মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি।।
স্মরণকালের সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার সবগুলো ফসলি মাঠ তলিয়ে গিয়েছিল। এতে এ উপজেলার পাকা আউশ ধানসহ রোপণ করা আমন চারার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে কৃষকরা আবারও আমন আবাদ করেন। তবে ভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে আবারও আমন আবাদ বাধাগ্রস্ত হয়।
তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে কৃষকরা আবারও মনোনিবেশ দেন আমন আবাদে। এখন বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। এ দৃশ্য কৃষকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে এবার দুর্যোগের মুখে পড়ে বিলম্বে আমন আবাদের কারণে কৃষকদের মধ্যে ভালো ফলন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে প্রতিকূলতা কাটিয়ে ফসল আবাদ করতে পেরে উৎফুল্ল কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, আমন আবাদ বন্যার কারণে এমনিতেই পিছিয়ে পড়েছিল, তার উপর আমন ধানের চারা সংকট ও ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ আরও পিছিয়ে পড়ে। এর ফলে এ বছর আমন ধানের ফলন আশানুরূপ হবে না। ধান যাই হোক এসব জমি থেকে গো-খাদ্য তো পাওয়া যাবে। এতেই সন্তুষ্ট তারা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ৩ হাজার ৭৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার এ উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর। এবার ভয়াবহ বন্যা শেষে নতুনভাবে অধিকাংশ কৃষককে আমন বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। বন্যা শেষে আবারও ভারি বৃষ্টিতে বন্যা শেষে রোপণ করা কৃষকদের ৫০ হেক্টরের বেশি আমন ধানক্ষেত তলিয়ে যায়। এতে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়েছিল। কোনো কোনো কৃষক পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারা সংগ্রহ করে আমন আবাদ নিশ্চিত করেছিলেন। তবে বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ সাধারণভাবেই পিছিয়ে পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে বিলম্বিত আমন চাষে কৃষকরা কতটুকু ভালো ফলন পাবে তা আরও পরে বোঝা যাবে।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি আমন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কিছুদিন আগেও বিবর্ণ ছিল যেসব মাঠ সেসব মাঠ এখন আমন ধান গাছের সবুজের দখলে। কৃষকরা ফসলের পরিচর্যায় মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু কিছু জমির ধান গাছে ধানের শিষ বেরিয়েছে। যেসব এলাকার জমি থেকে বন্যার পানি আগে নেমে গেছে সেসব জমির ধান পুষ্ট হতে শুরু করেছে। অধিকাংশ ক্ষেতে এখনো কচি সবুজ ধানগাছ। তবে যেসব জমির ধান বন্যা শেষে ভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব জমির ফসল অতোটা ভালো হয়নি। আমন আবাদ নিশ্চিত করতে পেরে তাতেও কৃষকরা সন্তুষ্ট।
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভয়াবহ বন্যায় আমাদের পাকা ধান নষ্ট হয়েছে। জমিতে বেড়ে ওঠা আমন ধানের চারা নষ্ট হয়েছে। এতে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। ফসলের মাঠ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলে আমরা আবারও জমিতে আমন আবাদ করেছিলাম। ভারি বৃষ্টির ফলে আবারও আমরা ক্ষতির মুখে পড়ি। তবে এখন আমাদের জমিভরা আমনের কচি ধান গাছ। ভালো ফলনের আশায় আমরা ফসল পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি।
কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, প্রথমে বন্যার হানা, তারপর ভারি বৃষ্টি। আমন আবাদ নিয়ে আমরা অনিশ্চয়তায় ভুগছিলাম। তবে এখন আমাদের জমিতে সবুজ আমন ধান শোভা পাচ্ছে। এ বছর দেরিতে আমন আবাদ করেছি, মনে হচ্ছে এবার ভালো ফলন পাবো না। তবু উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ফসলের পরিচর্যা করছি। ভালো ফলন না পাই গরুর জন্য খড় তো পাওয়া যাবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা বলেন, প্রথমে ভয়াবহ বন্যা, তারপর ভারি বৃষ্টি, এতে কৃষকরা বারবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কৃষকরা ধৈর্যশীল, তারা সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। এখন ফসলের মাঠ সবুজে ভরা। তবে বিলম্বে রোপণ করা জমিগুলো আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এসব জমিতে ফলন কী পরিমাণ হবে, ধান কতটা পুষ্ট হবে, ধান চিটা হয় কি না, তা আরও পরে বোঝা যাবে। তবে কৃষকদের লাভবান করার লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে।