মোঃ রেজাউল হক শাকিল, ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ভয়াবহ বন্যায় পাকা আউশ ধান দীর্ঘদিন পানির নিচে ঢুবে থাকায় নষ্ট হয়ে মাটিতে মিশে তা থেকে গজায় চারা। পানি কমার পর পুরো আউশ ক্ষেত পরিনত হয়েছে বীজতলায়। আমনের মওসুমের শেষাংশে নিরূপায় হয়ে শত অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা এসব চারা জমিতে রোপন করেন। তাদের সকল শঙ্কা দূর করে ধান কাটার সময় ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর বন্যায় ঢুবে থাকা আউশ ধান থেকে তৈরি হওয়া চারা দিয়ে আমন চাষ করেছিলেন এ উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু তারা জানতেন না ভিন্ন প্রজাতির এই চারা লাগিয়ে তা থেকে কোনও ফসল হবে কিনা। উপজেলা কৃষি অফিসও সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি এই চারা দিয়ে আশানুরূপ ফলন হবে কিনা।
পাকা আউশ সংগ্রহ ও রূপা আমন ধান রোপনের সময় ভারত থেকে আসা উজানের ঢল ও বন্যার পানির স্রোতে তলিয়ে গোমতী নদীর চরে আবাদ হওয়া পাকা ও আধাপাকা আউশধান নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মাটিতে মিশে যাওয়া এসব আউশধান থেকে পুরো চরে গজায় চারা। রূপা আমনের চারা সংকটের কারনে তখন চরে গজানো এসব আউশধানের চারা তোলে আমনের জমিতে আবাদ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। চরে কারোর কোন নির্ধারিত কোন বীজতলা ছিলনা। যার যেখানে থেকে ভালো লেগেছে সেখান থেকেই ধানের চারা তোলে নিয়ে জমিতে রোপন করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, প্রবল বন্যা শেষে পানি নেমে যেতেই আমন চাষে নেমে পরেছিলেন চাষীরা। তবে বন্যায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমনের চারা সংকটে পরতে হয় তাদের। অন্য জেলা থেকে চারা সংগ্রহের সুযোগ থাকলেও দাম লাগামহীন ছিল। ফলে চারা সংগ্রহ করতে পারেননি অনেক কৃষক। এতে অনাবাদি হয়ে পড়েছে উর্বর জমি। ওই সময় বন্যায় নষ্ট হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়া আউশধান থেকে গজানো চারা এসব অনাবাদি জমিতে আবাদ করেছিলেন কৃষকরা।
মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক জালাল হোসেন, জসিময় উদ্দিন সরাকার, আলম সরকার, গণি মিয়া ও আসাদনগর গ্রামের মুকবুল হোসেন ভূইয়া বলেন, বন্যার কারণে আমন ধানক্ষেত দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় সম্পূর্ণ পঁচে যায়। বন্যার পানি নেমে গেলে সিজনের মঝামাঝি নতুন করে বীজতলা তৈরি সম্ভব না হওয়ায় জমি পতিত পরেছিল। তখন গোমতীর চরে পানি কাদায় নষ্ট হওয়া ধান থেকে গজানো চারা দিয়ে পতিত জমিগুলোতে আমন চাষ করেছিলাম। আমরা জানতাম না এ থেকে কোনো ফসল পাবো কিনা। কিন্তু জমি ফেলে না রেখে তখন ধান চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। নষ্ট হওয়া ধান থেকে গজানো চারা দিয়ে চাষ করা জমির এসব ধান এখন কাঁটা পরেছে। বিগা প্রতি ফলন হয়েছে ১৮ থেকে ২০ মন। ফলন ভালো হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, চলতি বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানিতে বর্ষা মৌসুমের দুটি ধান ফসল তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই উপজেলার ৩০ হাজার কৃষক। এরপরও আমাদের পরিশ্রমী ও ধর্য্যলীল কৃষকরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে তারা সে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। বন্যার পরে আমন ধানের চারা সংকট ছিল। কৃষকরা অন্যান্য উপজেলা থেকে চারা সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি আমরাও কৃষকদের প্রণোদান দিয়েছি। চারাগুলো দেরিতে আবাদ করলেও আশানুরূপ ফলন ফেছে কৃষকরা।
এছাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় বন্যায় নষ্ট হওয়া আউশধান থেকে গজানো চারা কৃষকরা তাদের জমিতে রোপন করেছিলেন। এটি আমরা ফলোআপে রেখেছিলাম কেমন ফলন হয় দেখার জন্য। এখন দেখা গেছে কৃষকরা মোটামোটি ভালো ফলন পেয়েছেন। যদিও এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে স্বীকৃত না। এ ক্ষেত্রে আমরা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করি। আউশ আমনের যে জাতগুলো আছে সে গুলো চাষের জন্য আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করি। তারপরও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ও গবাদি পশুর খাদ্য ‘খরের’ চাহিদা পূরণের জন্য এটি কৃষকরা চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া জমি পতিত না রেখে ধান চাষ করায় জমি আগাছামুক্ত রয়েছে যা পরবর্তী ফসল ফলাতে সহায়তা করবে।