শফিউল আলম রাজীব, দেবীদ্বার :
দলীয় শৃংঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডের অভিযোগে দেবীদ্বার উপজেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম. শফিউদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগ। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে অভিযুক্ত উপজেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম. শফিউদ্দিন বলছেন কমিটি স্থগিত এবং কারন দর্শানো নোটিশ গঠনতন্ত্র বিরোধী। গঠনতন্ত্রের নিয়ম মেনেই উপজেলা কমিটির কার্যকরী সভা (৬মে) শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।
গত বুধবার (৩মে) কুমিল্লা উত্তর জেলা আ’লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত এক পেইডে ওই কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি সমন্বয়হীনতার অভিযোগে কেন্দ্রীয় দায়ীত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের পরামর্শে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি স্থগিত করে দায়ীত্বপ্রাপ্ত ৭ জনকে নিয়ে সমন্বয়ে কমিটি করার কথা বলা হয় এবং গত ৭ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে নির্বাচিত ৬ জন ব্যতীত কমিটির বাকী ৬৫ সদস্যের কার্যক্রম স্থগিত করা হয় কিন্তু সমন্বয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করে দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গ করে কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছেন এবং শনিবার (৬ মে) কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহ্বান করেছেন। আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানিয়ে আগামী ৭ সাত দিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বরাবর লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য এবং ৬ মে ডাকা কার্যনির্বাহী কমিটির সভা স্থগিত করার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
উল্লেখ্য, ২৬ বছর পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন সরকারের সভাপতিত্বে এবিএম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব- উল আলম হানিফ এমপিসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনে একেএম সফিউদ্দিনকে সভাপতি, মোস্তফা কামাল চৌধূরীকে সাধারন সম্পাদক, একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টারকে সহ-সভাপতি, অধ্যক্ষ মো. হুমায়ুন কবির ও এজাজ মাহমুদকে যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকারকে সদস্য করে ৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে আংশিক কমিটি ঘোষনার মধ্যে দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।
পরবর্তীতে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ৭ সদস্যের সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করে দেন। সমন্বয় কমিটির সদস্যরা হলেন, কুমিল্লা (উঃ) জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব রোশন আলী মাষ্টার, স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, বিদায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন সরকার, সাধারন সম্পাদক একেএম মনিরুজ্জামান মাষ্টার, বর্তমান কমিটির সভাপতি একেএম সফিউদ্দিন এবং সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধূরী। ওই কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে ঘোষণার কথা থাকলেও আভ্যন্তরীন কোন্দলে তা সম্ভব হয়নি।
তারপর প্রায় সাড়ে ৪ মাস পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী জেলা সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষরে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ তালিকা উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। ঘোষিত ও জেলা কমিটির অনুমোদীত কমিটির ৬৫ জনের নামের তালিকা সমন্বয় না করে এক পেশা ও বিতর্কীত কমিটি আখ্যা দিয়ে দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধূরী অভিযোগ করলে কুমিল্লা (উঃ) জেলা সভাপতি ম. রুহুল আমিন পুন:রায় গত ২৬ জানুয়ারী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত কমিটি স্থগিত এবং উক্ত কমিটির ব্যানারে কোন ধরনের দলীয় বা অন্যান্য কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। তবে সম্মেলনে ঘোষিত ৬ সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনায় কোন বাঁধা থাকবে না বলেও উল্লেখ করা হয়। বাকী ৬৫ জন সদস্যের কার্যক্রমে ওই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চৌধূরী বলেন, সম্মেলনের দিন কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভাপতি- সাধারন সম্পাদকসহ ৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৭১ সদস্যের পূর্ণঙ্গ কমিটি গঠন করতে ৭ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যাদের সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না করায় জেলা কমিটি ৭১ সদস্যের ওই কমিটির ৬৫ সদস্যকে কমিটির সদস্য হিসেবে দলীয় সকল কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। পরবর্তীতে সমন্বয় হীনতার অভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সংশোধন করে করা হয়নি। এরই মধ্যে কমিটির ব্যানারে বেশকিছু কর্মসূচী পালন করে। এমনকি ৬ মে (শনিবার) সভাপতির স্বাক্ষরে কার্যকরি কমিটির সভা ডাকেন। বিষয়গুলো জেলা কমিটির দৃষ্টিগোচর হলে ৫ মে (বুধবার) জেলা সভাপতি ৬ মে ডাকা কার্যকরি কমিটির সভা স্থগিতের নির্দেশ দেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি একেএম সফিউদ্দিন বলেন, আগামীকাল (৬মে) শনিবার সকাল ১০টায় উপজেলা সদরের রৌশন ভিলায় ডাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভা যথা সময়ে যথা নিয়মেই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র মেনেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। গঠনতন্ত্রে কোন কমিটি বাতিল, স্থগিত বা কারোর বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হলে তা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় এবং জেলা কমিটির কার্যকমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর সিদ্ধান্ত সভাপতি সাধারন সম্পাদকের স্বাক্ষরে হয়। জেলা সভাপতি কর্তৃক এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রজ্ঞাপন জারী করা, কারোর বিরুদ্ধে কারন দর্শানোর নোটিশ করা, কমিটি স্থগিত বা বাতিল করা, কমিটির সভা স্থগিত করা গঠনতন্ত্রানুযায়ী বৈধ নয়। তাই জেলা সভাপতি কতৃক উক্ত কমিটির স্থগিতাদেশ এবং কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা স্থগিতও গঠনতন্ত্র এলাউ করেনা। তাই আমরা নির্ধারিত দিনে, যথা সময়ে সভা করবো।