘‘হো দরুদ আপ পা মেরাজ কি যানে ওয়ালে/ আনকি আন মেঁ ফের লওটকে আনে ওয়ালে/ রঞ্জ ছে ফিকরে ছে আফত ছে বালা ছে গম ছে/ আপ হেঁ উম্মতে আছি কে বাচানে ওয়ালে।’’
মিরাজ ঘটনাটি নিয়ে পৃথিবী কোন ডগমা বা ডকট্রিন পোষন করেন তা খতিয়ে দেখার সময় আমাদের হয়েছে এবং তা দেখেছিও। তবে স্পষ্ট করে আমরা এতটুকু বলতে পারি যে, মিরাজকে আমরা ফিজিক্যালি, সাইন্টিফিক্যালি,
ম্যাথামেটিক্যালি,এস্ট্রনমিক্যালি, আরগুস্মান্টালি, এস্ট্রেলি, মেন্টালজিক্যালি, বায়োলজিক্যালি, ইথারিক এরিয়েলি, সম্ভাব্য সবকয়টি দিক থেকে গবেষণা করে এ আত্ম প্রত্যয়ে উপনীত হয়েছি যে, রাসূলে কায়েনাত (সাঃ) স্বশরীরেই মিরাজ গমন করেছেন। জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা শুধু বিগটেড ফেনাটিসিজম বা গোড়ামীর একগুয়োমী তাও আমরা গ্রহণ করে ব্যক্তির ইস্পিত যুক্তিতেই বুঝিয়ে দেব যে তিনি স্বশীরেই মিরাজ করেছেন। মিরাজের ইলেক্ট্রা ম্যাগনেটিক থিওসফিতে ইহার সত্যদাশর্নিক বিষয় বস্তুটি হৃদয়ঙ্গম হতে পারলেই মানবের অসাধারন- সাধারন সম্পর্কিত প্রশ্নের পর্দাবৃত মলিনতা দূর করা সম্ভব। বিশাল সৃষ্টির প্রতি মানব হৃদয়ের ভালবাসা দিয়ে সময়ের সনাতন বা বহমান স্রোতের মধ্যে মানুষকেই বিধাতা সবকিছু জয় করার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দান করেছেন। হাইওয়ানাত বা পশুত্ব মনুষ্যত্বের মধ্যে তখন ভাইরাসের ন্যায় দূষিত করতে পারবে না, পারে নাই। তাই পুরুষোত্তম কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘তোর হৃদয়েরি তস্তরিতে দে শীরনী তৌহিদের / তোর দাওয়াত কবুল করবেন হযরত হয় মনে উমিদ/ ভূলে যা তোর দোস্ত-দুষমন হাত মিলাও হাতে / তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখীল ইসলামে মুরীদ।’’
মিরাজের তাত্বিক সত্য উপলব্ধি করতে হলে অতিন্দ্রীয় জ্ঞান পূর্বশর্ত। মিরাজের স্বাভাবিক বর্ণনা কমবেশী সাধারন জনগন সকলেই পুস্তক-পুস্তিকার মাধ্যমে জানি। তাই আলোচিত বিষয়টি পুনঃ উপস্থাপনা থেকে বিরত থেকে মানুষের জন্য কিছু সৃজনশীল বিষয়ের অবতারনা করতে প্রয়াস করলাম।
বস্তুতপক্ষে জগত দু প্রকারের আছে। একটি পদার্থ জগত এবং বিপরীতে অনস্তিত্বের বা আধ্যত্মজগত। মানুষের জীবনী শক্তি বা প্রাণ শক্তি অপদার্থের মাঝে অস্তিত্ববান। মানুষের রূহ বা আত্মিক উৎকর্ষ যার যত সাধনা দ্বারা করতে পারবে সে ততই নিরাকার অথচ ভূবনের রহস্যালোক সম্পর্কে জানতে পারবে।
মিরাজ আসে মিরাজ যায়। এই পুত ঘটনার আসা-যাওয়াতে আমাদের মানবীয় গুনাবলীর কতটুকু সাধন হয়েছে? মিরাজ থেকে আমরা কি শিক্ষা গ্রহণ করতে প্রয়াসী হয়েছি এবং পরিনামে সামাজিক -রাজনৈতিক তথা আন্তজার্তিক পার্থিব ও অপার্থিক কল্যাণ সাধন করতে পেরেছি?
প্রেমাবেষের পরমার্থজ্ঞানে আমরা কতটুকু বিশ্ব বিধাতার চীরঅম্লান নৈকট্য অর্জন করতে পেরেছি? মিরাজের আদর্শিক স্মরনকে সামনে রেখে আমরা কতটুকু ‘‘ আস্সালাতু মিরাজুল মোমেনীন’’ অর্থ নামাজ মুমিনের মিরাজ। মহানবী (সাঃ) এঁর এ হাদীস বানীর কার্যকারীতা অর্জন করতে পেরেছি এটাই হোক আজকে আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসা ও আত্ম সংশোধন।
লেখক পরিচিতি।।
মোঃ রুহুল আমিন সাবের সোবহানী আল ক্বাদেরী
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক
আরেফে রাব্বানী শাহ্ সোবহান রিসার্চ সোসাইটি, কুমিল্লা।
arsasrs.bd@gmail.com