কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দিমু’ বলে হুমকি দেওয়ার পর ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন। ২০১৪ সালে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুর রহমানকেও থাপ্পড় মারতে তেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটায় জাকির।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠে। পরে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবিষ্যতে অশালীন আচরণ করলে চাকরিচ্যুতিসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত প্রশাসন নিতে পারার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ২০২২ সালে জাকিরের দ্বারা ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষককে হেনস্তা করা হয়। একই বছরের জানুয়ারি মাসে জাকিরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কক্ষে তালা দিয়ে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবু তাহেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে অধ্যাপক তাহের দায়িত্ব পালনে সমন্বয়হীনতা ও অস্বস্তিবোধ করছেন জানিয়ে ঐ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে রহমান স্যার আপ্যায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। সেখানে কনফারেন্স রুমে অর্থমন্ত্রী সহ কয়েকজনকে আপ্যায়ন করছিলেন আবদুর রহমান। এসময় কাকে কি পরিমাণ খাবার দিতে হবে সেই সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা ছিল আপ্যায়ন কমিটির। দায়িত্ব পালনের এক পর্যায়ে আপ্যায়ন কমিটির অনুমতি ছাড়াই নিজের মতো করে খাবার পরিবেশন করতে থাকে জাকির। বিষয়টি আবদুর রহমানের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি জাকির কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি তো কমিটির সদস্য না। আমাদের তো একটা হিসাব আছে।’ তখন জাকির উচ্চবাচ্য ঐ শিক্ষকের সাথে উচ্চবাচ্য করেন এবং একপর্যায়ে থাপ্পড় মারেন।
এদিকে কর্মকর্তা ও সাবেক শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. আবু তাহের বলেন, তিনি এর আগেও এক শিক্ষককে থাপ্পড় দিয়েছেন এবং অসৌজন্য আচরণ করেছেন। সিন্ডিকেট কর্তৃক তার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তও রয়েছে। তিনি যদি ভবিষ্যতে অশালীন আচরণ করেন তাহলে চাকরিচ্যুতিসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিতে পারবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আইনুল হক বলেন, এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা জাকির এক শিক্ষকের সাথে অশোভন আচরণের জন্য একটি শোকজ লেটারও পেয়েছিলেন। গতকালও তিনি শিক্ষকদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা কোনো শুধু শিক্ষকের সাথেই নই, এমন আচরণ কোনো শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কারো সাথে হওয়া উচিত না। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, ঐদিন উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য অবশ্যই একটা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন নেয়নি সেটা জানি না। আমি উপাচার্য মহোদয়কে পরামর্শ দিয়েছিলাম আপনি একটা তদন্ত কমিটি গঠন করুন। কিন্তু প্রশাসন কোনো তদন্ত কমিটি করে নাই। উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষকদের হুমকি দেওয়ার সাহস জাকির কোথা থেকে পায়! সেটা প্রশাসনের ইন্ধনেই হয়েছে। শিক্ষক সমিতি যে পদক্ষেপ নিবে সেটার প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
তিনি ২০১৩ সালে কর্মকর্তা নিয়োগ পরিক্ষায় ফেল করা প্রার্থী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নথি জালিয়াতি, সহকর্মী ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ, হেনস্তা ও গালমন্দ, জামাত-শিবির ট্যাগ লাগিয়ে হয়রানি, বিভিন্ন নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, শিক্ষকেরা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা। আমি শিক্ষকদের সাথে এমন কোনো আচরণ করি নাই।
২০১৪ সালে এক শিক্ষকের দিকে তেড়ে আসেন এবং ঐ শিক্ষকে হেনস্তা করেন এ কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু সেটা প্রমাণিত হয়নি।
শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির কাছে কোনো প্রমাণ ছিল না। আমাকে কোনো শোকজ লেটার দেওয়া হয় নাই।