1. [email protected] : Dainik Cumilla : Dainik Cumilla
  2. [email protected] : Habibur Monna : Habibur Monna
  3. [email protected] : unikbd :
মানুষ মানুষের জন্য - Dainik Cumilla
শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ঢাকাস্থ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উন্নয়ন সংস্থার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কুমিল্লা-৯ নির্বাচনি আসন পুনর্বহাল ও খসড়া বাতিল দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে নাঙ্গলকোটে বিএনপির বিজয় র‌্যালী বুড়িচংয়ে মসজিদে নামাজরত যুবককে ছুরিকাঘাত: অভিযুক্ত ২ জন গ্রেপ্তার নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন আগামী দিনের বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তা নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিরাই ঠিক করবেন: ডা. জাহিদ হোসেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে লাকসামে জামায়াতের গণমিছিল বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ চৌদ্দগ্রামে জুলাই শহীদ জামশেদ ও মাওলানা শাহাদাতের কবর জিয়ারত করলো জামায়াত নাঙ্গলকোটে বৃষ্টিতে ভিজে জামায়াতের গণমিছিলে জনতার ঢল চৌদ্দগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জামায়াতের গণমিছিল

মানুষ মানুষের জন্য

  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৪০৪ বার পঠিত

 

খলিলুর রহমান

গত কয়েকদিন যাবৎ টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ডুম্বুর গেট খুলে দেয়ার কারণে তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের নোয়াখালী,
ফেনী এবং কুমিল্লা জেলার অনেক অঞ্চল। ঘরবাড়ি ডুবে গেছে মানুষের। বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আাবার কোমর সমান পানি নিয়ে নিজের ঘরে থাকার চেষ্টা করছেন। মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই ছাড়তে চাচ্ছেন না অনেকে।

তিন জেলার বন্যাকবলিত মানুষদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ। শিক্ষার্থী,সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন দুর্যোগে কবলিত মানুষদেরকে নিঃস্বার্থভাবে খাদ্য,বস্ত্র এবং চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছে । ‘মানুষ মানুষের জন্যে’- এই নীতিবাক্যকে ধারণ করে বাংলার স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্যোগকালীন সংকট উত্তরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

বিবেকের তাড়নায় আমরাও এই মহৎ কাজের সাথে যুক্ত হয়েছি। আমার বন্ধু তন্ময়,প্রান্ত,শামীম,রাতুল,টিটন,ঝুমা,মীম,শর্মিলা,কানিজ,সামিয়ার,সুদীপ্ত,রিহান সহ আমরা মোট ১৪ জন স্বেচ্ছাসেবী কুমিল্লা জেলায় ত্রাণ এবং ঔষধ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিই। এর আগে আমি এবং আমার বন্ধুরা কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ট্রাফিক কন্ট্রোল পর্যন্ত সব জায়গায় সরব ভূমিকা পালন করেছি। দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা এর ব্যতিক্রম করিনি। কোথায় কিভাবে ত্রাণ সরবরাহ করা যায় সে ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখার দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। আমি ছাড়া আমার সব বন্ধুরা ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে ত্রাণের জন্য ২৩ এবং ২৪ তারিখ সারাদিনভর অর্থ সংগ্রহ করে। তারপর তালিকা অনুযায়ী খাবার এবং ঔষধ কিনে প্যাকেট করে নেয়। প্রায় ২০০ পরিবারেকে ত্রাণ দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবাই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে নিই।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে বড় ট্রাকে করে ত্রাণসহ আমার ১২ জন বন্ধু ২৫ তারিখ(রবিবার) ফজরের পরে রওনা দেয়। আমি ২৫ তারিখ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর ফজরের নামাজ শেষ করে হালকা নাস্তা খেয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে মানবতার সেবার জন্য বের হয়ে গেলাম। ব্যাগে আগে থেকেই বাড়তি জামাকাপড় এবং কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে রেখেছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে কুড়াখাল গিয়ে সিএনজিতে করে চান্দিনা গেলাম। নেমে আমার ঢাকার বন্ধুদের মাধ্যমে সবার সাথে পরিচিত হলাম। হালকা চা-নাস্তার পর আমি তন্ময়কে যাওয়ার রুট এবং পরিস্থিতি জানালাম। ত্রাণ ভর্তি গাড়ি এবং এ কাজে সবার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগলো। একটা মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করতে পারছি- এটা ভেবে মনের মাঝে একটা স্নিগ্ধ অনুভূতি দোলা দিয়ে গেল।

আমরা বুড়িচংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। আমি যেহেতু যাতায়াত রুটের দায়িত্ব নিয়েছি,তাই আমি সামনে বসে ড্রাইভারকে ইনস্ট্রাকশন দিতে থাকলাম। আমরা আলেখারচর দিয়ে ঢুকে সোজা শহরে গেলাম। মাঝখানে ক্যান্টনমেন্টে নাস্তা করার জন্য ২০ মিনিট বিরতি নিলাম। গাড়ি শাসনগাছা পৌঁছার পর ড্রাইভারকে বাঁয়ে বাঁক নিতে বললাম। কুমিল্লা-বুড়িচং সড়ক ধরে আমাদের গাড়ি এগোতে থাকল। পালপাড়া ব্রিজের কাছেই আমরা ডুবন্ত বাড়িঘর দেখতে পেলাম। এখানে কিছু জায়গা নিচু হওয়ার কারণে ডুবে গেছে। আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম গলা পানি পাড় হয়ে হলেও আমরা আমাদের বিপদগ্রস্ত ভাইবোনদের ঘরে খাবার এবং ঔষধ পোঁছে দিব। কালখরপার মোড় থেকে বামে বাঁক নেয়ার ইচ্ছা ছিল আমাদের। কিন্তু বামে খুব বেশি পানি এবং রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে এদিক দিয়ে ঢুকা সম্ভব না। গাড়ি ডানে মোড় নিল। আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে আরও ৫-৬ টি গাড়ি ত্রাণ নিয়ে চললো।

