খলিলুর রহমান।।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বই পড়া আমার প্রিয় সখ। যেখানেই বই দেখেছি,ঝাপিয়ে পড়েছি। বইটি আমার সময় উপযোগী কিনা,বিবেচনা না করেই পড়া শুরু করতাম। খুব একটা আগ্রহ না থাকলেও,পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পাঠ্যবই পড়তে হতো। পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার আগ্রহের আকাংখা থাকে তুঙ্গে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অনেকে খোঁজে ম্যুরাল,আমবাগান আর ফুলের বাগান। আমি খুঁজেছি লাইব্রেরি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি আমারও আগ্রহ আছে অনেক। তবে বইয়ের প্রতি টানটা একেবারেই অন্যরকম কাজ করে ।
প্রথমদিন যখন ভিক্টোরিয়ার মোতাহের হোসেন চৌধুরী গ্রন্থাগারে গিয়েছিলাম স্টুডেন্ট আইডি না থাকায় লাইব্রেরিতে ঢোকার অনুমতি পাই নি । আমার মনে হলো স্বর্গের দুয়ার ঠেলে স্বর্গোদ্যানে সেদিন আর ঢুকা হলো না। প্রথম বর্ষে যারা ভর্তি হয়েছে তার আইডি কার্ডের কার্যক্রম পুরোপুরি শেষ হয়নি। পরেরবার কলেজে গিয়ে স্টুডেন্ট আইডির পরিবর্তে ভর্তি ফরমের ফটোকপি দিয়ে ঢুকলাম ভিক্টোরিয়ার সর্গোদ্যানে। চারপাশ অবলোকন করে আমি একেবারে থ। আহ! এত চমৎকার পরিবেশ, মন প্রাণ একেবারে জুড়িয়ে গেল।
লাইব্রেরির সাদা মেঝে একদম পরিষ্কার,ঝকঝকে তকতকে। তাকালে চেহারা দেখা যায় যেন। বসে বই পড়ার জন্য আছে উন্নতমানের কাঠের মজবুত চেয়ার টেবিল। অসাধারণ বুক শেলফে বিভাগ অনুযায়ী সারি সারি সাজানো গুছানো অসংখ্য বই। গল্প,কবিতা
,উপন্যাস, ইতিহাস সহ কত রকমের বই আমার চারদিকে। আমি খুব তৃপ্তি নিয়ে অনেকক্ষণ দেখেছি একটার পর একটা শেলফ। দেখলেই পড়তে মন চাইবে যে কারো। গরমে আরামের জন্য রয়েছে উন্নতমানের এয়ার কন্ডিশনার এবং সিলিং ফ্যান। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আছে সিসি ক্যামেরা। এমনকি আলো বাতাসের অবাধ চলাচলের জন্য যথেষ্ট দরজা জানালাও রয়েছে। লাইব্রেরির পরিবেশ এতই চমৎকার যে,এয়ার কন্ডিশনার আর ফ্যান না থাকলেও স্বাচ্ছন্দ্যে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা যাবে। লাইব্রেরিতে সবাই আসছে,বই পড়ে আবার চলে যাচ্ছে। কেউ কোন কোলাহল করছে না। শান্ত, নীরব এবং এ যেন অপার্থিব আনন্দের এক জায়গা। এর আগেও অনেক লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করেছি আমি। কিন্তু এত সুন্দর অনুভূতি উপভোগ করিনি।
অনেকদিন আগে আমার প্রিয় একজন লেখকের দেয়া একটা বক্তব্যে শুনেছিলাম- একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো তার লাইব্রেরি। আমার মনে হয়েছে আমাদের ‘মোতাহের হোসেন চৌধুরী গ্রন্থাগার’ ভিক্টোরিয়া কলেজের সবচেয়ে সেরা জায়গা,সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ।
আমার বিশ্বাস,পুরো জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো মানুষ তৈরি করতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ‘মোতাহের হোসেন চৌধুরী গ্রন্থাগার’ ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে । এই লাইব্রেরির বদৌলতে,এই কলেজ থেকে জন্ম নেবে আগামীর সূর্যসন্তান, কালের মহানায়কেরা।