বার্ডে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত
সাকলাইন যোবায়ের।।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি বিষয়ক প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্প’ এর অধীন দুই মাস মেয়াদী রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং (ফ্রিজ ও এসি মেরামত/সার্ভিসিং) প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান ২৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) বার্ড, কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) সহযোগিতায় কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষিত সুবিধাবঞ্চিত ২৭ জন প্রশিক্ষণার্থী দুই মাস মেয়াদী রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং ট্রেডের এ প্রশিক্ষণ কোর্সটি গত ২৬ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিল। কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বার্ড-এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত) দায়িত্ব ড. আবদুল করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা ক্ওমী মাদরাসা সংগঠনের সভাপতি পীর আল্লামা নুরুল হক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বার্ডের প্রকল্প বিভাগের পরিচালক রঞ্জন কুমার গুহ, পরিচালক (প্রশিক্ষণ) আবদুল্লাহ আল মামুন, প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বার্ডের যুগ্ম-পরিচালক আবদুল্লাহ আল হুসাইন, কুমিল্লা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সট্রাকটর জনাব মাকসুদ এবং উক্ত কোর্সের দুইজন প্রশিক্ষণার্থী।
উল্লেখ্য, এটি দেশে সরকারী উদ্যোগে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রথম প্রায়োগিক গবেষণা। প্রকল্পটির অধীনে ২০২১ এবং ২০২২ সালে কয়েকটি ব্যাচে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য “বেসিক কম্পিউটার এপ্লিকেশন ও আইসিটি” বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয় এবং বেশ কিছু মাদ্রাসায় কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়। এসব প্রশিক্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে অনেক মাদ্রসা বার্ডের সাথে যোগাযোগ করে এ উদ্যোগটির প্রশংসা করেন এবং এ প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অংশগ্রহণকারীগণ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন National Skill Standard Basic পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২৭ জনের মধ্যে ২১ জন (৭৮%) প্রথমবারেই এতে সফল হন।
দুজন প্রশিক্ষণার্থী তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বার্ড এর এ উদ্যোগের ফলে তাঁরা এমন একটি প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে বার্ডের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আশা করেন, এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লব্ধ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা একটি সম্মানজনক জীবিকা বেছে নিতে পারবেন। তাঁরা এধরণের আরও বেশি বেশি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের মত বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে বার্ড তথা সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন।
মহাপরিচালক বার্ড ড. আবদুল করিম বলেন, বার্ড তার সূচনালগ্ন থেকেই ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কাজ করে আসছেন। ষাটের দশকে ড. আখতার হামিদ খানের ইমামদের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে কার্যকর করার উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তাঁরা এ সমাজকে এবং রাষ্ট্রকে আরও বেশি সেবা দিতে পারবেন। মহাপরিচালক, বার্ড আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আজকে যে ২৭ প্রশিক্ষণার্থী এই প্রশিক্ষণ পেল, ভবিষ্যতে তাঁরা প্রত্যকেই একেকটি প্রতিষ্ঠান দাড় করাবেন। তিনি আরও বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সারা দেশে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার ভাবনা তাদের রয়েছে। ভবিষ্যতে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য আরো কিছু কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন করার চিন্তাও আছে। এ উদ্যোগটি সফল হলে এ ধরনের প্রকল্প সারা দেশে বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা বিষয়ে সরকারের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
এবং কঠোর পরিশ্রমী। ফলে এরা খুব কম সময়েই অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং ট্রেডে যারা প্রশিক্ষণ নেন, তাঁদের শতকরা ৫০ ভাগ সাধারণত প্রথম চেষ্ঠায় কারিগরি অধিদপ্তরের National Skill Standard পাশ করে থাকে। কিন্তু খুব বেশি গণিত-ইংরেজি না জানা এবং এধরণের পরীক্ষার সাথে অভ্যস্থ না হয়েও কওমী মাদ্রাসা থেকে আগত এ ব্যচটির প্রায় ৮০% প্রথম চেষ্টাতেই পাশ করে গেছে।
উল্লেখ্য, কওমী মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয় বলে এখান থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা আনুষ্ঠানিক কোনো খাতে কাজ করতে পারে না। তাছাড়া ধর্মীয় জ্ঞানের বাইরে অন্য কোনো বৃত্তিমূলক কিংবা কারিগরি দক্ষতা না থাকার কারণে তাদের কর্মক্ষেত্র কেবল মসজিদ-মাদ্রাসাতেই সীমাবদ্ধ। বিরাট এই জনগোষ্ঠীর জন্য কারিগরি বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে তারাও দক্ষ কর্মী হিসেবে চাকুরী কিংবা সকর্মে নিয়োজিত হতে পারেন।
এই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), কুমিল্লা একটি প্রায়োগিক গবেষণার আওতায় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ও আইসিটি, ড্রাইভিং, ফ্রিজ-এসি সার্ভিসিং, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যালসহ অন্যান্য ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে করে এই শিক্ষায় শিক্ষিতরা ধর্মীয় জ্ঞানের বাইরে কারিগরি বিষয়েও দক্ষ হতে পারেন।