তারপর বানাশুয়া,শিমপুর হয়ে জনতা বাজার। সেখান থেকে কুমিল্লা-বি-বাড়িয়া সড়ক ধরে আগ্গাপুর হয়ে আমরা পৌঁছলাম দক্ষিণ গ্রাম বাজারে। স্থানীয় কয়েকজনের কাছে জানতে পারলাম রাজাপুরে ত্রাণ কম পৌঁছেছে। সেখান থেকে রাজাপুরের দিকে যেতে থাকলাম। গাড়ি কিছুটা ভিতরে যাওয়ার পর দেখলাম চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। বাড়িঘর সব ডুবে গেছে। প্রথমে ড্রাইভার এবং স্থানীয় কিছু ত্রাণ সুবিধাভোগী মানুষ বলল- গাড়ি সামনে যাবে না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারলাম গাড়ি সামনে যাবে। কারণ ইতিমধ্যে কয়েকটা বড় গাড়ি ওদিকে গিয়েছে। আমাদের গাড়ি বড়, রাস্তায় থাকা হাঁটু সমান পানির কারণে কোন সমস্যাই হবে না।

আমরা যতক্ষণ পারলাম সামনে গেলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা দেখলাম আরো অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সামনের দিকে পানির স্রোত আছে তাই অনেক গাড়ি যাচ্ছে না। তবে ট্রাকগুলো ঠিকই যাচ্ছে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে ত্রাণের বস্তা গুলো নামিয়ে মাথায় করে নিতে লাগলাম। এক এক করে আমরা সবাই ত্রানের বস্তাগুলো নিয়ে রাজাপুর রেললাইনের কাছে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলাম। আমাদের মধ্যে এমন কয়েকজন ছিল যারা জীবনে কখনো মাথায় বোঝা নেয় নি। অথচ আজকে নিজ দেশের বিপদগ্রস্ত মানুষদের জন্য এত পরিশ্রম করছে। কোমর সমান পানি ভেঙ্গে আমরা ত্রানের বস্তা গুলো নিয়ে রেললাইনে রেখেছি। তার ওপর আবার ভাঙ্গা রাস্তা। জোরে হাটতে গেলেই পায়ের ভিতরে পাথর ঢুকে যায়।


বস্তা সব আনা শেষ হওয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে নিই। তারপর স্থানীয় কিছু যুবকদের সহায়তায় আমরা রাজাপুর গ্রামের ভিতরে ত্রাণ নিয়ে ঢুকি। আমাদের পরিসর খুব বেশি বড় ছিল না। তাই স্থানীয়দেরকে জানিয়ে দেই যে, আমরা বেছে বেছে যারা ত্রাণ পায়নি তাদেরকে দিতে চাই। গ্রামের আশেপাশে এবং গ্রামের ঘর গুলোতে হাঁটুর উপরে পানি। কিছু জায়গা আবার কোমর সমান পানি। আমরা অবাক হলাম যে এত প্রতিকূলতা এবং কষ্ট সহ্য করে মানুষ নিজের ঘরে থাকছে। তারা নিজেদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়তে চাচ্ছে না। উঠান এবং বাড়ির আঙ্গিনা দিয়ে পানির স্রোত নেমে যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে পানির উচ্চতা আরো বাড়বে। আমরা সাধ্যমত অনেকের ঘরে ত্রাণ এবং ঔষধ দিলাম। ত্রাণ দেয়ার সময় আমরা অনেকের চোখে মুখে কেমন একটা তৃপ্তি লক্ষ্য করলাম। আমরা কোমর সমান পানি পানি দিয়ে গিয়ে তাই করে তাদের ঘরে ঘরে ত্রান দিচ্ছি। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের জন্য মন থেকে দোয়া করছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। অনেক জায়গা ঘুরে এমনিতেই অনেক সময় চলে গিয়েছিল। আমরা যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে ত্রাণ দিয়ে শেষ করলাম। আমাদের সাথে স্থানীয় যে যুবক ভাইয়েরা কাজ করেছিল তাদেরকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আমরা গাড়ির কাছে ফিরে আসলাম।

ফজরের পর থেকে মাগরিবের পর পর্যন্ত একটানা পরিশ্রমে আমাদের শরীর ক্লান্ত হলেও চোখে মুখে ছিল প্রশান্তির হাসি। আমাদের দেশের দুর্যোগকালীন সময়ে কিছু বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পেরেছি, এটা যে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা স্মৃতি। এই স্মৃতি আমাদেরকে আনন্দ দিবে আজীবন। আমাদেরকে মানবিক কাজ করতে সবসময় উদ্বুদ্ধ করবে। আমরা আলাপ আলোচনা করতে করতে চান্দিনা এসে পৌঁছলাম। মহাসড়কের পাশের একটি হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে আমার ঢাকার বন্ধুদেরকে বিদায় জানালাম। বাসায় ফিরে বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম নিরাপদে পৌঁছেছি। তারপর বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। একটা অন্যরকম প্রশান্তির ঘুম।

শেয়ারঃ

এই জাতীয় অন্যান্য সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫ | দৈনিক কুমিল্লা    
Developed By UNIK BD